তৃণমূল কর্মীদের উচ্ছ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের তিনজন ও আরএসপির একজন কাউন্সিলরকে দলে টেনে বুধবার পুরাতন মালদহ পুরসভার সিপিএমের চেয়ারম্যান ও আরএসপির ভাইস চেয়ারম্যানকে অপসারিত করল তৃণমূল। এর ফলে নিবার্চনের মুখে পুরাতন মালদহ পুরসভা কার্যত দখল করল তৃণমূল। এ দিন পুরসভার চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা তলবি নিয়ে সভা হয়। পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক নন্দ কিশোর বলেন, “১০-০ ভোটে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান অপসারিত হয়েছেন। জেলাশাসককে সব জানানো হয়েছে। তিনিই নতুন বোর্ড গঠনের দিনক্ষণ ঠিক করবেন।”
ক্ষমতা হারানোর পর সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “২০১০ পুরসভা নিবার্চনে পুরাতন মালদহ পুরসভায় সবক’টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটি আসনেও তৃণমূল জিততে পারেনি। আজ দল ভাঙিয়ে তৃণমূল ১০ জন কাউন্সিলর জোগাড় করল। আগামী লোকসভা নির্বাচনে পুরাতন মালদহের মানুষ তৃণমূলকে এর জবাব দেবেন।”
সিপিএমের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “পুরাতন মালদহ পুরসভার চেয়ারম্যান দুর্নীতিগ্রস্থ। প্রতিবাদ করেও দুর্নীতিগ্রস্থ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা বামফ্রন্ট কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনজন সিপিএম ও একজন আরএসপির কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” তিনি জানান, এর আগে কংগ্রেসের ছ’জন কাউন্সিলার গনিখান চৌধুরীর পরিবারের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আগেই দল ছেড়েছেন। আমরা গণতান্ত্রিক পথেই সিপিএএমের চেয়ারম্যানকে অপসারিত করেছি।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১৮ আসন বিশিষ্ট পুরাতন মালদহ পুরসভায় ২০১০-এর নির্বাচনে সিপিএম ১০টি, আরএসপি দু’টি ও কংগ্রেস ছ’টি আসন পায়। সিপিএমের বিশ্বনাথ শুকুল চেয়ারম্যান ও আরএসপির রুমি আহমেদ ভাইস চেয়ারম্যান হন। মাস দু’য়েক আগে কংগ্রেসের ছ’জন কাউন্সিলর দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরেই তৃণমূল পুরাতন মালদহ দখল করার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সদ্য তৃণমূলে ঢোকা ছয় কাউন্সিলর ও আরএসপির কাউন্সিলর শ্যাম মণ্ডল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে পুর-চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিলেন।
নিয়ম অনুয়ায়ী চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে সভা ডেকে আস্থা প্রমাণ করতে হয়। ১৫ দিনের মধ্যে অনাস্থার সভা চেয়ারম্যান না ডাকলে সাত দিনের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যানকে সেই সভা ডাকতে হয়। ২২ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দু’জনের কেউই সভা না ডাকায় গত শনিবার তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর বুধবার দিন তলবি সভা ডেকে নোটিশ দেন। সভায় চেয়ারম্যান-সহ সিপিএমের ৭ জন ও আরএসপি ভাইস চেয়ারম্যান হাজির হননি। কিন্তু সভায় সিপিএমের স্বাধীন ঘোষ, শমিষ্ঠা গঙ্গোপাধ্যায়, মিনতি চক্রবর্তী ও আরএসপি শ্যাম মণ্ডল হাজির হয়েছিলেন। দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে বামফ্রন্টের আটজন কাউন্সিলর না আসায় ১০-০ ভোটে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে অপসারিত করে তৃণমূল, সিপিএম ও আরএসপির দশজন কাউন্সিলর। পুরসভার তৃণমূল নেতা বিভূতি ঘোষ বলেন, “নতুন বোর্ড গঠনের পরই বিশ্বনাথ শুকুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করব।”
চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান অপসারিত হওয়ার পরই পুরসভার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সিপিএমের দলত্যাগী কাউন্সিলরদের পক্ষে স্বাধীন ঘোষ বলেন, “চেয়ারম্যান দুর্নীতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে আমরা সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলাম।” আরএসপির কাউন্সিলর শ্যাম মণ্ডল বলেন, “চেয়ারম্যান গুটিকয়েক ওয়ার্ডে কাজ করছিলেন। উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। দল ও জেলা বামফ্রন্টের কাছে গত তিন বছরে সাতটি চিঠি দিয়েছি। উত্তর পাইনি।” এই প্রসঙ্গে অপসারিত চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ শুকুল বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। কী কাজ করেছি পুরাতন মালদহের মানুষই জানেন। তৃণমূল ভয় লোভ দেখিয়ে দল ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy