Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়াদের হাজিরা কমছে কেন, বিতর্ক

শিক্ষা দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এখন টিউশানি পড়ার প্রবণতা ভীষণ ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টিউশনির পথে পড়ুয়ারা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

টিউশনির পথে পড়ুয়ারা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share: Save:

পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে একের পর এক প্রকল্প চালু করেছে সরকার। কিন্তু, স্কুলগুলিতে উদ্বেগজনক হারে গরহাজিরা বাড়ছে। সম্প্রতি জেলার একটি স্কুলেরই সমীক্ষাতে ধরা পড়েছে ওই তথ্য। তাই দুঃশ্চিন্তায় জেলা শিক্ষা দফতর।

শিক্ষা দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এখন টিউশানি পড়ার প্রবণতা ভীষণ ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল কামাই করে ছাত্রছাত্রীরা টিউশানি কিংবা কোচিং সেন্টারগুলিতে ভিড় জমাচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, এর ফলে স্কুল এখন পরীক্ষা দেওয়া এবং শংসাপত্র নেওয়ার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমোদপুরের জয়দুর্গা হাইস্কুলের সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছে ওই তথ্য। ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০৫০। দৈনিক গড় হাজিরা ৪৫০ জন। স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, গরহাজিরা উত্তরোত্তোর বাড়ছে। বিশেষত নবম শ্রেণি থেকেই স্কুলে না আসার প্রবণতা বেশি। স্কুলের সমীক্ষা রিপোর্ট থেকেই জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে ওই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১০১ জন। জানুয়ারি থেকে মার্চ, এপ্রিল থেকে জুন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উপস্থিতির গড় হার ছিল যথাক্রমে ৯০, ৭০, ৭০, ৭৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১১৬ জন, গড় হাজিরা যথাক্রমে ৮৫, ৮০, ৭৫ এবং ৭৫ শতাংশ।

কিন্তু, নবম শ্রেণি থেকেই উপস্থিতির হারে ধ্বস নেমেছে। সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৫ সালে নবম শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৩৪ জন। প্রতি তিন মাস অন্তর গড় হাজিরা ছিল ৭০, ৫৫, ৪৫ এবং ৪০ শতাংশ। ২০১৬ সালে পড়ুয়ার ছিল ১৭৪ জন, গড় উপস্থিতির হার ৬৫, ৫০, ৫০, ৪৫ শতাংশ। দশম শ্রেণিতে ২০১৫ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৭৪। উপস্থিতির হার ৭৮, ৪২, ৩৩ এবং ১০ শতাংশ। ২০১৬ সালে ৮৭ জন হাজিরা ছিল ৭৮, ৫৫, ৩৩ এবং ১০ শতাংশ।

২০১৫ সালে একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৯১ জন। হাজিরার পরিমাণ ৬২, ৪৫ এবং ২৫ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৫০ জন। সেখানে হাজিরার পরিমাণ ৭০, ৫০ এবং ৩০ শতাংশ। (একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয় জুলাই মাস থেকে) দ্বাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৮৬ জন, হাজিরার পরিমাণ ছিল ৫০, ৪০ এবং ৩০ শতাংশ। ২০১৬ সালে একাদশ
শ্রেণির কলাবিভাগে ১৬৫ জন পড়ুয়ার গড় উপস্থিতি প্রথম ৩ মাসে ছিল ৬৫ শতাংশ, পরের মাসগুলিতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগের ৫২ জন পড়ুয়ার মধ্যে প্রথম তিন মাসে উপস্থিতি ছিল ৬৫ শতাংশ। পরের মাসগুলিতে উপস্থিতির হার কমে দাঁড়ায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে। ওই সালেই দ্বাদশ শ্রেণির ৫২ জন পড়ুয়ার গড় উপস্থিতি ছিল ৬০ থেকে ২০ শতাংশ।

স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস, সাইকেল বা অন্য অনুদান বিলির দিনগুলিতে স্কুলে হাজিরার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ শতাংশ। পড়ুয়াদের গড় হাজিরা রুখতে ওই স্কুলও উদ্যোগী হয়। কিন্তু, তাতেও লাভ হয়নি। স্কুলের পক্ষ থেকে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর হাতে একটি করে ছাপানো ফর্ম ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতে অন্য আরও বিষয়ের সঙ্গে একটি জায়গায় পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের স্কুল বিমুখতা সম্পর্কে মন্তব্য লিখে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, বেশির ক্ষেত্রেই পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। কেউ পাশ কাটানো মন্তব্য করছেন। প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুলে গরহাজিরা রুখতে আমরা পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের মত জানতে চেয়েছিলাম। এই ভেবে, আমাদের কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা সংশোধন করে নেব। সেখানেও তেমন সাড়া মেলেনি।’’

পড়ুয়া বা অভিভাবকেরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অধীর দাস মনে করেন, ‘‘এই অবক্ষয়ের জন্য শিক্ষকেরাই বেশি দায়ী। এক শ্রেণির শিক্ষক স্কুলে আসেন স্রেফ চাকরি করতে। মন দিয়ে পড়ান না। ওই শিক্ষকরাই আবার নিজের স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢালাও টিউশানির ব্যবসা করেন। কিছু শিক্ষক শাসকদলে নাম লিখিয়ে মিটিং-মিছিল করে বেড়ান। আবার বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের অভাবে দিনের পর দিন ক্লাসই হয় না।।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক মনে করেন, ‘‘অভিভাবকদের মধ্যে টিউশনির প্রবণতা রয়েছে এটা ঠিক। তবে স্কুলে পড়াশোনা হয় না, এটা ঠিক নয়। কেন এমনটা হচ্ছে দেখব। শিক্ষক-পদে শূন্যপদ পূরণেরও চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

attendance Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE