এইএস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। —নিজস্ব চিত্র।
অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে (এইএস) আক্রান্ত হয়ে ফের এক রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম সহেরা বানু (২০)। তিনি জলপাইগুড়ির তালমার বাসিন্দা। খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ২৩ জুলাই ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। এ দিন তিনি মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
এই নিয়ে এ বছর জানুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেই বা এইএস-এ মৃত্যু হল ৪১ জনের। জুলাই মাসে গত ২৫ দিনে ২৮ জনের মৃত্যু ঘটল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘জেই রোগে ৪০ শতাংশের বেশি মৃত্যুর হার। বিষয়টি দুর্ভাগ্যের। রোগ সংক্রণ ঠেকাতে টিকাকরণ ছাড়া উপায় নেই। বছরভর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
অন্যদিকে এ দিন জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে শহরের একটি নার্সিংহোমে এক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে জানানো হয়। ওই রোগীর রক্তের নমুনা পাঠাতে বলেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন ওই রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ১৫ জন এইএস বা জেই আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে জেই, এইএস ওয়ার্ডে রয়েছেন আট জন। শিশু বিভাগে দু’জন। সিসিইউ’তে রয়েছে চার জন এবং মেডিসিন বিভাগে এক জন। পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গে দুই দফায় এ দিন কথা বলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেধকই ভরসা বলে তিনি জানান। তবে দেশের মধ্যে এ বছরই প্রথম ওই টিকা উত্তরবঙ্গের আটটি ব্লকে দেওয়া হয়েছে। আরও একটি ব্লকে ওই টিকাকরণের কাজ চলছে। কেন্দ্রের তরফে টিকা পাঠানো হয়। তাই দিল্লিকে চাপ দিয়ে পর্যাপ্ত প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করতেই হবে বলে জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিষেধক দেওয়া এই রোগ সংক্রমণ ঠেকানোর উপায়। বছরভর সমস্ত জেলাগুলিতে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সে ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছ থেকে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক টিকা যাতে আনা যায় তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’
তবে কোন জেলায় কত রোগী রয়েছে জেলাগুলি থেকে ওই তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট এখনও তৈরি হয়নি। গত বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে রিপোর্ট তৈরির কথা জানিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে তা করতে এ দিন জানিয়েছেন। হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার করতে পূর্ত দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি জানান, অগস্ট মাসে হাসপাতালের ক্যাম্পাসে সুলভ শৌচালয় চালু করা হবে। সেপ্টেম্বরে রোগীর আত্মীয়দের জন্য প্রতিক্ষালয় উদ্বোধন হবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন হস্টেলতৈরির কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। শীঘ্রই সীমানা প্রাচীর, গেট তৈরি কাজ হবে। অডিটোরিয়াম, লেকচার থিয়েটার তৈরির কাজও চলছে।
দিন দুয়েক আগেই মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার তরফে ১ সেপ্টেম্বরের পর যে কোনও দিন পরিদর্শনের কথা জানানো হয়েছে। ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির পরিকাঠামো সমস্ত গড়ে উঠেছে কি না তা তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। এ বছরও ১৫০ আসনের অনুমোদন পেতে বেগ পেতে হয়েছে। কেন না শিক্ষক-অধ্যাপকের সংখ্যা এবং পরিকাঠামোর কিছু ঘাটতি ছিল। সমস্যা মেটাতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, পরিকাঠামোগুলি তৈরি হচ্ছে বলে রিপোর্ট দিয়ে বিষয়টি এ বছর বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy