Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আক্ষেপ মৃতের মাসির

ওরা থাকলে হয়তো বেঁচে যেত ছেলেটা

মৃতের মেসোমশায় বলেন, “এতবড় হাসপাতালে রোগী বইবার জন্য কর্মী নেই! নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের ওয়ার্ডে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল।’’ ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন মমতা ধীবর ও উত্তম ধীবর। উত্তমবাবু বলেন, “ভাল হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি ভেবে এসেছিলাম। আর এই পরিনতি হল!”

শোক: ভেঙে পড়েছেন অশোকের মা মমতা ধীবর। নিজস্ব চিত্র

শোক: ভেঙে পড়েছেন অশোকের মা মমতা ধীবর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

স্ট্রেচারে শুয়ে বোনপো। নাকে অক্সিজেনের মাক্স। হঠাৎ হাত থেকে সিলিন্ডারটা পড়ে যেতেই সঙ্গে থাকা কাচের বোতল না ভেঙে গেল। অক্সিজেন বন্ধ হয়ে গিয়ে ছটফট করতে করতে বছর বারোর ছেলেটা ছটফট করতে করতে মারা গেল। সেই ঘটনাটা যেন কিছুতে মন থেকে মুছতে পারছেন না তুলসী ধীবর। শনিবার দুপুরে কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলছিলেন, ‘‘কোথায় ছিল স্ট্রেচার বয়ে নিয়ে যাওয়ার লোকগুলো (চতুর্থ শ্রেণির কর্মী)? ওরা যদি স্ট্রেচার বয়ে নিয়ে যেত তাহলে দুর্ঘটনা হতো না। ছেলেটাও অকালে মারা যেত না।’’

শ্বাসকষ্ট-সহ নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে শুক্রবার পুরুলিয়ার মানবাজারের জিতুজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা অশোক ধীবরকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শিশু ওয়ার্ডে ছিল। অশোকের মেসোমশায় নীলকমল ধীবর জানান, ‘‘ডাক্তার অশোককে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। স্ট্রেচারে রোগী নিয়ে যাওয়ার কথা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের। কিন্তু এ দিন বেলায় শিশু ওয়ার্ডে এক জনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে পাইনি। বাধ্য হয়ে আমরাই নিয়ে যাই।’’

তিনি জানান, সে সময়ে অশোকের অক্সিজেন চলছিল। ফেরার সময় অশোকের মামা রমেশ ধীবর ও মাসি তুলসী ধীবর স্ট্রেচার বয়ে আনছিলেন। তুলসীদেবীর হাতে ছিল অক্সিজেনের ছোট সিলিন্ডার। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ হাত ফস্কে অক্সিজেন সিলিন্ডার পড়ে যেতেই সঙ্গে থাকা কাচের বোতলটা ভেঙে গেল। ছেলেটা তারপরেই কেমন ছটফট করতে শুরু করে।’’ তাঁদের চিৎকার শুনে হাসপাতালের কর্মীরা এসে ওয়ার্ডে নিয়ে যান। অক্সিজেনও চালানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্ট্রেচার বয়ে নিয়ে গেলে, এই পরিণতি হতো না বলে দাবি করে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান মৃতের আত্মীয়েরা।

হাসপাতালের সুপার শুভেন্দুবিকাশ সাহা ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না। পরে তিনি এসে মৃতের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। সুপার বলেন, ‘‘ছেলেটি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। অবস্থা ভাল ছিল না। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্গে থাকা কাঁচের হিউমিডিফায়ার বোতল নীচে পড়ে ভেঙে যায়। তবে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন চালু করে দেওয়া হয়েছিল।’’

মৃতের মেসোমশায় বলেন, “এতবড় হাসপাতালে রোগী বইবার জন্য কর্মী নেই! নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের ওয়ার্ডে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল।’’ ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন মমতা ধীবর ও উত্তম ধীবর। উত্তমবাবু বলেন, “ভাল হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি ভেবে এসেছিলাম। আর এই পরিনতি হল!”

হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, রোগীকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মীদের অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে থাকাটা নিয়ম। এক্ষেত্রে কেন ছিল না? ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সদের কেউ কেউ বলছেন, সেই সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা ওয়ার্ডে ছিলেন না। সুপার বলেন, “কেউ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, রোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়না-তদন্তের পরে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “অশোকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের কোনও কর্মীর গাফিলতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছি। চতূর্থশ্রেণির কর্মী না থাকার জন্য রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে।’’

অশোকের পরিবারের তরফে হাসপাতাল সুপারের পাশাপাশি বাঁকুড়া সদর থানাতেও একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। সুপারের দাবি, “মৃতের পরিবারের লোকজনের হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই। হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Negligence Hospital Stretcher Doctors Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE