Advertisement
১০ মে ২০২৪

কলেজের জমি হস্তান্তর ঘিরে বিতর্ক কোচবিহারে

রাজাদের আমলে তৈরি ও পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া সংস্কৃত কলেজ চত্বরের জমি হস্তান্তর নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে কোচবিহারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিত্যক্ত সংস্কৃত কলেজ ভবন চত্বরের জমির একাংশ সম্প্রতি ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সংস্কৃত কলেজের কলেজের পরিত্যক্ত ভবন। —নিজস্ব চিত্র।

সংস্কৃত কলেজের কলেজের পরিত্যক্ত ভবন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩০
Share: Save:

রাজাদের আমলে তৈরি ও পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া সংস্কৃত কলেজ চত্বরের জমি হস্তান্তর নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে কোচবিহারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিত্যক্ত সংস্কৃত কলেজ ভবন চত্বরের জমির একাংশ সম্প্রতি ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

২০০৭ সালে প্রথম ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্রী আবাস তৈরির জন্য জমি দেওয়ার প্রস্তাব পাঠায় প্রশাসন। দীর্ঘদিন ওই উদ্যোগ ফাইল বন্দি ছিল। মহিলা কলেজে ছাত্রী সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও স্থানাভাবে পরিকাঠামোর উন্নয়নে সমস্যা দেখা দেয়। তখন ফের ওই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের তোড়জোড় শুরু হয়। এবং সম্প্রতি পরিত্যক্ত সংস্কৃত কলেজের প্রায় ১১ কাঠা জমি ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা কলেজকে হস্তান্তরের সবুজ সংকেত দেয় রাজ্য সরকার। ওই হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিরোধিতার পাশাপাশি সংস্কৃত কলেজ চালুর দাবিতে ইতিমধ্যে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের দাবি,জমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া মানুষের চাহিদা মেনে হয়েছে।

কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “ওই জমি হস্তান্তরের নির্দেশ এসেছে বলে শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন।” ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জরী বিশ্বাস বলেন, “আমাদের ছাত্রী সংখ্যা তিন হাজার। অথচ কলেজে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সংস্কৃত কলেজ ভবন ও লাগোয়া জমির বাইরে থাকা প্রায় ১১ কাঠা জমি কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে ছাত্রী আবাস ও সংস্কৃতর স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালুর জন্য ভবন নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে।”

১৯৫৭ সালে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের আমলে তৈরি হয়েছিল ওই কলেজটি। কিন্তু সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। কমতে থাকে শিক্ষকের সংখ্যাও। ১৯৯৬ সাল থেকে বন্ধই হয়ে যায় ওই সংস্কৃত কলেজ। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে অসামাজিক কাজের আসর বসছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রায় দুই দশক ধরে পঠন-পাঠন বন্ধ থাকায় কলেজ ভবনটিরও এখন ভগ্নপ্রায় দশা। ঝোপ, অগাছায় ঢাকা পড়েছে একসময়ের জমজমাট ওই কলেজ ভবন। জেলার বিভিন্ন কলেজে সংস্কৃত নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশুনায় আগ্রহীদের ভিড় থাকলেও আগের বাম কিংবা বর্তমান তৃণমূল কোনও সরকারই এই কলেজটি চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। উল্টে সংস্কৃত কলেজের জমি অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এই সব কিছু জানিয়ে নভেম্বর মাসে রাজ্যপালকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপি পাঠায় বিজেপি। রাজভবনের ডাক পেয়ে গত বুধবার দলের প্রতিনিধিরা কলকাতায় যান। প্রতিনিধি দলে বিজেপির জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে, প্রাক্তন জেলা সভাপতি নিত্যানন্দ মুন্সি সহ ৫ জন সদস্য ছিলেন। বিজেপির জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “কলেজ চালুর পাশাপাশি সেখানকার জমি অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিরোধিতার কথা রাজ্যপালের কাছে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।” তবে ওই বিরোধিতা আমল দিতে চাইছে না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি পাল্টা বলেন, “বাম আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই কলেজের খানিকটা জমি কাজে লাগিয়ে মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ সংস্কৃত পাঠ্যক্রম চালুর পরিকাঠামো তৈরি করবেন। এতেই তো মানুষের দাবি পূরণ হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cooch behar land transfer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE