Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

বাঙালির বাঙালিত্ব অনেকটাই গঠন করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তার বইপ্রেমও৷ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনকে ঘিরে এক দিন গ্রন্থ-পার্বণ চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র৷ বাঙালির বইপ্রেমের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক মাথায় রেখেই নিশ্চয় ছিল সে প্রস্তাব৷ এখন সবচেয়ে বেশি বাংলা বই প্রকাশিত হয় বইমেলায়৷ রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে বাংলা বই প্রকাশের ধারাটি এখনও মরুপথে হারায়নি৷

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

রবি বই-শাখ
পাঠ ও প্রকাশ

বাঙালির বাঙালিত্ব অনেকটাই গঠন করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তার বইপ্রেমও৷ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনকে ঘিরে এক দিন গ্রন্থ-পার্বণ চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র৷ বাঙালির বইপ্রেমের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক মাথায় রেখেই নিশ্চয় ছিল সে প্রস্তাব৷ এখন সবচেয়ে বেশি বাংলা বই প্রকাশিত হয় বইমেলায়৷ রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে বাংলা বই প্রকাশের ধারাটি এখনও মরুপথে হারায়নি৷ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনটি তাই প্রতি বছরই বিশ্বভারতী-তে কেবল গান-কবিতায় নয়, নতুন বই-প্রকাশের মধ্য দিয়ে গঠনমূলক কাজে পালিত হয়৷ এ বারও তার অন্যথা হচ্ছে না৷ নবনির্মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষণা-কেন্দ্রের বাড়ি রবিবিতানে ৯ মে প্রকাশিত হবে বেশ কয়েকটি বই৷ রবীন্দ্রসপ্তাহে দেওয়া বিভিন্ন বক্তৃতার সংকলন তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য৷ রবীন্দ্রনাথের ছবি ও গান, শিক্ষাভাবনা আর বিজ্ঞানচিন্তা, পল্লি-উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গে নানা সময়ে বক্তৃতাগুলি দিয়েছিলেন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, অরুণকুমার বসু, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, সবুজকলি সেন, তপতী মুখোপাধ্যায়, সুশোভন অধিকারী প্রমুখ৷ এ ছাড়া আছে চিঠিপত্র ১৭-র নতুন সংস্করণ, সংস্কৃত ভাষায় ‘গীতাঞ্জলি’র নতুন সংস্করণ এবং বানান ও বিন্যাস-বিধি৷ প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্বভারতী পত্রিকার নতুন সংখ্যাও৷ বই প্রকাশের আগে উপাসনা গৃহে ২৫শে বৈশাখের বক্তৃতা করবেন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত৷ সন্ধেয় পাঠভবনের উপস্থাপনায় চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য৷ প্রকাশিত হয়েছে ২৫ বৈশাখ পত্রীও৷ সঙ্গের দুর্লভ ছবিটি বিশ্বভারতী পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যা থেকে নেওয়া, সুরুল কুঠিবাড়িতে পাঠক রবীন্দ্রনাথ৷

আঁকিয়ে মানিক

‘যে জিনিসটা ছেলেবয়স থেকে বেশ ভালোই পারতাম সেটা হল ছবি আঁকা৷’ যখন ছোট ছিলাম বইয়ে লিখছেন সত্যজিৎ রায়৷ সেই পটুত্ব একটা আকার পেয়েছিল শান্তিনিকেতনে৷ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হয়ে মায়ের ইচ্ছেয় ১৯৪০-এর মাঝামাঝি বিশ্বভারতী কলাভবনে ভর্তি হয়েছিলেন মানিক৷ কিন্তু ফাইন আর্ট বা চারুকলা নিয়ে কাজ করার উৎসাহ তাঁর কোনও দিনই ছিল না৷ বরাবর চেয়েছিলেন কমার্শিয়াল আর্ট বা বিজ্ঞাপন শিল্পে কাজ করবেন৷ তখন কলাভবনে কমার্শিয়াল আর্ট শেখানো হত না৷ তবু সেখান থেকেই ভারতের শিল্পকলার ঐতিহ্য শিখে বিজ্ঞাপন শিল্পে কাজে লাগাবেন, এই চিন্তাই ছিল তাঁর মনে৷ কলাভবনে সেই ভিতটা পাকা করে দিয়েছিলেন শিক্ষক নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়৷ সেই প্রভাব দেখা গিয়েছে সত্যজিতের রংতুলির কাজে৷ সে-সবের শিল্পগত ধারাবাহিক বিশ্লেষণ এখন খুব বেশি চোখে পড়ে না৷ সেই অভাব খানিকটা পূরণ করল দেবাশীষ দেবের রং তুলির সত্যজিৎ৷ সত্যজিতের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, অক্ষরশিল্প আর সিনেমার বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে বহু ছবি-সহ গভীর আলোচনা করেছেন দেবাশীষ৷ বইটি আগাগোড়া সম্পাদনা করেছেন আশিস পাঠক৷ সঙ্গে সুনীল শীল-কৃত প্রচ্ছদ৷

তপনের প্যাস্টেল

ছবি তৈরি করতে ভালবাসেন তিনি। সব কবিতাতেই আমি কোনও না কোনও একটা ছবি আঁকতে চেয়েছি... বলেছেন তিনি নিজেই। লিখছেন— ‘এ ছবি দেখেছে মুখ কালো করা রাত/ এ ছবি এঁকেছে সিঁধ কাটা পাকা চোর’ বা ‘এ ছবি আমার কাছে/ সম্বৎসর পড়ে থাকে/ দানাপানি চায় না কখনো।’ তপন গোস্বামীর সদ্য বেরনো কবিতার বই প্যাস্টেলে জাগে ভোর (দিবারাত্রির কাব্য) এই চিত্রময়তা দিয়েই বুনেছে চেনা জীবনের নকশিকাঁথা। কবির জন্ম নবদ্বীপে, কর্ম বাঁকুড়ায়, নিবাস এখন সিউড়ি। নানা শহর, নানা জীবন, নানা ছবি। তার মধ্যে অনায়াস সুতোর মতো খেলেছে সহজ ছন্দ। এমনকী পদ্যের পঙ্‌ক্তি যখন গদ্যের বিস্তার নিয়েছে, তখনও তার ব্যত্যয় হয়নি। শিরোনামহীন, শুধু ক্রমিক সংখ্যায় চিহ্নিত কবিতার পর কবিতায় সেই ছন্দিত চিত্রেরই উদ্‌যাপন। ফয়সল অরফিয়াসের করা প্রচ্ছদেও প্যাস্টেলে আঁকা মুখশ্রী। সারাৎসার হয়ে ওঠে সেই কথাটিই— ‘ছোটো এ খাতায় গোটা সংসার/ পেন দিয়ে এঁকে রাখি।’

নাটুকে ইলোরা

ফি বছরই নিষ্ঠা ভরে কাজটা করে চলেন ওঁরা। বাংলার নাট্যজগতে কী-কী বড় ঘটনা, কে পেলেন পুরস্কার, কোথায় কী নাট্য উৎসব প্রতিযোগিতা কর্মশালা, এমনকী বিতর্কও সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রকাশ করে ইলোরা নাটকের বর্ষকথা। তবে বর্ধমান ও বোলপুর থেকে কাজ চালানো এই পত্রিকা যে কারণে সবচেয়ে আদর পায়, তা হল নাট্যব্যক্তিত্ব থেকে দল— সকলের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেল সাজিয়ে দেওয়া। নাট্যপত্র, নাট্য সরঞ্জাম বিক্রেতা বা মঞ্চও সেই তালিকা থেকে বাদ নেই। নাট্যকর্মী অশোক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বাংলা নাট্যজগতের একটি প্রতিচ্ছবি ইলোরা নাটকের বর্ষকথায় দেখতে পাওযা যায়।’ ষথারীতি এ বারও পত্রিকা বেরিয়েছে। বীরভূমের নাট্যকর্মী অরুণ মুখোপাধ্যায়ের কোলাজ প্রচ্ছদে ধরে রেখেছে যেন জটিল অথচ নাট্যময় এই সময়টিকেই।

বাংলার মুখ

তাঁর জানা ছিল না, ‘পানিতে ভাসিয়ে দিলে পুরুষের লাশ চিৎ হয়ে ভাসে আর নারীর লাশ ভাসে উপুর হয়ে’—যুদ্ধধ্বস্ত বাংলাদেশ তাঁর প্রৌঢ়ত্বে শিখিয়েছে এই অমোঘ সত্য। হাসান আজিজুল হকের এমনই শিউরে ওঠা ৭১-এর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মুখ তুলেছে সে সময়ের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ আর ধোঁয়া-বুলেটের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-কথা। বারাসত থেকে প্রকাশিত দীপঙ্কর দাস এবং পার্থসারথি দে সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারির মুখ সংকলন নিঃসন্দেহে সংগ্রহযোগ্য। তনভীর মোক্কামেল থেকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী— রয়েছে এমন বহু জনের সাক্ষাৎকার, যেখানে সাইরেনের শব্দে ফিরে ফিরে আসে হারানো একাত্তর। সংকলনে বাড়তি প্রাপ্তি বেশ কিছু ছবির প্লেট। তবে পরিমিতি বোধ জিনিসটা বোধহয় খুব জরুরি। না-ই বা হল কলেবরে দীঘল। এ হেন জরুরি সংকলনের সম্পাদনায় আর একটু যত্ন প্রত্যাশিত ছিল।

লোকজীবন

‘১৯৫৬-র আগে গোটা মানভূমটাই ছিল পুরুলিয়া৷ তার অনেকটা এখন ঝাড়খণ্ডের সিংভূম আর ধানবাদ জেলায়৷ তার সঙ্গে হাজারিবাগ, গিরিডি, রাঁচি মিলিয়ে পশ্চিম সীমান্ত-রাঢ়’— বলছিলেন গবেষক প্রবীর সরকার৷ পুরুলিয়ার একটি কলেজের অধ্যাপক৷ কিন্তু সেটা নিছকই পেশাগত পরিচয়, আসলে তিনি এক জন পায়ে-সরষে চারণিক৷ পুরুলিয়ার আদিবাসী গ্রামে ঘুরে-ঘুরে সংগ্রহ করে চলেছেন রূপকথা, বীরকথা, পশুকথা, ধর্মকথা ও নানা লোকগল্প৷ সে সব নিয়েই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর রাঙামাটির লোককথা পুরুলিয়া (গাঙচিল)৷ এখনও সেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রবীরবাবু৷ পাশাপাশি চলছে তাঁর বিবেকানন্দ-সন্ধানও৷ সম্প্রতি গাঙচিল থেকেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা নিয়ে একটি বই।

কল্পমূক

নাৎসি জমানার জার্মানিতে বসে হেনরিক বলের লেখা ‘দ্য ক্লাউন’ উপন্যাসের কথা যেন এক লহমায় মনে পড়ে যেতে পারে। সেখানে এক মূকাভিনয় অভিনেতার হেরে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছে। আসানসোলের কল্পতরু গুহ কিন্তু নাগাড়ে প্রায় বছর ৫০ ধরে জীবনের কথাই বলে চলেছেন, জীবনের কথা শোনাতেই তিনি ভালবাসেন। কিন্তু সেই শোনা শব্দহীন, কেবল ইশারাময়। পোশাকি কথায় তাকে বলে মূকাভিনয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়েস থেকে তাঁর প্রথাগত তালিম শুরু। মাত্র আট বছর বয়সে ধানবাদের লিন্ডসে ক্লাবে আত্মপ্রকাশ। সেই থেকে কেবল হাতের মুদ্রা, মুখের অভিব্যক্তি, শরীরী ভাষার অক্ষরেই তিনি মঞ্চে ফুটিয়ে চলেছেন রবীন্দ্রনাথের নাটক থেকে শুরু করে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক, শ্রম মন্ত্রক থেকে একাধিক বার পেয়েছেন সংবর্ধনা। তাঁর বাবা, স্বর্গীয় অমিয় গুহের নামে গড়ে তুলেছেন মূকাভিনয় স্কুল। তাঁরই তত্ত্বাবধানে পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও দিল্লির বালভবনে আয়োজিত হয়েছে জাতীয় মূকাভিনয় কর্মশালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE