উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির ব্যক্তিগত সহায়ক হৃদয়কুমার রায়। সভাধিপতির ঘরের উল্টোদিকেই তাঁর দফতর। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর দফতরে গিয়ে দেখা গেল তিনি কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত তিনি। জেলা পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে জানতে চাইতেই তিনি বলেন, “দয়া করে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। কোনও প্রশ্ন থাকলে জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিকের কাছে যান।”
বেলা পৌনে একটা। জেলা পরিষদের নির্বাহী আধিকারিকের কনফিডেনশিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট কাকলি পালকে পাওয়া গেল তাঁর দফতরেই। জেলা পরিষদ গৃহিত কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনিও বলেন, “কিছু বলতে পারব না! বারণ আছে। আধিকারিকদের কাছে যান।”
বেলা একটা। জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক বিনয় শিকদার নিজের চেম্বারে ব্যস্ত ছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। জেলা পরিষদের বিভিন্ন দফতরে কর্মীদের কেউ তখন গল্পে মশগুল, আবার কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে পরিচিতদের সঙ্গে কথায় ব্যস্ত। গুটি কয়েক কর্মীকে অবশ্য দেখা গেল কম্পিউটারের সামনে। সভাধিপতি, সহকারি সভাধিপতি সহ ১০ কর্মাধ্যক্ষের ঘর ফাঁকা। টানা দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করেও অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক বিনয়বাবুর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।
পরে তিনি টেলিফোনে বলেন, “বর্তমানে জেলা পরিষদের কোনও বোর্ড না থাকায় নতুন কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে না। তবে চালু প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। আগামী ২০ অক্টোবর নতুন সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতি নির্বাচন হওয়ার কথা।”
প্রথমে জেলা পরিষদের বামফ্রন্ট সদস্যদের একাংশের দলবদল ও পরে সিপিএমের সভাধিপতি লাডলি চৌধুরী ও আরএসপির সহকারি সভাধিপতি প্রফুল্লকুমার দেব সিংহের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁদের অপসারণের জেরে গত দুমাস ধরে জেলা পরিষদের সবরকম উন্নয়নমূলক কাজ থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে ডান বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। সিপিএম ১০টি, আরএসপি ২টি ও ফরওয়ার্ড ব্লক একটি আসন পায়। কংগ্রেস আটটি ও তৃণমূল পাঁচটি আসন দখল করে। গত ২২ অগস্ট সিপিএমের পাঁচ ও আরএসপির এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদেরকে নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মোট ১৭ সদস্য গত ১২ সেপ্টেম্বর সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তলবিসভায় সভাধিপতি ও ২৬ সেপ্টেম্বর সহকারি সভাধিপতি অপসারিত হন। সরকারি নিয়মে ভেঙে যায় জেলা পরিষদের বোর্ড।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, বর্তমানে জেলা পরিষদের ক্ষমতাসীন সদস্য সহ একাধিক কর্মাধ্যক্ষের অনুপস্থিতি ও দলবদলের জেরে গত তিনমাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের এক কোটি ৯০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। ওই টাকা দিয়ে জেলার ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৫০টি এলাকায় পাকা রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা। এছাড়াও পৃথক একটি প্রকল্পে ওই তহবিলেরই ছ’কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। ওই টাকায় জেলায় ১৩৯টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হওয়ার কথা। এছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে নলকূপ বসানো, নিকাশির উন্নয়ন, বৈদ্যুতিকরণ, রাস্তা ও সেতু মেরামতি,এবং পুকুর খনন ও সেচের উন্নয়নের কাজও থমকে রয়েছে।
রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় কোনও দলের নাম না করে বলেন, “জেলার উন্নয়নের স্বার্থই সবার প্রাধান্য দেওয়া উচিত। জেলার উন্নয়নের স্বার্থে তাড়াতাড়ি জেলা পরিষদের অচলাবস্থা কাটাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের উপযুক্ত পদক্ষেপ করা উচিত। শিক্ষার উন্নয়নের স্বার্থে কখনওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ আটকে থাকা উচিত নয়।” প্রায় দু’মাস ধরে জেলা পরিষদ অচল থাকায় আটকে গেছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। এর জেরে জেলার ৫০টিরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ও সদস্যদের প্রতিদিনই বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy