Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়, উন্নয়ন হয় না ভুটিয়াবস্তিতে

দুপুরেই দান শেষ ক্ষুদ্রতম ভোটকেন্দ্রে

দশ ভোটকর্মীর সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য ছিলেন অতিরিক্ত চার জন বন কর্মী। সঙ্গে ছিল পটকা, ক্যানেস্তারাও। জঙ্গলে ঘেরা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলাকালীন বুনো হাতির হানা ঠেকাতে প্রশিক্ষিত বনকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও, নির্বিঘ্নেই ভোট শেষ হয়েছে সাচাফু বস্তিতে।

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

দশ ভোটকর্মীর সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য ছিলেন অতিরিক্ত চার জন বন কর্মী। সঙ্গে ছিল পটকা, ক্যানেস্তারাও। জঙ্গলে ঘেরা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলাকালীন বুনো হাতির হানা ঠেকাতে প্রশিক্ষিত বনকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও, নির্বিঘ্নেই ভোট শেষ হয়েছে সাচাফু বস্তিতে। দুপুর দু’টোর মধ্যে বাসিন্দাদের সকলের ভোট দেওয়া হয়ে যায় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোটার রয়েছেন এই পোলিং বুথে। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ৬৩ জন। দুপুর দু’টোর মধ্যে ৫৪ জন বাসিন্দা ভোট দিয়েছেন। বাকি ন’জন কাজের সূত্রে ভিন রাজ্যে থাকায় তাঁরা ভোট দিতে আসতে পারেননি।

কুমারগ্রাম ব্লকের ময়নাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাচাফু বনবস্তি বা ভুটিয়া বস্তি শুধু আয়তনে বা ভোটার সংখ্যায় ছোট নয়, দুর্গমও বটে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের মাঝে এই ভোট কেন্দ্রে বন্যপ্রাণীদের হানার ঘটনাও নিয়মিত। দু’টি পাহাড়ি নদী ফাঁসখোয়া ও জয়ন্তী, এই এলাকাকে মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করেছে। এলাকায় নির্বিঘ্নে ভোট করতে প্রশাসন থেকে কেন্দ্রের বাইরে বনকর্মীদেরও পাহারায় রাখার ব্যবস্থা হয়। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “জেলার এই কেন্দ্রে সব থেকে কম ভোটার। চার দিকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ঘন জঙ্গল। দুর্গম ওই ভোট গ্রহণে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য বন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছিল। বন দফতর ও এসএসবির সাহায্য নেওয়া হয়।”

ভোট চলাকালীন বুনো হাতির হামলা ঠেকাতে পটকা ও টিনও মজুত রাখা হয়। ভোট চলাকালীন বুনো হাতির দল চলে এলে জঙ্গলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত বন কর্মীরাও ভোট কেন্দ্রের কাছে প্রস্তুত ছিলেন। সে সবের প্রয়োজন পড়েনি। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে। এলাকার বন দফতরের বিট অফিসেই প্রতিবারই ভোট কেন্দ্র হয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে দু’ঘণ্টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যায়। গত বিধানসভায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় ৫৮ জন ভোট দেন।

কেন এত কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হল? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাটি খুবই দুর্গম। সে কারণেই ওই এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া অথবা অন্য এলাকার ভোটারদের ভুটিয়া বস্তিতে নিয়ে আসা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। সে কারণেই ৬৩ জন ভোটারের জন্য পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হয়। এই কেন্দ্রের ভোটকর্মী অমর প্রধান বলেছেন, “অনেক ভয় নিয়ে ভোটের কাজ করতে এসেছিলাম। যদিও, এত তাড়াতাড়ি ভোট নেওয়া শেষ হয়ে যাবে তা ভাবিনি। অনেক বছর ধরে ভোটের কাজ করেছি। এ বার এখানে এসে অন্য অভিজ্ঞতা হল। যদিও ভোটার না থাকলেও সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।”

২০০৫ সাল পর্যন্ত ভুটিয়াবস্তিতে মোট ৭৪টি পরিবার ছিল। কয়েক বছর আগে হাতিপোতা এলাকায় ১৭টি ও পাটকাপাড়ায় ২৮টি পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার পর রয়ে যায় মাত্র ২৯টি পরিবার। বাসিন্দার সংখ্যা ১২৩ জন। এলকার সকলেই এক সময় ডলোমাইট উত্তোলনের কাজ করত। এলাকার বাসিন্দা ডোম্বর বাহাদুর, রামবাহাদুর মোঙ্গরার অভিযোগ, “প্রতিবারই ভোট আসে। প্রচারও হয়। তার পরে ভোট চলে যায়। কিন্তু এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় না।” যদিও, স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা বিন্দা ছেত্রী জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raju saha samuktala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE