জলপাইগুড়ি হাসপাতালে আনা হয়েছে বিশ্বজিৎ রায়কে। তখনও তিনি বেঁচে। নিজস্ব চিত্র।
বিবাদের জেরে তিরবিদ্ধ করে এক যুবককে খুনের অভিযোগে গণপিটুনি দেওয়া হল এক ব্যক্তিকে। তিরের ঘায়ে জখম হয়েছেন আরও একজন। মৃত যুবকের নাম বিশ্বজিৎ রায়(২৫)। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ধুপগুড়ি থানার মাগুরমারি ২ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের নিরঞ্জনপাঠ গ্রামে।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “ঘটনায় একজন মারা গিয়েছেন। অভিযুক্ত নিখিল রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেও মারধরের কারণে আহত হওয়ায় পুলিশ পাহারায় জলপাইগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ঘটনাটি পারিবারিক বিবাদের জন্য ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গণেশ, বিশ্বজিৎ, রঞ্জিত এবং সঞ্জিত চার ভাই মিলে বাড়ি সংস্কারের কাজ করছিল। সেই সময় পাশের বাড়ির নিখিল রায় তাঁদের লক্ষ্য করে তীর ছোড়ে বলে অভিযোগ। প্রথম তিরটি গণেশের পেটে লাগে। পরের তীরটি বিশ্বজিতের পিঠ ফুঁড়ে বুকে ঢুকে যায়।
গণেশকে তখনই এলাকার একজন মোটর সাইকেলে বসিয়ে ধুপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসে। ধুপগুড়ি থেকে দমকল গিয়ে বিশ্বজিতকে ধুপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে দুজনকেই জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানে বিশ্বজিতকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
ধূপগুড়িতে গণপিটুনিতে আহত নিখিল রায়। নিজস্ব চিত্র।
গণেশের পেটের তিরটি বার করে তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত নিখিলকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয়। তাকে ধুপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে রেফার করা হয়। পুলিশ ধুপগুড়ি হাসপাতালেই তাকে গ্রেফতার করে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায় যে নিরঞ্জন পাঠ গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ রায়ের তিন ছেলে বিশ্বজিৎ, রঞ্জিত এবং সঞ্জিতের সঙ্গেই তাদের বাড়িতে থাকতো তাদের মাসতুতো ভাই গণেশ রায়। গণেশ বাংলায় এমএ পাশ করে বাড়িতে কোচিং সেন্টার খুলেছে। সেখানে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে।
বিশ্বজিত বিএ পাশ, রঞ্জিত এবার বিএ ফাইনাল দেবে। সঞ্জিত ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ছে। তিনজনই ধুপগুড়ি কলেজের ছাত্র। আগামী বুধবার গ্রামেরই এক তরুণীর সঙ্গে গণেশের বিয়ে। এই উপলক্ষে ঘরবাড়ির সংস্কার চলছিল। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে গণেশ জানায়, এ দিন সকাল থেকেই তাদের প্রতিবেশি নিখিল রায় কখনও হাতে দা, কখনও কাটারি নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। গণেশ বলেন, “হঠাৎই একটু দূর থেকে তীর ছোঁড়ে। প্রথম তীরটি আমার পেটে লাগে। পরের তীরটি পিঠ ফুঁড়ে ঢুকে যায় বিশ্বজিতের।”
তাদের প্রতিবেশি নিখিল মাঝে মাঝেই মদ্যপ অবস্থায় বচসা করত বলে অভিযোগ। তাতে গণেশের কোচিং সেন্টারে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটতো। আপত্তি জানালে সে খেপে যেত। এই নিয়ে অতীতেও দু’টি পরিবারের মধ্যে বচসা হয়। দু’বার গ্রামে সালিশি সভা হয় বলেও জানা গিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের উপস্থিতিতে সালিশি সভা বসলেও তা মানতে চাননি নিরঞ্জন পাঠ গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য আরতি রায়। তিনি বলেন, “দুটি পরিবারের মধ্যে বিবাদ ছিল। তবে বিবাদ মেটানোর জন্য কোন সালিশি সভা হয়নি।”
দীর্ঘদিন ধরে নিখিলের উপর ক্ষিপ্ত ছিল এলাকার মানুষ। আজ প্রতিবেশিকে তির বিদ্ধ করার পর বাসিন্দাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে ।
ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিখিল বলে, “আমাদের জমির সীমানা নিয়ে পুরনো বিবাদ আছে। ওরা সীমানা ঠিক করছিল না। সেই রাগে আমার দাদা মধু রায়ের বাড়ি থেকে লুকিয়ে তির নিয়ে আসি । ওদের গায়ে লাগবে ভাবিনি।” ধূপগুড়ি থানার আইসি ধ্রুব প্রধান বলেন, “সন্ধে পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে পুলিশ এলাকায় গিয়ে তদন্ত করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy