Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

‘কমলকুমার মজুমদারের আসর দেখতে দেখতে ফাঁকা হয়ে এল। লোক ওঠা শুরু হয় সেই অনিলা-স্মরণে থেকে, এখন আসর প্রায়-ফাঁকা, আজ, সুহাসিনীর পমেটম-এর পর, পিছন থেকে, সামনে থেকে, যত্রতত্র থেকে লোক উঠে যাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

আর এক কমল

গ্রাম-সন্ধানী

‘কমলকুমার মজুমদারের আসর দেখতে দেখতে ফাঁকা হয়ে এল। লোক ওঠা শুরু হয় সেই অনিলা-স্মরণে থেকে, এখন আসর প্রায়-ফাঁকা, আজ, সুহাসিনীর পমেটম-এর পর, পিছন থেকে, সামনে থেকে, যত্রতত্র থেকে লোক উঠে যাচ্ছে। অন্তর্জলি যাত্রা ও নিম অন্নপূর্ণা যখন পুস্তকাকারে বেরোয়, সেই ছিল তাঁর সুসময়, তখন তাঁর পাঠকসংখ্যা ছিল সুদীর্ঘ— যেমন একটা শালগাছ— তারপর আজ কমলকুমার মজুমদারের পাঠক সশব্দে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে...’ একটি সুদুর্লভ লেখায় কমলকুমার মজুমদার সম্পর্কে লিখেছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। লেখক কমলকুমারের আসর ফাঁকা হয়ে এলেও গ্রামজীবন ও লোকশিল্পের সনিষ্ঠ অনুসন্ধানী কমলকুমার মজুমদার বোধহয় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।

সাধে কি সত্যজিৎ রায়কেও লিখতে হয়েছিল, “পল্লীগ্রামের জীবন নিয়ে ছবি করে কমলবাবুকে খুশী করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।” বহু অনুরোধেও সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ নাকি দেখেননি কমলকুমার। গ্রামবাংলা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছেন শতবর্ষে পৌঁছনো এই লেখক। পটের কথা, বাংলার টেরাকোটার কথা, মৃৎশিল্পের কথা, ঢোকরা কামারদের কাজ নিয়ে তাঁর ক্ষেত্রানুসন্ধানী লেখাগুলি আজও গবেষকদের পাথেয় হয়ে আছে। তারই পাশাপাশি নিজস্ব কাঠখোদাইয়ের ছবি দিয়ে সংকলন করেছেন গ্রামবাংলার ছড়ার, আইকম বাইকম নামে সেই সংকলন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সপ্তর্ষি প্রকাশন। কিন্তু শতবর্ষে তাঁকে নিয়ে বিবিধ গল্প লেখা হলেও এই গ্রাম-সন্ধানী কমলকুমারকে নিয়ে তেমন চর্চা হয়নি আজও।

প্রচ্ছদে খালেদ

বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকার শুরু তাঁর ১৯৪৬ সালে ডাইসন কার্টারের লেখা ‘সোভিয়েত বিজ্ঞান’ দিয়ে। শেষ অশোককুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘চেনাপাড়া অচেনা মানুষ’। কিন্তু খালেদ চৌধুরী অমর হয়ে থাকবেন বাংলার রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে তাঁর আশ্চর্য মঞ্চ নির্দেশনার সৌজন্যে। শম্ভু মিত্র থেকে শুরু করে হালে গৌতম হালদার, বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে কত নাটকের জন্য যে মঞ্চ সাজিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। ১৯১৯ সালে অসমের করিমগঞ্জে তাঁর জন্ম। বেঁচে থাকলে এই ২০ ডিসেম্বর তাঁর বয়স হত পঁচানব্বই। গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় তিনি মারা যান। কিন্তু মৃত্যু কি অত সহজে তাঁকে ছুঁতে পারে?

তাঁর জন্মদিনেই উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় শুরু হচ্ছে ‘জাতীয় নাট্য মেলা’ আয়োজন করেছে স্থানীয় নাট্যসংস্থা ‘নকসানাট্য’। সংস্থার কর্ণধার আশীষ দাস জানান, শিল্পীর ঘনিষ্ঠ প্রদীপ দত্তের সহযোগিতায় খালেদ চৌধুরীর জীবন ও কাজ নিয়ে প্রদর্শনী হবে। থাকবে তাঁর সৃষ্ট মঞ্চ ও প্রচ্ছদের আলোকচিত্র, তাঁর হাতে আঁকা ছবি। প্রদীপবাবু নিজে শিল্পীকে একটি তথ্যচিত্র করেছেন। দেখানো হবে সেটিও।

ফোকাসে রেল

শুরুটা হল ক্যানসার নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে। উত্তরপাড়ার নতুন সাংস্কৃতিক সংস্থা ফোকাস গত মাসে পথ চলা শুরু করেছে ‘ক্যানসার পুরনো ভয় নতুন ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা দিয়ে। ছিলেন স্থবির দাশগুপ্ত, এস এন বসাক, ডি কুমার। সংস্থার পক্ষে অরিন্দম সাহা সর্দার জানিয়েছেন, প্রতি মাসের দ্বিতীয় রবিবার ও তৃতীয় শনিবার নানা বিষয়ে আলোচনাসভা ও প্রাসঙ্গিক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন হবে। সেই মতো সম্প্রতি ‘উনিশ শতকের বাঙালি জীবনে রেল’ প্রসঙ্গে বললেন রমেন সর। আগামী শনিবার, ২০ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রসঙ্গে বলবেন আশীষ লাহিড়ী। দেখানো হবে কালীসাধন দাশগুপ্ত পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়’, উত্তরপাড়া বেঙ্গল স্টুডিয়োর প্রেক্ষাগৃহে।

ইতিহাসে ঋত্বিক

পঁয়ত্রিশে ফিরে দেখার আয়োজন এখন বহরমপুরের ঋত্বিক-এ। বাংলা নাট্যের ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নিয়েছে নাট্যদলটি। ৩৫ বছরে নানা প্রযোজনা তো বটেই, এ বছর চোদ্দোয় পা দিল ঋত্বিকের ‘দেশবিদেশের নাট্যমেলা’। সেই সঙ্গে নিযমিত চলছে দলের নিজস্ব প্রযোজনা ‘আদিরাজা’ এবং ‘কঙ্কাল’। নাট্য প্রযোজনার পাশাপাশি ঋত্বিক এ বার হাত দিয়েছে ডকুমেন্টেশনেও। তাই বিশিষ্ট নাট্য-গবেষক আশিস গোস্বামী ঋত্বিকের অনুরোধে লিখেছেন তাদের অনুপূঙ্খ ইতিহাস। দীর্ঘকাল ধরে নাট্য-ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন আশিস। এ বার তাঁর কলমে উল্লেখযোগ্য নাট্যদলের তথ্যায়নের সঙ্গে বহরমপুরের নাট্যধারার ইতিহাস। ঋত্বিক থেকে প্রকাশিত বইটির নাম নন্দিত ৩৫: সৃজন ও সত্তায়।

হলদিয়ায় সুন্দরী

সোঁদরবন ছেড়ে ম্যানগ্রোভ পৌঁছেছে হলদিয়ায়। হুগলি ও হলদি নদীর ধারে-ধারে কাকড়া, বাইনের শ্বাসমূল। ম্যানগ্রোভ যে শ্বাসমূল উঁচিয়ে ভূমিক্ষয় রুখতে পারে, তা কে না জানে। কিন্তু তার যে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষমতাও বেশি, তা খেয়াল করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের বনকর্তারা। তাই ২০০৮ থেকেই বালুঘাটায় হলদি নদীর তীরে প্রায় দু’শো হেক্টর ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে গড়ে তোলা হয়েছে। এ বার আবার ঝিকুরখালিতে হুগলির তীরে প্রায় বিশ হেক্টর জমিতে কাকড়া-বাইনের পাশাপাশি সুন্দরী, গোলপাতা গাছও লাগানো হয় পরীক্ষামূলক ভাবে। ডিএফও নিতাই সাহা বলেন, “হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেশি। তাই এই উদ্যোগ।”

স্মরণের লগ্ন

কখনও এক গোছা গল্প, কখনও কবিতার গোছা। এক জায়গায় জড়ো হয়ে পাঠ আর যতিচিহ্নের মতো এক-একটি সংখ্যা প্রকাশ। গত ৩৫ বছর ধরে এ ভাবেই টুকটুক করে লগ্নউষা পত্রিকার ৪৬টি সংখ্যা বেরিয়েছে বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে। প্রবন্ধ-নিবন্ধ এসেছে, এসেছে স্মৃতিকথন। কিন্তু ভরকেন্দ্রে সব সময়ে থেকে গিয়েছে মৌলিক সাহিত্যের অনর্গল উচ্চারণ। সাম্প্রতিক সংখ্যাটিকে অবশ্য বলা চলে স্মরণ সংখ্যা। যার কেন্দ্রে জেলারই এক কবি— প্রয়াত দীপ সাউ। তাঁর লেখালেখি, জীবন, কবিতা-গল্পের বই, নিজের আঁকা প্রচ্ছদ সবই ধরা রয়েছে। শেষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও মোহন সিংহ খাঙ্গুরাকে নিয়ে দু’টি সংক্ষিপ্ত ক্রোড়পত্রও। প্রচ্ছদে দ্বিতীয় ক্রোড়পত্রটির উল্লেখ নেই কেন, তা অবশ্য অজ্ঞাতই রয়ে গেল।

নদিয়া নাট্য

বাংলা নাটকের প্রাচীন রূপে শ্রীচৈতন্যের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। নবদ্বীপে যাত্রা ও মঞ্চাভিনয়ের প্রথম চেষ্টা করেছিলেন শ্রীচৈতন্যই। আধুনিক কালে কৃষ্ণনগর কলেজের ছাত্রেরা কৃষ্ণনগরে নাট্যচর্চা চালিয়ে গিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও তো কৃষ্ণনাগরিক। সুতরাং নদিয়ায় যে নাট্যচর্চা রমরমিয়ে চলবে তাতে আর সন্দেহ কি! কিন্তু সেই চর্চার তেমন আঞ্চলিক ইতিহাস ছিল না এ পর্যন্ত। এ বার নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, কল্যাণী, চাকদহ প্রভৃতি জায়গার নাট্যচর্চার তথ্যভিত্তিক খতিয়ান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে নদিয়ার নাট্যচর্চা সেকাল একাল। চিত্ত ভাদুড়ির লেখা বইটির প্রকাশকও নবদ্বীপের জয়া প্রকাশনী।

মামলা-বিপ্লব

তাপস পাল থেকে আবু আয়েশ মণ্ডল। কেউ ছাড় পাচ্ছেন না। বেচাল করলেই মামলা ঠুকে দেবেন তিনি। নিজে আইনজীবী নন, বরং গাঁটের কড়ি খরচ করে উকিল লাগাতে হয় তাঁকে। তবু তিনি অক্লান্ত। কলকাতা থেকে হুগলি, সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগনা, কখনও হাওড়া মামলার মানচিত্রে ফাঁক রাখতে চান না বিরাটির বিপ্লব চৌধুরী। শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০০ সালে। তখন বাম জমানায় উত্তর দমদম পুর এলাকায় নিকাশি নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন নাগরিকেরা। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ নাকি আমলই দিতে চাননি। ভোগান্তি চলছিলই। শেষমেশ শাসকদলের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে বিপ্লব মামলা লড়েন। তাঁর কোনও দল নেই, নির্দিষ্ট রাজনীতিও নয়। কোনও ঘটনায় নাড়া খেলে স্থান-কাল-পাত্রও তিনি বিচার করেন না। চেনা অচেনা দেখেন না। নদিয়ায় তাপস পালের ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব’-বাণী প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় গোলমাল পাকিয়ে তৃণমূল নেতা আবু আয়েশও ছাড় পাননি। বিপ্লব ছুটেছেন ডানকুনি থানায়। তাঁর দর্শন “তবু তো বিচারের দরজায় কড়া নাড়া গেল! হোক না আমার ছুটোছুটি-খাটাখাটনি।” ইদানীং বন্ধু-পরিচিতেরা কেউ-কেউ আড়ালে-আবডালে তাঁকে ‘মামলাবাজ বিপ্লব’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন। নিন্দুকে তো কত কি-ই বলে, তাতে কি তিনি দমার পাত্র?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE