Advertisement
১১ মে ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

একে বর্ষা, তায় রমজান মাস। মেঘলা বিকেল সন্ধ্যের দিকে ঢললেই চুম্বক হয়ে উঠতে থাকে মোড়ের দোকানটা। তেলচিটে হলদে ডুমের আলোয় সেখানে টগবগে তেলে লাফাচ্ছে, আসতে আসতে সাদা থেকে হলুদ, হলুদ থেকে বাদামি হয়ে উঠছে বেসনের শরীর। মাটির তোলা উনুনের আঁচে তেতে ওঠা কালচে কড়াইয়ের দিকে নির্নিমেষে চেয়ে জোড়া জোড়া চোখ।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৪
Share: Save:

বেসন বিলাস

গরম দেখে খান চারেক

একে বর্ষা, তায় রমজান মাস। মেঘলা বিকেল সন্ধ্যের দিকে ঢললেই চুম্বক হয়ে উঠতে থাকে মোড়ের দোকানটা।

তেলচিটে হলদে ডুমের আলোয় সেখানে টগবগে তেলে লাফাচ্ছে, আসতে আসতে সাদা থেকে হলুদ, হলুদ থেকে বাদামি হয়ে উঠছে বেসনের শরীর।

মাটির তোলা উনুনের আঁচে তেতে ওঠা কালচে কড়াইয়ের দিকে নির্নিমেষে চেয়ে জোড়া জোড়া চোখ। যে মুহূর্তে ছড়ানো ঝাঁঝরি খামচা দিয়ে তুলবে এক মুঠো, ঝাঁপিয়ে পড়বে সব ক’টা গলা “আমার চারটে...”, “এ দিকে দশটা, অনেকখন দাঁড়িয়ে কিন্তু...”, পাশ থেকে ঝুঁকে মিহি গলায় “আমায় টুক করে দু’টো দিয়ে দে না বাপু...।”

এই যে তেলে নেয়ে ওঠা বেসনের শরীর, তারই দিশি নাম তেলেভাজা। ফিরিঙ্গির ধারাপাত পড়ে যাকে ‘চপ’ বলে ডাকে তামাম হিন্দুস্তান। সে না হয় এসেছে মাংস টুকরো করে কেটে (চপ) ভাজা থেকে। কিন্তু তেলেভাজা? তেলে যা ভাজা হয়, তাকেই কি আর তেলেভাজা বলে? সংসদ বাঙ্গালা অভিধান বলছে, “বেগুণ পটল প্রভৃতিতে বেসনের প্রলেপ মাখাইয়া ও তেলে ভাজিয়া তৈয়ারী খাবার অর্থাত্‌ বেগুনী ফুলুরি প্রভৃতি” (বানান অপরিবর্তিত)।

ওই ‘প্রভৃতিটা’ই হল গিয়ে কথা। কখনও সে বেগুনি তো কখনও ফুলুরি, কখনও আলুর চপ তো কখনও মোচা। কাশ্মীরি চপ যে কেন ‘কাশ্মীরি’, জম্মু থেকে উজিয়ে আসা কোন শাল বা কার্পেটওয়ালা বা তা বলতে পারবে? পেঁয়াজি নিয়ে কথা বেশি না বাড়ানোই ভাল। বরং কাছেই কোনও মুড়ির পাহাড় থেকে একঠোঙা নিয়ে নতে হবে। সঙ্গে কাঁচালঙ্কাও।

দেখা যাবে, সব তল্লাটেই একটা না একটা তেলেভাজার দোকান আছে, যার কবে শুরু দিনক্ষণ গুনে বলা মুশকিল। বাবা, বাবার বাবা, দাদুর দাদু, কে যে এক দিন আলুতে বেসন ঠেসে ফুটন্ত তেলে ছেড়েছিলেন, তা গুনে বলা মুশকিল। কেউ গোনেন বিশ তো কেউ চল্লিশ।

ভারত-চিন যুদ্ধের বছর দুই পরে, ১৯৬৪-তে বর্ধমান শহরে বড়বাজারে খুলেছিল দুলালের চপের দোকান। কে যাননি সেই দোকানে? সিপিএমের বিনয় চৌধুরী যত দিন বেঁচে ছিলেন, শহরে থাকলে ওই তেলেভাজা দিয়ে মুড়ি তাঁর নিত্য জলখাবার ছিল। রমজান মাসে তাঁর তো বিক্রি বাড়েই, নীলপুরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের অষ্টমের চপের দোকানও গমগম করতে থাকে।

নিউ সিনেমা গলির (সেই সিনেমা হল কবে উঠে গিয়েছে) মাখন দত্তের নাম শোনেননি এমন লোক পুরুলিয়া শহরে ক’টি মিলবে, বলা শক্ত। হাফ কামিজের নীচে লুঙ্গি কষে তিনি যখন তোলা আলুর চপ, লম্বা বেগুনির সঙ্গে কুমড়োর বেগুনি (রসিকেরা ডাকেন কুমড়োনি) অথবা নারকেলের চপ ভাজেন, পুরু চশমার ফাঁকে তাঁর দিব্যদৃষ্টি প্রায় ঝলসে ওঠে। তিনি জানেন, গুণমুগ্ধেরা এল বলে! শহরের শিল্পী ধ্রুব দাস তো একবার তাঁর মূর্তিও গড়ে ফেলেছিলেন।

তেমনই সিউড়িতে জীবন ফার্মাসির মোড়ে বিশ্বনাথ দাস ওরফে বিশুদার দোকান। বছর তিন হল বিশুদা গত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে তিরু আলু, পটল, টম্যাটো, ক্যাপসিকাম, ভেজিটেবিল, পাউরুটির দলকে বারো মাস তেলে নাচিয়েই চলেছেন। পঞ্চাশ বছর যাবত্‌ তেলেভাজা বেচে আসছে বাঁকুড়ার বড়কালীতলার ‘গোস্বামী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। এক সময় শহরের গুণিজনেরা চপ খাওয়ার অছিলায় এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দোকানে আড্ডা দিয়ে যেতেন। এখনও আসেন।

রমজান মাসে ইফতারের পাতে খেজুরের পাশে কেন তেলেভাজা থাকতেই হবে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। মধ্য ও নিম্নবিত্ত বাঙালির সংসারে এই নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। কারও-কারও মতে, আসলে রোজা ভেঙে নবাব-বাদশাহরা কোফতা-কাবাব খেতেন, গরিবে খায় তারই সস্তা জাতভাই।

মুড়ি-তেলেভাজাতেই তো আম বাঙালির আসল নবাবি!

মিহি সুতোয়

তিনি সনিয়ায় আছেন, বাজপেয়ীতেও আছেন। রাজনীতিতে এক্কেবারে নেই, কিন্তু কুর্সিতে যাঁরা বসছেন, তাঁদেরই তিনি ধরে রাখছেন মিহি সুতোয়। দিল্লিতে সম্প্রতি সনিয়ার বাসভবনে গিয়ে তাঁর পূর্ণ অবয়ব ফুটিয়ে তোলা মসলিনের উপর ঢাকাই কাজ করা শাড়িটি হাতে করে তুলে দিলেন ফুলিয়ার বিখ্যাত তাঁত শিল্পী বীরেনকুমার বসাক। ১৫ বছর আগে পাঁচ মাস ধরে তৈরি শাড়িটির সুবাদে ইউপিএ-র চেয়ারপার্সনের সঙ্গে ১৫ মিনিটের আলাপে আপ্লুত ছেলে অভিনব বসাকসহ বীরেনবাবু। তাঁদের ইন্দিরা গাঁধীর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা শাড়িটিও ইন্দিরা গাঁধী সংগ্রহশালায় রাখা হবে, এমন প্রতিশ্রুতিই এ দিন সনিয়া তাঁদের দেন। যদিও অটলবিহারী বাজপেয়ীর অবয়ব নিয়ে তৈরি শাড়িটি তাঁর ব্যক্তিগত সচিবের হাতে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় এ বারের মতো। শাড়িতে বুদ্ধ, মমতা থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীতে সংরক্ষিত রবীন্দ্রনাথ কে না ফুটে উঠেছেন তাঁর শিল্পে। মানব সভ্যতার বিবর্তন কিংবা বাংলার তাঁতের ইতিহাস নিপুণ হাতে শাড়ির গায়ে বুনে চলা শিল্পী জানান, “সোনিয়া গাঁধীর হাতে শাড়িটা তুলে দিতে পেরে আমরা খুব খুশি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাতেও দিতে পারলে খুব খুশি হতাম।” সেই খেদ আর মেটার নয়। কিন্তু এ বার সুতো বুনছে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকে। আপাতত পাঁচ বছর তো তিনি দিল্লির ঠিকানায় থাকছেনই।

পান্তা নয়, পখাল

বিজলিবাতি আসতে পান্তোভূতের দিন গিয়েছে আর ফ্রিজ আসতে পান্তার। ফ্রিজহীন সেই দিনকালে হেঁশেলের বাড়তি ভাতে রাতভর জল ঢেলে রেখে পরের দিন পেঁয়াজ-তেল-কাঁচালঙ্কা দিয়ে যা দাঁড়াত, তারই নাম পান্তা। সঙ্গে দু’একটা ফুলুরি হলে তো কথাই নেই। কিন্তু গরিবপোষা পান্তা কি কেবল অভাবেই ফলে? তার রাজকীয় রূপ হতে নেই? গোটা নবদ্বীপ জানে, আছে। সাদা কুন্দফুলের পাপড়ির মতো গোবিন্দভোগ অথবা বাসমতীর চালের অন্ন রেঁধে পোড়ামাটির পাত্রে (বিকল্পে পিতল বা তামার পাত্র) বরফঠান্ডা গোলাপজলে ছ’সাত ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পরে তাতে মেশাতে হবে জিরে ভাজার মিহি গুঁড়ো, আদা, কাঁচালঙ্কা কুচো। চাই কী কাজু, পেস্তাও। এ বার পাথরের বড় পাত্রে ঢেলে তাতে মেশানো হবে টক দই এবং আর কয়েক ফোঁটা গন্ধরাজ লেবুর রস। ব্যস, চেনা পান্তা এখন চেহারা বদলে দেবভোগ্য পখাল বা পাখাল। নবদ্বীপের প্রায় প্রতিটি বৈষ্ণব মঠ-মন্দিরে গ্রীষ্মের বিকেলে দেবতাকে নিবেদন করা হয় ওই পখাল ভোগ। বর্ষা এসে গিয়েছে। পখাল সামনের বছরের জন্য তোলা রইল।

বাসাবদল

কিছুদিনের মধ্যেই যুগপত্‌ স্থান ও হাত বদল হতে চলেছে ‘ঝাড়গ্রাম লোক সংস্কৃতি সংগ্রহশালা’-র। এতদিন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্বে থাকা এই সরকারি সংগ্রশালাটি এবার পর্যটন দফতরের অধীনে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে সংগ্রহশালাটি রয়েছে ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের দোতলায়। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে কর্মী পদ শূন্য হওয়ার পর থেকেই সংগ্রহশালাটি কার্যত তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে। সংগ্রহশালাটিকে এবার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বাঁদরভুলায়। আদিবাসী নৃত্যসজ্জার উপকরণ, শিকারের অস্ত্র, বেলপাহাড়ির ঢাঙিকুসুম গ্রামের পাথরের বাসন, মুনিয়াদা গ্রামের অধুনালুপ্ত পুতুল নাচের কাঠের পুতুল, ঘোড়ার পুতুল, লাঠি খেলার পুতুল, গণেশ পুতুল, বায়েন পুতুল, ছোরা খেলার পুতুল, রণপা, ঢেঁকি, মাছ ধরার বাহারি ফাঁদ, শীতলামঙ্গলের পট, বেলপাহাড়ির লালজল গুহায় পাওয়া নব্যপ্রস্তর যুগের আদিম মানবের কুঠার, মৃগজাতীয় প্রাণীর শিংয়ের জীবাশ্ম।

মুখের ভিড়ে

বই নাকি অ্যালবাম, কী নামে ডাকা যায় একে? দ্বিধাগ্রস্ত আঁকিয়ে নিজেই। কেউ ভুবনখ্যাত, কেউ স্বল্প পরিচিত, এমন একশো ব্যক্তিত্বের মুখ রেখায় ধরেছেন বহরমপুরের কৃষ্ণজিত্‌ সেনগুপ্ত। মালালা ইউসুফজাই থেকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, বব ডিলান থেকে লালন ফকির, রাধানাথ শিকদার থেকে কবিয়াল গুমানি গেওয়ান, পেলে থেকে শাহবাগ আন্দোলনের শহিদ আহমেদ রাজিব হায়দার বিস্তার আর বৈচিত্র্য দেখার মতো। ‘শতমুখ’ নামে প্রকাশিত সিডি-র ভূমিকায় সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন, “কৃষ্ণজিত্‌ একজন স্বশিক্ষিত মৌলিক শিল্পী।” কোনও শিল্পীরই সব কাজ সমান ভাবে উতরোয় না। শতমুখের কিছু কিন্তু সত্যিই চোখ টানে।

দরবারি

রাজবাড়িতে সানাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। জেগে রয়েছে শুধু প্রাসাদের চৌহদ্দি পিছলে বাইরে চলে আসা সুর-লয়। এখনও যে দু’এক জনের বাদনে পঞ্চকোট রাজবাড়ির ঘরানা দীর্ঘ ছায়া ফেলে, তাঁদেরই এক জন সত্তর ছুঁইছুঁই শান্তিরাম কালিন্দী। সানাই বাজাতেন তাঁর বাবা মেঘনাদ। তিনি শেখেন রাজবাড়ির শিল্পী বদি সেনের কাছে। বাবার কাছ থেকেই শান্তিরামের শেখা। পরে বাঁকুড়ার আচার্য শশধর সিংহ ঠাকুর, রসময় সিংহ ঠাকুর, অমর দে-র কাছেও শিখেছেন। এমনিতে মানভূম জুড়ে ছৌ-ঝুমুরের সঙ্গেও সানাই বাজে। কিন্তু পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের কালাপাথর গ্রামের শান্তিরামের বৈশিষ্ট্য পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মার্গীয় রাজ-ঘরানা। “বিভিন্ন জায়গা থেকে বাবার দলের ডাক আসত। এক দিন বিয়েবাড়িতে বাবা অসুস্থ। আমিই ধরলাম সানাই। সেই থেকেই...।” নহবতখানায় সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত শান্তিরাম দরবারি কানাড়া ভাঁজছেন পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-ঝাড়খণ্ডের বহু মানুষের স্মৃতিতে সেই স্মৃতি স্পষ্ট। সারা জীবন প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর সঙ্গেই চালিয়ে গিয়েছেন অনুষ্ঠান। এখন বয়স শরীরে ছাপ ফেলেছে। “ঘণ্টা তিন-চার বাজাতে পারি। শুনবে কে? এখন বিয়েবাড়ির বায়না আসে না। সবাই সিডি চালায়।” অবসর নিয়ে বাবার নামে স্কুল খুলেছেন। তাঁর ইচ্ছে, “নতুন প্রজন্ম এই সানাই শিখে নিক। তাতে শিল্পটা অন্তত বাঁচবে।”

ননীগোপাল

ওপার বাংলার নোয়াখালিতে ১৪ মার্চ ১৯৩০ জন্মেছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে এ-পারে এসে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ফাইন আর্টস বিভাগে ভর্তি হন। নন্দলাল, বিনোদবিহারী, রামকিঙ্কর এবং গৌরী ভঞ্জকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। তাঁদের শিক্ষায় ক্রমশ পরিণত শিল্পী হয়ে ওঠেন ননীগোপাল ঘোষ। তাঁর ঝোঁক ছিল মূলত ডিজাইনে। টেক্সটাইল, উইভিং, বাটিক, এম্ব্রয়ডারি এবং আলপনায় ছিল তাঁর সিদ্ধি। ১৯৫১ থেকে ’৯৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৪ বছর কলাভবনের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সময়ে তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মঞ্চসজ্জা, পোশাক পরিকল্পনা, মেক-আপ পর্যন্ত হয়েছে। তাঁরই শিল্পভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ‘রবীন্দ্রভাবনায় শান্তিনিকেতনে আলপনা’ (আনন্দ) লিখেছেন শিল্পীর পুত্রবধূ স্বাতী ঘোষ। গত ১২ জুলাই ৮৪ বছর বয়সে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বভারতীর পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতালে তিনি মারা গেলেন। রইলেন স্ত্রী, দুই পুত্র ও কন্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

south karcha southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE