আয়কর দফতরের ট্রাইব্যুনালের একটি শাখা উত্তরবঙ্গে চালু করার দাবি উঠল আইনজীবীদের পক্ষ থেকে।
এই দাবিতে জনমত তৈরির কাজে নেমেছেন উত্তরবঙ্গের কর সংক্রান্ত কাজকর্মে যুক্ত আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন। মূলত শিলিগুড়ি থেকে দাবি উঠলেও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার আইনজীবীরা তাতে সামিল হয়েছেন। ইতিমধ্যে আয়কর কমিশনারের কাছেও আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দরবার করা হয়েছে।
তাঁদের অভিযোগ, শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর কয়েকশো কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নীতির কারণে সরকারিভাবে অনেক কম আয়কর আদায়ের হিসেব লিপিবদ্ধ হচ্ছে। ফলে গুরুত্ব কমে যাচ্ছে এখানকার আয়কর অফিসের। তার চেয়েও বড় কথা, টিডিএস বা যে কোনও ছোট সমস্যাতেও বিচারের দাবিতে কলকাতা ট্রাইব্যুনালে ছুটতে হচ্ছে করদাতাদের। এই সমস্যা সমাধানের জন্য উত্তরবঙ্গে অবিলম্বে একটি ট্রাইব্যুনাল চাই বলে দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি যুক্তিযুক্ত বলে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশও। উত্তরবঙ্গে ট্রাইব্যুনালের অফিস করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। প্রয়োজনে তিনিও বিষয়টি নিয়ে দরবার করবেন বলে জানান তিনি।
গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত জরুরি দাবি। এ বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’ শিলিগুড়ি ইনকাম ট্যাক্স কমিশনার প্রবীণ কুমারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি বিস্তারিত জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
নর্থবেঙ্গল ট্যাক্সেশন জয়েন্ট অ্যাকাশন কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জীব চক্রবর্তী জানান ৫০ লক্ষ টাকার বেশি যাঁর বার্ষিক আয়, তাঁর আয়করের ফাইল স্থানীয় অফিসে জমা হয় না। তা মূল্যায়ন করার জন্য চলে যাচ্ছে কলকাতা অফিসে। ফলে আয়করের হিসেব থেকে কর জমা সমস্তই হচ্ছে কলকাতা অফিসে। সুতরাং সেই ব্যবসায়ী শিলিগুড়িতে যত টাকারই ব্যবসা করুক তার কর জমার হিসেব কলকাতাতেই হবে। তাঁর দাবি ‘‘এটা হওয়া উচিত নয়।’’
শিলিগুড়ি ট্যাক্স অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অঞ্জন কাহালি জানান, সমস্যা একটা নয়, এর সঙ্গে টিডিএস জমার সমস্যাও রয়েছে। টিডিএসের যে টাকা এ রাজ্যে প্রাপকদের প্রাপ্য থেকে কাটা হয়, তাও বেঙ্গালুরুতে আদায় হয়। অথচ গ্রাহকের প্রাপ্য টাকা দিতে হয় স্থানীয় আয়কর অফিসকেই। এতেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই ইনকাম ট্যাক্স কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছি। তা কমিশনার খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনে নামার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছি।’’
জানা গিয়েছে, কোনও ট্রাস্টের অর্থ দান করলেও তা ছাড়ের ব্যাপারে অযথা হয়রানি হতে হচ্ছে। কলকাতা থেকে অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে হয় বলেও অভিযোগ আইনজীবীদের। শিলিগুড়ি ট্যাক্সেসন বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মানস ধরও হয়রানির বিষয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। শুধু ট্রাইব্যুনালও নয় সঙ্গে আয়কর সংক্রান্ত অনেক কাজই উত্তরবঙ্গে করার ব্যবস্থা করা হলে সুবিধে হবে বলে দাবি তাঁদের।
শিলিগুড়ি আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও সিকিম মিলিয়ে বছরে আড়াইশো কোটি টাকার আয়কর আদায় হয়। বাকি উত্তরবঙ্গে অঙ্কটা প্রায় সত্তর থেকে পঁচাত্তর কোটি টাকার মত। উত্তরবঙ্গ তথা শিলিগুড়িতে আয়কর সংক্রান্ত কাজে এই অঙ্ক দ্বিগুণ বাড়তে পারে বলে দাবি সঞ্জীববাবুদের।
নর্থবেঙ্গল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রুয়ালও উত্তরবঙ্গে আয়কর ট্রাইব্যুনালের শাখা চালু করার পক্ষে সরব হন। তিনি বলেন, ‘‘ অল্প টাকার আয়কর সংক্রান্ত মামলা লড়তে কলকাতায় যেতে হচ্ছে। তাতে স্থানীয় উকিল নিয়ে যেতে হয়। উকিলের যাতায়াত সহ আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে বহু টাকা খরচ হয়ে যায়। শিলিগুড়ি বা উত্তরবঙ্গে ট্রাইব্যুনালের শাখা হলে তাতে উপকৃত হবে সকলেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy