Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঘাড়ের কাছে বাম, কর্তৃত্ব বাড়াতে মরিয়া তৃণমূল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘শিলিগুড়ি আমার চাই।’ দলনেত্রীর এই কথা শোনার পরে রীতিমতো চাপে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন বামেরা। প্রচারের সঙ্গে প্রতিরোধ বাড়ানোর ডাকও দিচ্ছেন তাঁরা, যে ডাকে সাড়া দিয়েছে বাকি বিরোধী দলগুলি। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি পুরভোটে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব কায়েম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল। আর তাতেই আশঙ্কা বাড়ছে রক্তপাতের।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৯
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘শিলিগুড়ি আমার চাই।’ দলনেত্রীর এই কথা শোনার পরে রীতিমতো চাপে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন বামেরা। প্রচারের সঙ্গে প্রতিরোধ বাড়ানোর ডাকও দিচ্ছেন তাঁরা, যে ডাকে সাড়া দিয়েছে বাকি বিরোধী দলগুলি। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি পুরভোটে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব কায়েম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল। আর তাতেই আশঙ্কা বাড়ছে রক্তপাতের।

শাসক দল কতটা মরিয়া, তার ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছে এর মধ্যে। শহরের ব্যবসায়ী এবং সরকারি চাকুরেদের একাংশকে আড়ালে-আবডালে শাসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভোটের ফল খারাপ হলে তাঁদের দেখে নেওয়া হবে— এমন হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

শুধু তা-ই নয়, কলকাতার ১০৯ নম্বর বুথে যা ঘটেছে, সেই কায়দায় শিলিগুড়ির সংযোজিত এলাকার কিছু ওয়ার্ডে ‘কর্তৃত্ব’ দেখাতে তৃণমূল বিশেষ বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, সংযোজিত এলাকায় যে হেতু প্রচারের আলো কম, সে জন্য ১৭টির মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডে বাছাই বাহিনী নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে শাসক দল। বামেদের অভিযোগ, এক একটি এলাকায় অন্তত দু’টি করে বুথে ‘নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব’ বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বাহিনীকে। ঘটনাচক্রে, সংযোজিত এলাকা পড়ে তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা এলাকায়। সেখানে ফল এদিক-ওদিক হলে গৌতমবাবুকে দলনেত্রীর রোষের মুখে পড়তে হতে পারে। বাম ও কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের অভিযোগ, সে জন্য শিলিগুড়ির ভোটের ঐতিহ্যের বিষয়টি শিকেয় তুলে যে ভাবে হোক সংযোজিত এলাকার দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল।

ঘটনা হল, মঙ্গলবারই বামেদের তরফে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার কাছে লিখিত ভাবে কয়েকটি ওয়ার্ডের নাম লিখে বুথ দখলের আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। তবে যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন গৌতমবাবু। এমনকী, কোথাও অন্যায় হচ্ছে দেখলে তিনি ‘খবর পেলে নিজে গিয়ে’ প্রতিরোধ করবেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মিথ্যে রটনা করা বাম-কংগ্রেস-বিজেপির স্বভাব। শিলিগুড়ির মানুষ শান্তিপ্রিয়। এখানে কেউ অশান্তি করার চেষ্টা করলে আমি নিজে রুখে দাঁড়াব।’’

বিরোধীরা কিন্তু গৌতমবাবুর এই কথায় ভুলছেন না। প্রায় চার বছর কংগ্রেসের মেয়র পুরবোর্ড চালিয়েছেন। এ বারে সেই দলের দাবি, তৃণমূল মরিয়া হয়ে আরও কী কী কাণ্ড ঘটাচ্ছে, সেই অভিযোগ শহরের বাতাসে ভাসছে। যেমন, উত্তরবঙ্গের অন্যতম বাণিজ্যনগরী হিসেবে পরিচিত শিলিগুড়িতে ব্যবসায়ীদের একাংশকে বাছাই করে ভয় দেখানো, ধমকানোর অভিযোগ বাড়ছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, ‘‘কোথাও ব্যবসায়ীদের তরফে কয়েক জন বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন আঁচ করে তাঁদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, ‘ভবিষ্যতে সেলস ট্যাক্স’-এর হানা হলে কে সামাল দিতে পারবে?’ কোথাও আবার ব্যবসায়ীকে আলোচনার নামে ডেকে নিয়ে জবরদস্তি ২টি কিংবা ৩টি বুথের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, বামেরাও শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের এই ভাবেই ভোটে সামিল করাতো।

যদিও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অশোকবাবুর দাবি, ‘‘আমরা কখনও ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাইনি। এখন তৃণমূল জমানায় তাঁরা কতটা ভয়ে থাকেন, সেটা অনেকেই আমাকে একান্তে দুঃখ করে বলে থাকেন। এখন তাঁদের ভয় দেখিয়ে ভোটের কাজে সামিল করানোর অভিযোগও শুনছি।’’ বিজেপির সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রাও দু’দিন ধরে নানা ওয়ার্ডে ঘুরে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়ার নানা অভিযোগ শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। কংগ্রেস-বিজেপির তরফে পুলিশের কাছে সব বিষয়েই অভিযোগ জানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এমন নানা অভিযোগ পুলিশের নানা মহলে পৌঁছেছে। অভিযোগকারীদের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কতটা কী করা যাবে, তা নিয়ে পুলিশের অন্দরেই দ্বিমত রয়েছে।

এক পক্ষ মনে করছেন, পুলিশ নিরপেক্ষ থাকলে কলকাতার মতো অভিযোগ হয়তো উঠবে না। কিন্তু, ভোটের ফল শাসক দলের অনুকূলে না গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের একাংশ পরে কোপের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে পুলিশ মহলেই। ফলে, স্রেফ মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শাসক দলের চক্রান্তের নালিশ মানার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন পুলিশের একাংশ।

অন্য পক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, পুলিশ সক্রিয় থাকায় ভোট প্রক্রিয়া শুরুর পরে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গে বড় মাপের কোনও গোলমাল হয়নি। সে ক্ষেত্রে ভোটের দিনও তেমন গোলমাল যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তাঁরা। তবে আইন মতে চলতে গেলে কে জয়রামনের মতো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সেই ভয়ে হাত গুটিয়ে থাকবেন অতি সক্রিয় অফিসারদের একাংশ?

সব মিলিয়ে ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, শিলিগুড়িতে ততই গাঢ় হচ্ছে আশঙ্কার মেঘ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE