সভায় সমরেশ। —নিজস্ব চিত্র।
বছর দশেক আগেও বন দফতর থেকে জ্বালানি কাঠ মিলত। সেই সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর শ্রমিকদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। ঝড়ে ভেঙে যাওয়া গাছ বা পুরনো চা গাছ উপড়ে শ্রমিকদের সরবরাহ করা হলেও, চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি। শ্রমিক-বিক্ষোভের হাত এড়াতে ফলে মালিকেরা বাগান লাগোয়া সরকারি পতিত জমিতে গাছ রোপণ করে জ্বালানির সমস্যা মেটানোর প্রস্তাব দিলেন। শনিবার সন্ধেয় বীরপাড়ায় ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিপিএ) ৬৬ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আইটিপিএ-এর চেয়ারম্যান সীতারাম কল্যাণী বলেছেন, “বাগান লাগোয়া বন দফতর এবং অনেক সরকারি খাস জমি পতিত পড়ে রয়েছে। সে সব জমিতে চারা রোপণ করে জ্বালানির সমস্যা দূর করা সম্ভব। রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে।”
জ্বালানির সঙ্গেই শ্রমিকেরা বাগান কর্তৃপক্ষের থেকে ৪০ পয়সা কেজি দরে ফি সপ্তাহে ৩ কেজি ২৬০ গ্রাম চাল, গম রেশন হিসেবে পেয়ে থাকেন। এর ১ কেজি ৭৫০ গ্রাম খাদ্য বণ্টন দফতরের কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে তাঁদের কিনতে হয়। বাকি অংশ তাঁদের খোলা বাজার থেকে কিনে শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়। এতে ব্যয় ভার যে ভাবে বাড়ছে, তাতে বাগানের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়ছে বলে মালিকরা অভিযোগ করেন। শ্রমিকদের বণ্টন করা রেশনের পুরো অংশ সরকার মালিকদের সরবরাহ করলে বাগানগুলি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মালিকরা জানান। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে তাঁরা আবেদনও করছেন বলে জানান। সীতারামবাবুর কথায়, “খোলা বাজারে খাদ্য দ্রব্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আমাদের প্রচুর টাকা ব্যয় হচ্ছে।”
শ্রমিকদের অনুপস্থিতির হারও বেড়েছে বলে মালিকদের তরফে দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে চা শ্রমিকদের মজুরি ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, এর থেকে দিন মজুরি করলে এক দিনে বেশি উপার্জন হয়। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেছেন, “এখন যে হারে মজুরি বেড়েছে তাতে শ্রমিক অনুপস্থিতির হার কমবে বলে মনে করি।”
মালিকদের সাধারণ সভায় এ দিন লেখক সমরেশ মজুমদারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সমরেশবাবুর কৈশর কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে। তাঁর লেখাতেও চা বাগান ও তাদের লোকজনের কথা বহু বার উঠে এসেছে। বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে সমরেশবাবু বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক আগের তুলনায় নিবিড়তর হয়েছে। আপনাদের সঙ্গে আমার দেখা হয় না। তবে আপনাদের সঙ্গে আমার একটি যোগসূত্র রয়েছে। তা হল, আপনারা চা বাগানের মানুষ, আর আমি চা বাগান নিয়ে লিখে বিক্রি করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy