Advertisement
০৫ মে ২০২৪

হেমন্তের স্ত্রীকে চাকরির আশ্বাস

এ দিন দুপুরে মৃতের মা রীতা রায়, বাবা আনন্দ রায় বলেন, ‘‘আমার ছেলে তো আর ফিরবে না। তবে তাঁর দেহ আনতে এত কেন দেরি হচ্ছে? এই ক’দিন ধরে অনেক বড় বড় লোক এসে বলেছেন, তাঁরা পাশে রয়েছেন।

শোক: রোল গ্রামের ছোয়ানি পাড়ার একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হেমন্ত। অন্য সদস্যরা বৃহস্পতিবার তাঁর জন্য মোমবাতি মিছিল করেন। সেই মিছিলেন সামনে মৃত শ্রমিকের ঠাকুমা আরতি বাগদি।

শোক: রোল গ্রামের ছোয়ানি পাড়ার একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হেমন্ত। অন্য সদস্যরা বৃহস্পতিবার তাঁর জন্য মোমবাতি মিছিল করেন। সেই মিছিলেন সামনে মৃত শ্রমিকের ঠাকুমা আরতি বাগদি।

শুভ্র মিত্র
ইন্দাস শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে চারটে দিন। কিন্তু কেরলে কাজ করতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মৃত হেমন্ত রায়ের দেহ বৃহস্পতিবারও বা়ড়িতে এসে পৌঁছল না। তবে দুই যুযুধান দু’দলের নেতারা পরিবারটিকে সমবেদনা জানাতে এসে ওই ঘটনাকে ঘিরে পরস্পরকে দুষে গেলেন।

বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারেরা গিয়ে মৃতের পরিজনদের ক্ষোভ উস্কে দিলেন। আর তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খান, বিধায়ক গুরুপদ মেটে গিয়ে মৃতের পরিবারকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুললেন।

কেরলের আলাপুঝা জেলার পুচাক্কেল থানার পানাভাল্লি গ্রামে ইন্দাসের রোল গ্রামের যুবক হেমন্ত এলাকার আরও অনেকের সঙ্গে কাজে গিয়েছিলেন। রবিবার রাতে সেখানে তাঁর গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার সকালে মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছয়। বিমানে দেহ আনা হচ্ছে শুনে ইতিমধ্যেই রোল থেকে লোকজন দমদমে পৌঁছে যান। কিন্তু দেহ কেরল থেকে পাঠানোই হয়নি। তাতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।

এ দিন দুপুরে মৃতের মা রীতা রায়, বাবা আনন্দ রায় বলেন, ‘‘আমার ছেলে তো আর ফিরবে না। তবে তাঁর দেহ আনতে এত কেন দেরি হচ্ছে? এই ক’দিন ধরে অনেক বড় বড় লোক এসে বলেছেন, তাঁরা পাশে রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ছেলের দেহ আনাতে পারছেন না কেন?’’ এ দিন রাত পর্যন্ত দেহ দমদম বিমানবন্দরে আসেনি। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘বিমানে দেহ আনতে গেলে প্রচুর নথি লাগে। সে কারণেই দেরি হচ্ছে।’’ তিনি জানান, কেরল থেকে খবর পেয়েছেন আজ, শুক্রবার সকালে দেহ নিয়ে প্লেন রওনা দেবে। আশাকরি দুপুরে ইন্দাসে দেহ আনা যাবে। তিনি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন একটি গাড়ি দমদম বিমানবন্দরে পাঠাচ্ছে। বিমান নামলেই সবরকম নিয়মকানুনের কাজ সেরে যাতে দ্রুত ওই দেহ আনা যায়, তাঁরা তা দেখবেন।’

হেমন্তর বাড়িতে বিজেপি নেতৃত্ব। ছবি: শুভ্র মিত্র

তবে বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) এই জেলাতেই রয়েছেন, তবু এই শ্রমিকের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াতে পারছেন না। আমরা অবিলম্বে পরিবারটিকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’

এ দিন রাতেই ইন্দাসের বিডিও গুরুপদ মেটে ও সাংসদ সৌমিত্র খান হেমন্তের বাড়িতে যান। ফেরার পথে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মৃত শ্রমিকের স্ত্রীকে চাকরি দিতে চান। তাঁর প্রতিনিধি হয়ে সেই কথা জানিয়ে এসেছি আমরা।’’ তিনি দাবি করেন, পরিবারটি তৃণমূল-সমর্থক। তাঁরা প্রথম দিন থেকে পরিবারটির পাশে রয়েছেন। বিধায়কের লোকজন অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দেহ আনতে গিয়েছেন। কেরল সরকারের অসহযোগিতার জন্য দেহ আসতে দেরি হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করছে।’’

এ দিকে, দেহ আনার জন্য যথেষ্ট খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকের পরিবার। মৃতের বাবা আনন্দ রায় বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে কয়েকজন দমদমে দেহ আনতে গিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বিমানে দেহ আনতে খরচ হচ্ছে। সে জন্য ইতিমধ্যে গ্রামের সবার কাছে ধার দেনা করে, গয়না বন্ধক রেখে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা তাঁদের কাছে পাঠিয়েছি।’’ দুই রাজনৈতিক দলের তরফেই এ দিন কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এ দিন হেমন্তের বাড়িতে আসেন অল ইন্ডিয়া মাইরোটি অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক সৈয়দ পহেলানজি।

হেমন্তের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয় বলে, দেহ এলে ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ প্রাথমিক তদন্তে কেরলের পুলিশ হেমন্ত আত্মঘাতী হয়েছেন বলে ইঙ্গিত দিলেও তা মানতে নারাজ পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, ওঁকে খুন করা হয়েছে। এ দিন ময়নাতদন্তের দাবি বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন হেমন্তের স্ত্রী বিষ্ণু রায়। একই দাবি জানিয়েছেন হেমন্তের বাড়িতে আসা বিজেপি নেতৃত্বেও।

এ দিন দুপুরে পাড়ার ‘নৃসিংহ স্মৃতি ক্লাব’ রোল গ্রামে পোস্টার ও মোমবাতি নিয়ে হেমন্তের স্মৃতিতে মৌনী মিছিল করে। তাঁরা দাবি তোলেন, হেমন্তকে খুন করা হয়েছে। আত্মহত্যার মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন তাঁরা। এসডিপিও বলেন, ‘‘দেহ এলে এখানে ময়নাতদন্ত করা হবে।’’ যদিও মৃত্যুর এত দিন পরে দেহে পচন ধরে থাকলে, ময়না-তদন্তে কতটা ঠিকঠাক রিপোর্ট পাওয়া যাবে, তা নিয়েও সংশয়ে অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Job assurance Late Hemanta Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE