Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গরমে ভরসা বর্ষার সঞ্চয়

পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে টামনায় এই আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে ২০০৪ সালে। প্রধান শিক্ষিকা মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘রুখা জেলা পুরুলিয়ার জল সমস্যার কথা সকলেই জানেন। গ্রীষ্মে সর্বত্রই জলের তীব্র সঙ্কট হয়। সে কথা মাথায় রেখে এখানে গোড়া থেকেই বৃষ্টির জল ধরে রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’

নিশ্চিন্ত: পুরুলিয়া শহর লাগোয়া টামনা বিদ্যাসাগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিশ্চিন্ত: পুরুলিয়া শহর লাগোয়া টামনা বিদ্যাসাগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

তিল তিল সঞ্চয়েই ভরে ওঠে ভাণ্ডার। এই প্রবাদকে ভরসা করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে দুর্ভাবনা থেকে মুক্তি পেয়েছে পুরুলিয়া ১ ব্লকের টামনা বিদ্যাসাগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়। জলাভাবের জেলা পুরুলিয়ার এই স্কুলের মেয়েরা গত ১২ বছর ধরে জমিয়ে রাখা জলেই নিত্যদিনের কাজ সারছে। তাতেই মোকাবিলা করা যাচ্ছে জল-সঙ্কটের।

পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে টামনায় এই আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে ২০০৪ সালে। প্রধান শিক্ষিকা মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘রুখা জেলা পুরুলিয়ার জল সমস্যার কথা সকলেই জানেন। গ্রীষ্মে সর্বত্রই জলের তীব্র সঙ্কট হয়। সে কথা মাথায় রেখে এখানে গোড়া থেকেই বৃষ্টির জল ধরে রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, ছাত্রীদের হস্টেল, স্কুল চত্বরে থাকা অতিথি আবাস ও স্কুলের মূল ভবনের ছাদের জল তাঁরা পাইপে বেরিয়ে যেতে দেন না। ওই জল কুয়ো ও বড় বড় ট্যাঙ্কে ভরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘হস্টেলের ৩২ হাজার বর্গ ফুট ছাদ, স্কুল ভবনের ১২ হাজার বর্গ ফুট ছাদ ও অতিথি আবাসের সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গ ফুট ছাদের বৃষ্টির জল পুরোটাই আমরা কুয়োর মধ্যে ঢুকিয়ে দিই। কিছু জল ট্যাঙ্কেও ভরা থাকে। অতিরিক্ত জল কুয়োর পাশে মাটির নীচে পাঠিয়ে দিই। এক ফোঁটা জলও আমরা বাইরে বয়ে যেতে দিই না।’’ খড়্গপুর আইআইটি-র কারিগরি সহায়তায় তাঁদের এই বৃষ্টির জল স‌ংরক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি হয়।

ভরা গ্রীষ্মে তীব্র জলাভাবের সময়ে কতটা সহায়ক হয় এই প্রকল্প? স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁদের হস্টেলে সাড়ে চারশো ছাত্রী রয়েছে। বছরভর যা জল জমে তা দিয়ে মাস দেড়েক হস্টেল ও স্কুলের দৈনন্দিন কাজ হয়ে যায়। গত বর্ষায় ভালই বৃষ্টিপাত হওয়ায়, এ বারও তাঁরা অনেকটাই নিঃসংশয়ে রয়েছেন। ওই জলেরই তারা থালা-বাসন ধোয়া থেকে হাতমুখ ধোয়া, স্নান প্রভৃতি সারে। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘শুধু পান করা ছাড়া এই জল সব কাজেই ব্যবহার করা হয়। জমানো জল যে আমাদের কতটা কাজে লাগে, তা গ্রীষ্মের সময়েই আমরা উপলব্ধি করি। ছাত্রীরাও সে কথা জানে।’’

কী বলছে ছাত্রীরা? দশম শ্রেণির ছাত্রী বলরামপুরের উরমা গ্রামের বাসিন্দা অঙ্কিতা কুমারের কথায়, ‘‘আমার বাড়িতেও কুয়ো রয়েছে। গ্রীষ্মে দেখি বাড়ির কুয়োর জলের স্তর কতটা নীচে নেমে যায়। অথচ এত ছাত্রী এখানে জল ব্যবহার করে। কিন্তু কুয়োর জলের স্তর ততটা নামে না। কারণ জল সংরক্ষণই করা হয়।’’ একই কথা জানিয়েছে আড়শার বাসিন্দা ঝর্না কুমার। তার কথায়, ‘‘বৃষ্টির জল তো বয়ে চলে যায়। কিন্তু এই জল ধরে রাখলে প্রয়োজনে তা কতটা কাজে লাগে, তা এখানে আমরা দেখছি। চারপাশে যখন জলের জন্য হাহাকার ওঠে, তখনও আমরা নিশ্চিন্তে এখানে জল ব্যবহার করি।’’ তাই স্কুল থেকেই জল ধরে রাখার শিক্ষাও তারা পেয়েছে।

স্কুলের ছাত্রীরা বলে, ‘‘ভবিষ্যতে কে কী করব জানি না, তবে যদি সুযোগ থাকে, বৃষ্টির জল ধরে রাখায় গুরুত্ব দেব।’’

স্কুলের বৃষ্টির জল ধরে রাখার এই প্রকল্পে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানকারই এক শিক্ষিকা নিজের বাড়িতেও বৃষ্টির জল ধরে রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন। নমিতা দাশগুপ্ত নামে সেই শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে ছাদে যে জল পড়ে তা বয়ে চলে যেত। তা ধরে রেখে বেশ খানিকটা উপকার পাচ্ছি। অন্যদেরও সংরক্ষণ করতে বলছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Girl School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE