উপাচার: মণ্ডপের পথে ঢাকিরা। রবিবার আলিগ্রামের দাসপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
পুজো-পার্বণের সঙ্গে বাজারদরের নিবিঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তবে দুর্গা, কালীপুজোয় আমজনতা সে ভাবে বাজারদর নিয়ে আলোচনা করেন না। হাটবাজারে তা চলে লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজোয়।
বাজারদর নাগালে থাকলে খুশি জনতা। মুখে হাসি ফোটে সবার। দর চড়লে চোখ কপালে। সরস্বতী পুজোর আগের দিন রবিবার জেলায় বাজারে বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের চোখ সত্যিই কপালে উঠল।
জিএসটির কোপ
পুজোর কথা উঠলে প্রথমেই আসে প্রতিমা। এ বার ছাঁচ থেকে বড় সরস্বতী— মূর্তির দাম একলাফে বেড়েছে অনেকটা। মূর্তি কিনতে গিয়ে তাই হোঁচট খাচ্ছেন সকলেই। ৬ ইঞ্চির ছাঁচের মূর্তি গত বার ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেটাই এ বার কম করে ৪০ টাকা। এক-দেড়-দু’ফুটের বড় ছাঁচের মূর্তি বিকোচ্ছে ২০০-৪৫০ টাকায়। ‘‘কী করবো বলুন, জিএসটি-র কোপে রঙ, প্রতিমার কাপড়, অলঙ্কার, চুলের মতো সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে দেড় গুণ। আমাদের দাম না বাড়িয়ে উপায় কী’’— বলছিলেন, দুবরাজপুরের মৃৎশিল্পী সুকুমার সূত্রধর। সিউড়ি সাজিনা গ্রামে ছাঁচে প্রচুর সরস্বতী মূর্তি গড়েন রণজিৎ পাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পাইকারি ভাবে মূর্তি বিক্রি করি। সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বার মূর্তির দামও বেশি হয়েছে।’’ মহম্মদবাজারের দেউচা গ্রামের একটি সর্বজনীন সরস্বতী পুজোর এক উদ্যোক্তার বক্তব্য, ‘‘গত বছর ক্লাবের ঠাকুর এনেছিলাম ২ হাজার টাকায়। এ বার ওই একই মাপের মূর্তির দাম নিয়েছে তিন হাজার।’’ সিউড়িতে ছাঁচের প্রতিমা কিনতে বেরিয়ে একই অভিজ্ঞতা গৃহবধূ সুমনা চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিমার দাম এ বার সত্যিই বেশি। কিন্তু ওটা তো নিতেই হবে।’’
চড়া আনাজ দর
পুজোয় ফল চাইই। সরস্বতী পুজোয় ভোগের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আনাজ কিনতে গেলেই ছ্যাঁকা লাগার জোগাড়। বাজার ফেরত আমজনতা বলছেন— আনাজ আর ফলের দাম বড় বেশি। দু’দিন আগেও বেগুন ছিল ২৫-৩০ টাকা কিলোগ্রাম। বেগুনের দর রবিবার ছুঁয়েছে ৫০-৬০ টাকা। শীত শেষের মুখে বড় ফুলকপির দাম ২৫-৩০ টাকা, সিম ৩০ টাকায় বিকোচ্ছে। প্রতি কিলোগ্রাম পটল ৯০ টাকা, রাঙাআলু ১০০ টাকা। ডাব ২০-৩০, নারকেল ৩০, আপেল ৮০, কমলালেবু ৫০-৬০, আঙুর ১২০, সরবতী আলু ২০-৪০, নগরি কুল ৫০-৬০, বেদানা ৮০-১০০ টাকা কিলোদরে বিক্রি হয়েছে। একটি বাতাপি লেবুর দাম ছুঁয়েছে ১৫-২০ টাকা। এক ডজন কলা মিলেছে ৩০ টাকায়। সিউড়ি ও দুবরাজপুর বাজারে বিক্রেতাদের বক্তব্য, ফলের দাম খুব একটা বাড়েনি। তবে কয়েকটি আনাজের দাম ছিল বেশি। কিন্তু কুমড়ো, বীট, গাজর, ক্যাপসিকাম, মটরশুঁটি, মুলো, বিন সবই সাধারণের নাগালে ছিল। আনাজের দাম বৃদ্ধির জন্য সরস্বতী পুজোর পরদিন বীরভূম জেলায় শীতলাষষ্ঠীর পুজোকেই (সিজানো) কারণ হিসেবে দেখছেন বিক্রেতারা। তাঁদের বক্তব্য, সে দিন গৃহস্থের বাড়িতে উনুন জ্বলে না। পান্তাভাত খান সকলে। রান্না হয় সরস্বতী পুজোর দিন। ওই পুজোয় বেগুন, সিমের মতো আনাজ লাগে। সে জন্যই দাম বেড়েছে।
নেই পলাশ, মুকুল
আমের মুকুল, পলাশ ফুল ছাড়া সরস্বতী পুজো যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেও এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ আমগাছেই মুকুলের দেখা মেলেনি। একেবারেই দেখা মেলেনি পলাশের। উদ্যান বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘পলাশ মূলত বসন্তের ফুল। দোলের দিনপনেরো আগে পলাশ ফুল খুব ভাল ফোটে। কিন্তু এ বার সরস্বতী পুজো খাতায়-কলমে বসন্তে হলেও প্রায় দিন পনেরো আগে এগিয়ে এসেছে। শীত এখনও রয়েছে। তাই ফোটেনি পলাশ।” দুবরাজপুরের ফুল ব্যবসায়ী গৌতম মালাকার, সিউড়ির কার্তিক ধীবর বলেন— ‘‘প্রতি বার কলকাতা থেকে পলাশ ফুল নিয়ে আসি। চাহিদা থাকে। এ বার একটাও পলাশ পাই নি। বীরভূমে পলাশের অভাব নেই। কিন্তু এ বার কুঁড়ি পর্যন্ত ধরেনি গাছে।’’
পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য— ‘আম, জামের মুকুল, দুর্বা, বেলপাতা মিলিয়ে ছোট্ট একটা প্যাকেট দশকর্মার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই। সেখানে আমের মুকুল রয়েছে মাত্র এক টুকরো। পলাশ খুঁজতে আতস কাঁচ লাগবে।’ উদ্যোক্তাদের মনখারাপের মধ্যেই পুরোহিতদের একাংশ বলছেন, ‘‘পলাশ না মিললে কোনও একটা লালফুলেই হবে পুজো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy