Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শিল্প চেয়ে পাল্টা কমিটি

পুড়ল বন্ধ গ্রানাইট হাবের তাঁবু

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রামের কাজললতা পাহাড়ের একাংশে গ্রানাইট বের করার কাজ চলছিল। ওই কাজের বিরোধিতা করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’র কিছু লোক গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৭
Share: Save:

পাহাড় কেটে গ্রানাইট বের করার কাজ জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সপ্তাহ তিনেক আগে। এ বার ফের হাব চালুর দাবিতে পাল্টা কমিটি তৈরি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার গ্রানাইট হাবের কর্মীদের তাঁবুতে আগুন লাগিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। সব মিলিয়ে জটিল হয়ে উঠেছে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রামে গ্রানাইট হাব প্রকল্পের কাজ।

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রামের কাজললতা পাহাড়ের একাংশে গ্রানাইট বের করার কাজ চলছিল। ওই কাজের বিরোধিতা করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’র কিছু লোক গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। সেখানে দামি মেশিনপত্র পড়ে রয়েছে। তাই কয়েক জন কর্মী সেখানে তাঁবুতে রয়ে গিয়েছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় তারই একটি তাঁবুতে দুষ্কৃতীরা আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কর্মীরা জল ঢেলে আগুন নেভান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসডিও (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারা তাঁবুতে আগুন দিয়েছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। তবে আগুনে কেউ আহত হননি। বড়সড় কোনও ক্ষতিও হয়নি।’’

বস্তুত, পরিবেশ রক্ষার দাবিতে গ্রানাইট হাবের বিরোধিতায় কয়েক মাস ধরে আন্দোলনে নেমেছে ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’। তাদের চাপে ফেলতে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দাবি তুলে শনিবার সভা করে পাল্টা ‘শিল্প বাঁচাও ও উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করে আসরে নামে তৃণমূল। এই কমিটির মাথায় শাসকদলের স্থানীয় নেতারা থাকলেও তা তৃণমূল প্রভাবিত বলতে রাজি নন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, শিল্প বাঁচাও কমিটির সঙ্গে অন্যান্য দলের নিচুতলার কর্মী-সহ অরাজনৈতিক লোকজন সামিল হয়েছেন। কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূলের বেড়ো এলাকার নেতা শেখ মহম্মদ হুসাইনের দাবি, ‘‘বেড়ো পঞ্চায়েত এলাকার যে সব বাসিন্দা গ্রানাইট হাব প্রকল্পের রূপায়ণ চাইছেন, তাঁরা এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে ‘শিল্প বাঁচাও কমিটি’তে সামিল হয়েছেন। একে কোনও দলের প্রভাবিত বলা ঠিক নয়।”

শনিবার শিল্পের পক্ষে ওই কমিটি তৈরি হওয়ার পরের দিন রবিবার দুপুরে ফের ওই এলাকায় মিছিল করে পাহাড় বাঁচাও কমিটি। এলাকার পরিবেশ ও পাহাড় রক্ষার দাবিতে ফের সরব হয়ে গ্রানাইট হাবের জন্য পাহাড় কাটা চলবে না বলে এ দিন মিছিল থেকে দাবি উঠেছে।

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো ও খাজুরা পঞ্চায়েত এলাকায় সুসংহত গ্রানাইট হাব তৈরির কাজ শুরু করেছে রাজ্যের অধিগৃহীত সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড (ডব্লউবিএমডিটিসি)। পুরুলিয়াতে প্রশাসনিক সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রঘুনাথপুরে ওই গ্রানাইট হাব তৈরির ঘোষণা করেছিলেন। তারপরেই ওই প্রকল্পে গতি আসে।

ডব্লউবিএমডিটিসি-র লিজভুক্ত খাস জমিতে থাকা পাহাড়ের একাংশ কেটে গ্রানাইট হাব তৈরির কাজ শুরু করে সংস্থাটি। কিন্তু গোড়া থেকেই বিপত্তি। পাহাড় কাটায় আপত্তি তুলে আন্দোলন শুরু হয় এলাকায়। খাজুরা পঞ্চায়েত এলাকায় কুইলাতোড়া গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশ পাহাড়ে তাদের ধর্মীয় স্থান আছে দাবি করে কাজে বাধা দেয়। সেখানে পাহাড় কাটা বন্ধ রয়েছে।

পরে পাশের বেড়ো পঞ্চায়েতে পাহাড় কাটা শুরু হলে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে দাবি তুলে আন্দোলনের পথে নেমেছে পাহাড় বাঁচাও কমিটি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পাহাড় বাঁচাও কমিটির সক্রিয় বিরোধিতায় সেখানেও পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন জট কাটানোর ব্যাপারে আশাবাদী হলেও কাজ শুরু করতে পারেনি।

এই পরিস্থিতিতে এ বার আসরে নেমেছেন শাসদকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। শনিবার বেড়ো গ্রামের হাইস্কুলের মাঠে সভা করে ‘শিল্প বাঁচাও ও উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বেড়ো-সহ আশপাশের সাত-আটটি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। সভার পরে শিল্প বাঁচাও ও উন্নয়ন কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটির মাথায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা থাকলেও উল্লেখযোগ্য ভাবে বিরোধী দলের কিছু নেতা-কর্মীও ওই কমিটিতে রয়েছেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাব চালু দাবিতে তারা এলাকায় নিয়মিত সভা, মিছিল করে জনমত তৈরির পাশাপাশি ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’-কে চাপে ফেলার কৌশল নেবে। কমিটির সম্পাদক বলেন, ‘‘সংস্থাটি জানিয়ে দিয়েছে, তারা পাহাড় কাটবে না। পরিবর্তে পাহাড়ের একাংশে মাটির নিচ থেকে গ্রানাইট বের করবে। তবু পাহাড় রক্ষার দাবিতে অহেতুক সরকারি প্রকল্পের বিরোধিতা করা হচ্ছে।’’ তবে পাহাড় বাঁচাও কমিটির মতোই শিল্প বাঁচাও কমিটিও দাবি তুলেছে, ঐতিহ্যবাহী চণ্ডী মন্দিরের পাশের পাহাড়ের ক্ষতি করা চলবে না।

রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি রবিবার দাবি করেন, ‘‘এলাকার ঐতিহ্য বাঁচিয়েই গ্রানাইট হাব হচ্ছে। এই সরকারি প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক ছবিটাই বদলে দেবে। অথচ কিছু লোকজন অহেতুক বিরোধিতা করে আখেরে এলাকার উন্নয়ন বন্ধ করে দিতে চাইছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE