সামিল: প্ল্যাকার্ড হাতে খুদে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
স্যার জেলে। তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে তাই বড়দের সঙ্গে জেলা সদরে এসে স্লোগান দিল পড়ুয়ারাও। প্ল্যাকার্ড আঁকড়ে বসে পড়ল প্রতিবাদ মঞ্চের সামনে। জয়পুরের বাঁধডি প্রাথমিক স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা নিজেদের স্কুল শিক্ষক শুভজিৎ মাহাতোকে অবিলম্বে ছাড়তে হবে বলে কচি গলায় যখন দাবি তুলল, হাঁ হয়ে গেলেন অনেকেই। শুক্রবার এই ঘটনার সাক্ষী থাকল পুরুলিয়া।
এই শহর অনেক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ দেখেছে। কিন্তু এক জন স্কুল শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে তাঁর স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এ ভাবে রাজপথে হাঁটতে কেউ দেখেছেন, কি না স্মরণ করতে পারলেন না প্রবীণরাও।
শুভজিৎ বাঁধডি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন এক বছরও হয়নি। কিন্তু এই ক’মাসে লোকজন তাঁকে যতটুকু চিনেছেন, তাতে গাঁজা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতারি অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাই এ দিন শুভজিতের মুক্তির দাবিতে পুরুলিয়া চলোর ডাক শুনে ছেলেমেয়ের হাত ধরে অনেক অভিভাবকই সমাবেশে যাওয়ার গাড়িতে চড়ে বসেন। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুলে না গেলে পড়ার ক্ষতি হবে ঠিকই। কিন্তু মিথ্যা মামলায় ধৃত শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে আসাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
মঞ্চের সামনে বসা তৃতীয় শ্রেণির পায়েল মাহাতো, শেফালি মাহাতো, কেশরী মাহাতো, অম্বিকা মাহাতো, অমিত মাহাতোরা তাই বারবার স্লোগান দিয়েছে— স্যারকে ছাড়তে হবে। ছাড়তে হবে। জেল পর্যন্ত শুভজিতের কানে এই কচি গলার ডাক না পৌঁছলেও মঞ্চে থাকা তাঁর মা সব দেখে আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়ছিলেন বারবার। কোনও রকমে নিজেকে সামলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ধরার জন্য খুবই কষ্ট পাচ্ছি। প্রথমে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। এখন এত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেখে, মনে বল পাচ্ছি। সবাই আমার ছেলেটাকে কেমন আপন করে নিয়েছেন। ওঁরাই আমার ভরসা’’
বাঁধড়ি স্কুলের টিচার ইনচার্জ কাঁকন সরকার বলেন, ‘‘আমি স্কুলে ছিলাম। কিছু পড়ুয়া এ দিন আসেনি। মিড-ডে মিলের রাঁধুনিরাও পুরুলিয়ায় প্রতিবাদ সভায় যাবেন বলে বৃহস্পতিবার জানান। তাই এ দিন স্কুলে মিড-ডে মিল হয়নি।’’
স্কুল থেকে শুভজিতের বাড়ি বেশি দূরে নয়। পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাষমোড় থেকে তাই প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে এলাকার বধূ চুকান মাহাতো, বেবি পরামানিক বলেন, ‘‘এলাকার একটা নির্দোষ ছেলেকে পুলিশ ধরে রেখেছে। আমরা ঘরে নিশ্চিন্তে বসে থাকি কী করে?’’
বড়গ্রাম থেকে যেমন বৃদ্ধ ঝরি মাহাতো এসেছিলেন, তেমনই নাতিকে কোলে নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন পুঞ্চার মুলুকচাঁদ মাহাতো। ঝাড়খণ্ডের ফুসড়ার বাসিন্দা সাবিত্রী মাহাতো থেকে চাষমোড় এলাকার গৃহবধূ গীতারাণি মাহাতো পুরুলিয়ায় এসে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁদের ইচ্ছে এখন একটাই— কোনও নিরপরাধীকে যেন জেল না খাটতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy