Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতিপূরণের আগেই কেন ভাঙা হল দোকান, ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের

ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আগেই অনেকের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যে হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তাও দেওয়া হচ্ছে না। এশিয়ান হাইওয়ে তৈরির ক্ষেত্রে রাস্তা চওড়া করার জন্য শিলিগুড়ির তিনবাতি মোড় থেকে উড়ালপুল এলাকার উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের একাংশ শুক্রবার এমনই নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৭
Share: Save:

ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আগেই অনেকের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যে হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তাও দেওয়া হচ্ছে না। এশিয়ান হাইওয়ে তৈরির ক্ষেত্রে রাস্তা চওড়া করার জন্য শিলিগুড়ির তিনবাতি মোড় থেকে উড়ালপুল এলাকার উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের একাংশ শুক্রবার এমনই নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, যাঁদের ত্রিপল টাঙানো দোকান ছিল, তাঁদের কেউ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অথচ বড় দোকান ঘর রয়েছে এমন অনেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি। তাই তাঁরা ফের আবেদন করছেন বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায়। অভিযোগ, বুধবার টোকেন মেলার পর অনেকেই ওই দিন বিকেলে ক্ষতিপূরণের চেক পেয়েছেন। বিকেলে মাইকিং করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরে যেতে বলা হয়। অথচ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন দোকান, ঘর ভেঙেছে প্রশাসন। এ দিন তা নিয়েও এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাস্তা তৈরির কাজের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র নির্মল মণ্ডল বলেন, ‘‘বুধবার যাঁরা টোকেন পেয়েছেন তাঁদের দোকান ভাঙা হয়নি। সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আগে যাঁরা টোকেন পেয়েছিলেন, চেক আনতে যাননি এমন কিছু ব্যবসায়ীর দোকানের পরিকাঠামো ভাঙা হতে পারে।’’ তিনি জানান, সব মিলিয়ে ওই অংশে ১২৮৮ জন ব্যবসায়ীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কারও কোনও সমস্যা থাকলে অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার পরেই ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। এখনও জনা তিরিশ ব্যবসায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। বিভিন্ন কারণে সে সব আটকে রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যাঁর নামে ছিল তিনি মারা গিয়েছেন। কেউ দোকানের জন্য ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তার পরেও আরেকটি দোকান স্ত্রী বা পুত্রের নামে দেখিয়েছেন। সে সব কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে তা মেনেই দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের কয়েক জন জানান, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সমীক্ষা করে গিয়েছিল নির্মীয়মাণ সড়ক কর্তৃপক্ষ। তবে যখন ব্যবসায়ীদের হাতে টোকেন দেওয়া হচ্ছে তখন তাঁরা বুঝতে পারেন ক্ষতিপূরণ পাবেন। কত টাকা পাবেন তা রাজগঞ্জ ব্লক অফিসে গিয়ে চেক পেলে তবেই বুঝতে পারছেন। রাজগঞ্জের বিডিও নরবু ছেওয়াং শেরপা বলেন, ‘‘মাস খানেক আগে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের জন্য মোট ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি। এশিয়ান হাইওয়ে অথরিটি আমাদেরকে যাঁদের নামের তালিকা দিয়েছিল তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।’’

ব্যবসায়ী অনিল মণ্ডলের অভিযোগ, তাঁর দুই ছেলে বিষ্ণু এবং রাজুর গ্যারেজ ছিল। তা ভাঙা পড়েছে অথচ তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি। যুগল সরকারের অভিযোগ, তিনি বুধবার টোকেন পেয়েছিলেন ক্ষতিপূরণ নেওয়ার জন্য। সেই মতো বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরণের টাকা আনতে গিয়েছিলেন। ফিরে দেখেন তাঁর সোনার দোকান ভাঙা পড়েছে। দোকানের জিনিসপত্র আগেই সরিয়ে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন ক্ষতিপূরণের চেক পেলে শোকেস সরাবেন। তিনি বলেন, ‘‘লোকজন দোকান ভাঙতে এলে স্ত্রী জানিয়েছিলেন চেক আনতে গিয়েছে। কিন্তু ওরা কথা শোনেনি।’’ এলাকার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী বুধবার টোকেন পান। বৃহস্পতিবার তাঁরও দোকানের একাংশ ভাঙা হয়। পরে অবশ্য তাঁকে বাকি অংশ ভাঙার ক্ষেত্রে সময় দেওয়া হয়েছে। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে উড়ালপুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জিতেন মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা এক দিন অপেক্ষা করতে বললেও তাঁরা কোনও কথা শোনেননি।’’

ব্যবসায়ী বিকাশ সরকার, বাবলু মণ্ডলদের দাবি তাঁরা যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে তা যথাযথ নয়। বিকাশবাবুর বাবা রাইচরণ সরকারের অভিযোগ, ‘‘ত্রিপল টাঙিয়ে বা দোকান ভাড়া নিয়ে কারবারীরা অনেকে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। অথচ আমাদের দোকান ঘর থাকলেও আমরা ওই টাকা পেলাম।’’ উড়ালপুলের নিচে কামরাঙাগুড়ির দিকে দোকান ছিল ভারতী রজকের। তিনি ভাড়া নিয়ে কারবার করতেন। ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৩ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE