Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্য শিল্প, নজর রাস্তা সংস্কারে

এ রাজ্য যে শিল্পের পক্ষে উপযুক্ত, সদ্য শেষ হওয়া বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পপতিদের তা জানিয়েছেন।

জোরকদমে: রঘুনাথপুর-সাঁওতালডিহি সড়কের পাশে রাস্তা তৈরির কাজের প্ল্যান্ট। নিজস্ব চিত্র

জোরকদমে: রঘুনাথপুর-সাঁওতালডিহি সড়কের পাশে রাস্তা তৈরির কাজের প্ল্যান্ট। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

শিল্প টানতে রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি আমূল সংস্কারে নামল রাজ্য সরকার। খরচ ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। ওই টাকায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার রাস্তা আমূল সংস্কার করে নতুন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই শিল্পাঞ্চলের মূল রাস্তা পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ককে চার লেন করারও পরিকল্পনা আছে রাজ্যের।

এ রাজ্য যে শিল্পের পক্ষে উপযুক্ত, সদ্য শেষ হওয়া বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পপতিদের তা জানিয়েছেন। রাজ্যের শিল্প-মানচিত্রের উপরের সারিতে তুলে আনার চেষ্টা চলছে রঘুনাথপুরকে। ইতিমধ্যেই এই শিল্পাঞ্চল এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বেশ কয়েকটি বড়মাপের সিমেন্ট কারখানা, স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হতে চলেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর। ডানকুনি থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ইন্ডস্ট্রিয়াল করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত গত মাসেই পুরুলিয়ায় এসে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই শিল্পায়নের অন্যতম শর্ত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে রাস্তাঘাট তৈরির কাজে নেমেছে পূর্ত দফতর।

বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করে। হাজারো বিঘ্ন কাটিয়ে গত বছর থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাদের দেখে অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাও এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই সিমেন্ট কারখানা গড়তে প্রাথমিক বিনিয়োগ করেছে রিলায়েন্স সিমেন্ট। পাশের ব্লক নিতুড়িয়াতে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড়মাপের আরও একটি সিমেন্ট কারখানা গড়ছে শ্রী সিমেন্ট। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রানাইট হাব তৈরির কাজ শুরু করেছে রাজ্যের অধীনস্থ সংস্থা মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড।

রঘুনাথপুরকে শিল্প মানচিত্রের উপরের সারিতে তুলে আনার উদ্যোগ রাজ্য সরকারের শীর্ষমহল থেকে শুরু হওয়ায়, এই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগের আমূল উন্নয়নে বিশেষ নজর দিচ্ছে পূর্ত দফতর।

ইতিমধ্যেই রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা রাস্তা নতুন ভাবে তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ বার মহকুমা এলাকার পাঁচটি রাস্তার আমূল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে রঘুনাথপুর-সাঁতুড়ি রাস্তার কাজ। কাজ চলছে রঘুনাথপুর-সাঁওতালডিহি রাস্তারও। প্রায় সাড়ে ২৮ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকায় কাশীপুর থেকে ঘাটরাঙামাটি সাড়ে ২০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে সম্প্রতি কাজ শুরু হয়েছে।

পাড়া ব্লকে আরও দু’টি নতুন রাস্তা তৈরির কাজেও হাত দিয়েছে পূর্ত দফতর। উদয়পুর থেকে পাহাড়িগোড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ওই ব্লকেরই ঝাপড়া মোড় থেকে পাড়া হয়ে দুবড়া পর্যন্ত আরও একটি রাস্তার প্রস্তাব রাজ্য পূর্ত দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই ওই রাস্তা তৈরির প্রশাসনিক অনুমোদন মিলবে বলে আশাবাদী জেলা প্রশাসন।

এই রাস্তাগুলি তৈরি হলে রঘুনাথপুরের সঙ্গে সাঁওতালডিহির যোগাযোগ যেমন আরও মসৃণ হবে, তেমনই কাশীপুর ও সাঁতুড়ি হয়ে বাঁকুড়ার যোগাযোগেও বাড়তি সুবিধা পাবেন এলাকাবাসী। পূর্ত দফতরের রঘুনাথপুরের সহকারী বাস্তুকার অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা রাস্তা নির্মাণ শেষ হওয়ার পরেই রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় আরও পাঁচটি রাস্তার আমূল সংস্কার করে নতুন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তাগুলি তৈরি হলে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল বদল আসবে।”

পূর্ত দফতর পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ককে চার লেন করার কথাও ভাবছে। এই রাস্তা আসানসোল ও পুরুলিয়ার দু’টি জাতীয় সড়কের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে। সূত্রের খবর, গত মাসে মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে ওই সড়ককে চার লেন করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেন।

রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির দাবি, ‘‘রঘুনাথপুরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরের মধ্যে এনে মুখ্যমন্ত্রী এই এলাকার শিল্পের চেহারা পাল্টে দিতে বদ্ধপরিকর। তারই সাথে সঙ্গতি রেখে সড়ক উন্নয়ন করা চলছে।” উচ্ছ্বসিত শিল্পদ্যোগীরাও। শ্রী সিমেন্টের পুরুলিয়া প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার সুমনকল্যাণ রায়ের মতে, ‘‘পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক চার লেন হলে আসানসোল ও পুরুলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আরও মসৃণ হবে রঘুনাথপুরের। ফলে বিনিয়োগকারীরা শিল্পস্থাপনে আরও উৎসাহীত হবেন বলেই মনে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE