Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

অম্বিকেশ মহাপাত্র যে ছবিটা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন, সেই ‘দুষ্টু লোক গায়েব’ ব্যঙ্গচিত্রটি আসলে কার মাথা থেকে বেরিয়েছিল? শুধু তো ওই রঙ্গই নয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এমন রঙ্গ-ব্যঙ্গ-কার্টুন মোটেই বিরল নয়। বরং নিয়ম করে নেতানেত্রীদের নিয়ে ফেসবুকের ওয়ালে খিল্লি করাটাই চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছে। মমতা থেকে মোদী নির্বিচারে জবাই করাটাই সেখানে দস্তুর। সে সব কারা আঁকে আর কারা শেয়ার করে, সেই প্রশ্নটাই অবান্তর।

ছবিটি ফেসবুকের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

ছবিটি ফেসবুকের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৪
Share: Save:

ভোটে মস্করা
অক্ষয় কার্টুন

অম্বিকেশ মহাপাত্র যে ছবিটা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন, সেই ‘দুষ্টু লোক গায়েব’ ব্যঙ্গচিত্রটি আসলে কার মাথা থেকে বেরিয়েছিল? শুধু তো ওই রঙ্গই নয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এমন রঙ্গ-ব্যঙ্গ-কার্টুন মোটেই বিরল নয়। বরং নিয়ম করে নেতানেত্রীদের নিয়ে ফেসবুকের ওয়ালে খিল্লি করাটাই চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছে। মমতা থেকে মোদী নির্বিচারে জবাই করাটাই সেখানে দস্তুর। সে সব কারা আঁকে আর কারা শেয়ার করে, সেই প্রশ্নটাই অবান্তর।

এই সব ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে মাততে গিয়ে মাঝে-মধ্যে অম্বিকেশের মতো ক্ষমতার রক্তচক্ষু যে দেখতে হয় না, তা নয়। তবে যে আইনে এত দিন ব্যঙ্গ-বাহিনীকে পাকড়াও করা হচ্ছিল তা ইতিমধ্যে বাতিল। সৃজনশীল বঙ্গজনের উদ্ভাবনী শক্তিতে তাই ভাটা পড়ার কোনও লক্ষণই নেই। এই তো সে দিন দেখা গেল, বীরভূম থেকে ফেসবুকে পোস্ট হয়েছে কার্টুন। ভোটের আগে ঝুপড়িতে হামাগুড়ি দিচ্ছেন প্রার্থী, কেলেকুলো একটি বাচ্চা তাঁর গোঁফ ধরে টানছে। তিনি কিচ্ছুটি বলছেন না। ভোটের পরে তাদের আমলই দিচ্ছেন না।

পয়লা এপ্রিল পোস্ট হওয়ায় আর একটি কার্টুনে আবার দুই বিরোধী প্রার্থীকে একে অন্যকে বলছেন, চল, জনতাকে ‘এপ্রিল ফুল’ করে আসি। অন্যের জবাব, পাবলিকের যা হাল, এমনিতেই বোকা বনে আছে, তাদের আর নতুন করে ‘ফুল’ বানানোর দরকার নেই। ছবিগুলি দেখেই বোঝা যায়, পেশাদারের হাতের আঁকা নয়। কিন্তু তাতে কী? এ যে একেবারে পাবলিকের মনের কথা, লাইক পড়ার বহর দেখেই তা মালুম হচ্ছে।

কিন্তু রঙ্গব্যঙ্গ করার দায়ে বহু সময়েই চিত্রকরকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। পুরভো‌টের আগে অনুব্রত মণ্ডলদের মতো নাম করা নেতাদের নিয়ে মস্করা করতে ফেসবুকের চিত্রীরা ভয় পাচ্ছেন না? বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা ভোটার, মধ্য তিরিশের আঁকার শিক্ষক সোমনাথ নন্দন হেসে উড়িয়ে দেন। বলেন— ‘‘কারও বাড়ির দেওয়ালে তো লিখতে যাচ্ছি না!’’ ইন্টারনেটের দেওয়াল কি কম বিপজ্জনক? তা হলে কি নিজের ব্লগে মৌলবাদীদের আক্রমণের অপরাধে বাংলাদেশে পার্থ রায়ের মতো ব্লগারদের প্রকাশ্যে খুন হতে হয়? সোমনাথের জবাব, ‘‘রাজনৈতিক কার্টুন তো লোকে আঁকবেই। ইন্দিরা গাঁধী থেকে মোদী থেকে ওবামা, কেউ ছাড় পেয়েছেন? আটকানো যায়নি, যাবেও না।’’

পুরভোটে কার্টুন এঁকে লাভ? সোমনাথ মুচকি হাসেন— ‘‘ছোট শহর আমাদের। কিন্তু নেটিজেন কম নেই। বিশেষ করে কমবয়সীরা। তাঁরা কিন্তু হাসছেন, হাসতে-হাসতেই তাঁরা ভোট দিতে যাবেন।’’

যাত্রা শুরু

‘এ বার কার্তিক মাসে পূজা৷ সেনদিদির সর্বাঙ্গে ব্রণগুলি পাকিয়া উঠিতে উঠিতে গ্রামে পূজার উৎসব শুরু হইয়া গেল৷ উৎসব সহজ নয়, গ্রামের জমিদার শীতলবাবুর বাড়ি তিনদিন যাত্রা, পুতুলনাচ, বাজি পোড়ানো, সাতগাঁর মেলা— পূজা তো আছেই৷ গ্রামবাসীর ঝিমানো জীবন-প্রবাহে হঠাৎ প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হইয়াছে...।’ যাত্রাগানে আজও প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হয়তো হয় না, কিন্তু জেলায় জেলায় যাত্রা আজও টিকে আছে তার নিজের মহিমায়৷ রথ থেকেই নতুন যাত্রার যাত্রা শুরু হয় বটে, কিন্তু এই অক্ষয় তৃতীয়ার সময় থেকে তার প্রস্তুতি শুরু হয়৷ জ্যৈষ্ঠে দলের ছুটি হয়ে যায়, তার আগে এই সময় থেকে নতুন লোকজন নেওয়া বা পালার পরিকল্পনা হয়৷ যাত্রাদল নিয়ে তারাশঙ্করের উপন্যাস ‘মঞ্জরী অপেরা’ জানাচ্ছে, ‘পুজোর সময় থেকে মফস্বলে বের হয়ে এখান ওখান, শহর, গ্রাম ফিরে গাওনা করে একবারে ফেরে অগ্রহায়ণের শেষে৷ পৌষমাসটা বিশ্রাম, তারপর মাঘ মাসে সরস্বতী পূজা থেকে একনাগাড়ে কলকাতা থেকে সারা বাংলাদেশ, পুবদিকে আসাম সে গৌহাটি থেকে ডিগবয় ওদিকে শ্রীহট্ট শিলচর আবার বেহারে কাটিহার পূর্ণিয়া কিষাণগঞ্জ পর্যন্ত...।’ এ হেন যাত্রার স্মৃতি, সত্তা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রভাতকুমার দাসের বই যাত্রার সঙ্গে বেড়ে ওঠা প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি, কারিগর থেকে৷ প্রভাতবাবু দীর্ঘকাল যাত্রাকে দেখেছেন ঘনিষ্ঠরূপে৷ বাবা ছিলেন কলকাতার পেশাদার যাত্রাভিনেতা মুকুন্দমোহন দাস৷

ভূতের উপহার

সপ্তাহখানেক ধরে সাতসকালেই বাংলা বছরের ক্যালেন্ডার পাচ্ছেন শ্রীরামপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে আইপিএলের ক্রীড়াসূচি। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অসীম পণ্ডিত নিজে বড় ক্রিকেট-ভক্ত, আম্পায়ারিং-ও করেছেন এক সময়ে। আর সেই ক্রিকেট মাঠ থেকেই তিনি ‘ভূত’ হয়ে গিয়েছেন। দোষটা তাঁর দাদুর। নাতির জন্ম ‘শিবের বার’ সোমবার হওয়ায় তিনিই আদর করে নাম রেখেছিলেন ‘ভূতনাথ’। ক্রিকেট মাঠে অতিরিক্ত বিবেচনায় ‘নাথ’ বাদ হয়ে গিয়েছে। থেকে গিয়েছেন শুধু তিনি, তৃণমূলের সকলের পেয়ারের ‘ভূত’, ‘ভূতদা’, ‘ভূতবাবু’। এতে অবশ্য অসীম রাগ করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আপত্তির কী আছে? পাবলিক ডিমান্ডে দেওয়ালে-ফ্লেক্সেও ওই নাম লিখতে হয়েছে।’’ তবে ভোটারেরা তো ছাপোষা মানুষ। জিতলে তাঁদের ভূতের রাজার বর দেওয়ার খোয়াব দেখাচ্ছেন না কি? ইয়া জিভ কেটে ভূত বলে ওঠেন— ‘‘আরে রামোঃ, কী যে বলেন!’’

ফুল বালু

এই দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায় পুরীর সমুদ্রতটে। একদল শিল্পী বালির মূর্তি গড়ায় মগ্ন। কেউ শেখাচ্ছেন, কেউ বা শিখছেন। সেই বালুশিল্পকেই ভোটের ময়দানে নামিয়ে দিয়েছেন খড়্গপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী খোকন সরকার। শহরের এক শিল্পীকে দিয়ে গড়িয়েছেন বালির পাহাড়। তাতে ফুটেছে ঘাসফুল। তার দু’পাশে তৃণমুলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান। প্রার্থীর ব্যাখ্যা, এই ওয়ার্ডে এত দিন কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল। ইদানীং বিজেপিও বেড়েছে। তাঁদের কাছে এই ওয়ার্ড জলহীন পাহাড়ের মতোই। সেখানে ঘাসফুল ফোটানোর যুদ্ধে নেমেছেন তাঁরা। তা ছাড়া, ওই ওয়ার্ডে দক্ষিণীদেরই আধিক্য। তাঁরা যে বালুশিল্প পছন্দ করেন তা প্রদীপবাবুদের মাথায় রয়েছে। শিল্পী সন্তোষ কুমার জানান, নিজের শখে কাজ শিখেছেন, তা প্রচারের লাগাতেই তিনি খুশি।

ভোট-প্রজন্ম

সিউড়িতে কি শেয়ার-কাউন্সিলর চক্র জারি রয়েছে? সাঁইথিয়ায় ভোট ভাগ? বোলপুরে বাড়ছে বিজেপি? না কি রামপুরহাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে অশ্বিনী–আশিস সূক্ষ্ম তরজা? পুরভোটের আগে বীরভূমের এমন সব রকমারি নিয়ে মাঠে নেমেছে সিউড়ি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিকী নয়াপ্রজন্ম। পুর নির্বাচন নিয়েই বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে কাঞ্চন সরকার সম্পাদিত এই পত্রিকা। ১৬ পাতার সেই সাপ্তাহিকীর সঙ্গেই রয়েছে সাদা-কালোয় ছাপা ৪৮ পাতার জেলার চার শহরের নির্বাচনী ‘রেডি রেকনার’। চার পুরসভার ৭৩টি ওয়ার্ডের ২৯০ জন প্রার্থীর পরিচয়, ভোট-বিশ্লেষণ, এমনকী সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে গ্রাফিক্সও।

বোল বচ্চন

জুনিয়র অমিতাভ আসছে— দুপুর থেকেই পুরুলিয়া শহরে গুজব। শেষমেশ রাত ৮টা নাগাদ ২২ নং ওয়ার্ডের গোপালমোড় এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী সামিম দাদ খানের প্রচারমঞ্চের কাছে এসে থামল দুধসাদা গাড়ি। তিনি নামলেন। পরনে চোস্ত-শেরওয়ানি, এক কাঁধ দিয়ে পেঁচিয়ে নেওয়া চাদর। সেই চেনা ভঙ্গি। ঝলসে উঠতে লাগল কাছে-দূরে মোবাইল ক্যামেরার ফ্লাশ। মঞ্চে উঠেই দর্শকদের দিকে বাঁ হাত নাড়লেন। ব্যস, আর যায় কোথায়? মঞ্চে তখন বক্তৃতা চলছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! বেগতিক বুঝে ‘আপনারা যাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁর কথা শুনুন’ বলে মাইক এগিয়ে দিলেন প্রার্থী। মাইক হাতে পেতেই শুরু ফিল্মি ঢঙে ডায়লগ— ‘পিছলে বার ইনে যাঁহা সে জিতকে আয়ে হ্যায়, উসসে পুছিয়ে খানজি ক্যায়সা আদমি হ্যায়!’ শেষ পাতে আমদানি করলেন শায়েরি, ‘বিগ বি’র মতোই— ‘‘হায়াদ লে কে চলো, কায়নাদ লে কে চলো, মজা তো তব হ্যায়, জমানে কো সাথ লে কে চলো।’’ কে এই প্রায়-বচ্চন? নাম জানা গেল, শাহিদ খান। থাকেন খাস মুম্বইয়ে। নিজেই জানালেন, গোরক্ষপুরে একটি ছবির শ্যুটিংয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই সোজা পুরুলিয়া! সামিম জানান, কিছু দিন আগে বিয়েবাড়িতে শাহিদের সঙ্গে আলাপ। তখনই প্ল্যানটা মাথায় আসে। হোক না নকল, বচ্চন তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE