তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সভাপতি নান্টু পালের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর গাড়ি দুর্ঘটনায় ২ কিশোরের জখম হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বাঁধছে।
গত মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি সেবক রোডে একটি বাইককে ধাক্কা মারে শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর বিলাসবহুল গাড়ি। দুর্ঘটনার কিছু আগে ওই গাড়িটিকে শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে দেখা গিয়েছিল। নান্টুবাবু এবং ব্যবসায়ী মহেন্দ্র সিঙ্ঘল দু’জনকেই গাড়ি থেকে নামতে দেখা গিয়েছিল। ইতিমধ্যে গত শুক্রবার শিলিগুড়ি আদালতে আত্মসর্মপণ করে গাড়ি চালক কুমার থাপা জামিন পেয়েছেন। দুর্ঘটনার সময়ে কুমারই গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে ব্যবসায়ী মহেন্দ্রবাবুর দাবি।
যদিও গাড়িচালক কুমার থাপা দাবি করেছেন, তিনি নান্টুবাবুকে ‘চেনেন না’। গাড়ি চালক কুমারবাবু জানিয়েছেন তিনি এক দশকেরও বেশি সময় সময় ধরে মহেন্দ্রবাবুর গাড়ি চালাচ্ছেন। মহেন্দ্রবাবুর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা নান্টুবাবুকে গাড়িচালকের না চেনার কথা নয় বলে তৃণমূলের একাংশ কর্মীরাই দাবি করেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগেও একাধিকবার ভোটের কাজ বা অনান্য কাজে মহেন্দ্রবাবুর গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে নান্টুবাবুকে। সে কারণেই গাড়ি চালকের তাঁকে কেন চেনেন না বলে দাবি করেছেন তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে।
রহস্য তৈরি হয়েছে, গাড়িটি কোথা থেকে আসছিল তা নিয়েও। রাত দশটা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে বলে গাড়ি চালক দাবি করেছেন। যদিও, রাত ন’টা নাগাদ গাড়িটিকে সার্কিট হাউসে দেখা গিয়েছে বলে দাবি। চালকের দাবি, সার্কিট হাউস থেকে ঘণ্টাখানেক আগে ফিরে গাড়ি নিয়ে শক্তিগড়ে ব্যবসায়ীর এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। ফেরার পথে শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের দিকে যাওয়ার সময়ে বাঁক ঘুরতেই সেবক রোডে দুর্ঘটনা হয়। ঠিক কোথা থেকে গাড়িটি ফিরছিল তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কেন রাস্তায় নানা এলাকায় থাকা ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
দুর্ঘটনার পরে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি নিয়ে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন আত্মসমর্পণকারী চালক কুমারবাবু। গত মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার পরে সেবক রোডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাসিন্দারা ভিড় করেন। সেই ভিড় থেকেই কয়েকজন এগিয়ে এসে তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় অক্ষত অবস্থায় গাড়ি নিয়ে চলে আসতে পেরেছিলেন।
কুমারবাবু বলেন, “খুব আস্তেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। রাস্তার মোড় ঘোরার সময়ে একটি বাইকে ধাক্কা লেগে যায়। আমার কোনও দোষ ছিল না। এর পরে ভিড় হয়ে যায়। সে সময়েই কয়েকজন এগিয়ে এসে গাড়ির দোষ নেই বলে আমার পাশে দাঁড়ায়। ওদের জন্যই গাড়ি নিয়ে ফিরতে পারি।” ঘটনার সময়ে কে বা কারা তাঁর ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছিল তা অবশ্য চিনতে পারেননি বলে কুমারবাবু দাবি করেছেন। তবে, দুর্ঘটনার পরেই গাড়ির দোষ ছিল না বলে কারা এগিয়ে গিয়েছিলেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর মুহূর্তেই কী ভাবে গাড়িচালক না বাইক চালক কার দোষ ছিল তাও কী ভাবে বিচার করা সম্ভব হল সে প্রশ্ন উঠেছে। কেন ওই ব্যক্তিরা সক্রিয় হলেন, কার নির্দেশে গাড়িটি সরাতে তারা উদ্যত হলেও তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর নান্টু পাল দাবি করেছিলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনিও ঘটনাস্থলে যান। জখমদের তিনিই হাসপাতালে ভর্তি করান বলে দাবি করেছেন। প্রতক্ষ্যদর্শীদের একাংশের অভিযোগ দুর্ঘটনার সময়ে গাড়িতে নান্টুবাবু এবং মহেন্দ্রবাবু দু’জনেই ছিলেন। সে কারণেই ‘অস্বস্তি’ এড়াতে নান্টুবাবুই গাড়িটি সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নান্টুবাবুর কথায়, “প্রভাব খাটানোর কোনও বিষয়ই নেই। গাড়িতেও আমি ছিলাম না। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মানবিক কারণেই সেখানে যাই। রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয় করতেই চক্রান্ত চলছে।’’ ব্যবসায়ী মহেন্দ্রবাবুরও দাবি, “যখন দুর্ঘটনা হয়েছিল, তখন চালক কুমার ছাড়া আর কেউ ছিল না। আমার বা নান্টুবাবুর গাড়িতে থাকার যে কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
গত মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার পরেও প্রথমে পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার জখমদের পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের করার পরে মামলা শুরু হয়। শিলিগুড়ি অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “তদন্ত চলছে। আদালতে এ বিষয়ে একটি রিপোর্টও দেওয়া হবে। আদালত নির্দেশ দিলে ওই রাস্তার মোড়ে থাকা সিসিটিভি ফুটেজও জমা দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy