Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধসা-ঢলার কোপে চাষে ধস

একে কনকনে ঠাণ্ডা। তার উপরে ঘন কুয়াশা। ফলে, রোগের শঙ্কা ছিল আলুচাষিদের। শীত জাঁকিয়ে বসতে জলপাইগুড়ি জেলার আলু খেতে ছাত্রাক ঘটিত মারণ রোগ ‘নবি ধসা’ অথবা ‘লেট ব্লাইট’ ছড়াতে শুরু করল। ব্যাকটিরিয়া সংক্রমিত ‘ঢলা রোগ’ দেখা দেওয়ায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। রাজগঞ্জ ব্লকের তিস্তা নদী চর সংলগ্ন কয়েকশো বিঘা আলু খেতে ওই রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা এলাকা ঘুরে রোগের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন।

আলুখেতের অবস্থা এখন এমনই। জলপাইগুড়ির মন্তাদারি এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

আলুখেতের অবস্থা এখন এমনই। জলপাইগুড়ির মন্তাদারি এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৭
Share: Save:

একে কনকনে ঠাণ্ডা। তার উপরে ঘন কুয়াশা। ফলে, রোগের শঙ্কা ছিল আলুচাষিদের। শীত জাঁকিয়ে বসতে জলপাইগুড়ি জেলার আলু খেতে ছাত্রাক ঘটিত মারণ রোগ ‘নবি ধসা’ অথবা ‘লেট ব্লাইট’ ছড়াতে শুরু করল। ব্যাকটিরিয়া সংক্রমিত ‘ঢলা রোগ’ দেখা দেওয়ায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। রাজগঞ্জ ব্লকের তিস্তা নদী চর সংলগ্ন কয়েকশো বিঘা আলু খেতে ওই রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা এলাকা ঘুরে রোগের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন।

বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ওই এলাকায় যান। কৃষিকর্তারা জানান, রোগ বাহক ব্যাকটেরিয়া সেচের জলের মতো ছড়ানোর মাধ্যম পেয়ে গেলে যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি মহামারির আকার নিতে পারে। তাই সতর্কতামূলক প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে চাষিদের সেচ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা সুজিত পাল বলেন, “বিশেষজ্ঞরা রাজগঞ্জ ব্লকে ঢলা রোগে আক্রান্ত আলু চাষের এলাকা ঘুরে দেখছেন। প্রায় পাঁচশো হেক্টর জমিতে রোগ ছড়িয়েছে। এখনও মহামারি না হলেও রোগের চরিত্র অনুযায়ী যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

তবে ঢলা রোগে আক্রান্ত আলুর ক্ষতির পরিমাণ কী দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে কৃষিকর্তারা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। জলপাইগুড়ির সহকারী কৃষি অধিকর্তা হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “রাজগঞ্জ ব্লকের তিস্তা নদী চর সংলগ্ন এলাকায় সমস্ত আলু খেত রোগে আক্রান্ত হয়েছে, এমনটা নয়। খেতের কিছু এলাকায় রোগ দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচশো হেক্টর জমিতে ওই রোগ ছড়িয়েছে বলা যায়। সেখানকার আলু গাছের বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ দিন হবে। ওই পরিস্থিতিতে ক্ষতির পরিমাণ কত হবে, সেটা বলা সম্ভব নয়।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আলু চাষের মরশুমের শুরুতে এবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজগঞ্জ ব্লকের টাকিমারি চর এলাকায়। স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ, ওষুধ পাল্টে স্প্রে করে লাভ হচ্ছে না। বিপুল রায়, শ্যামাপ্রসাদ সরকারের মতো কৃষকরা বলেন, “কৃষিকর্তাদের পরামর্শ মতো সব ব্যবস্থা নিয়েও রোগ কমছে না। গাছ ঢলে পরে মারা যাচ্ছে।”

জেলা কৃষি আধিকারিকরা জানান, মূলত পোখরাজ প্রজাতির আলু গাছে ‘ফিউডোমনাস’ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ঢলা রোগ ছড়িয়েছে। চাষের আগে বীজ ও মাটি শোধনের মতো আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রোগের আশঙ্কা থেকে যায়। একবার খেতে ঢলা রোগ দেখা দিলে সাধারণ ওষুধ দিয়ে প্রতিরোধ করা কঠিন। টাকিমারি চরে সেটাই হয়েছে। জেলা সহকারী কৃষি অধিকর্তা জানান, ওই কারণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ঢলা রোগ নিয়ে স্পষ্ট পরিসংখ্যান দিলেও জেলার কোন এলাকায় কত হেক্টর আলু খেত ধসা রোগে আক্রান্ত হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা দিতে পারছেন না। জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা বলেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে নবি ধসা রোগ নিয়ে খবর আসছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু বোনার কাজ চলছে। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হচ্ছে ধূপগুড়ি ব্লকে। এ ছাড়াও ময়নাগুড়ি ব্লকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর, মালবাজার ব্লকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ চলছে। ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস এবং দেবাশিস সর্দার জানান, আগাম চাষ করা কিছু আলু খেতে নবি ধসা রোগের খবর মিলেছে। তাঁদের দাবি, “সমস্যা তেমন কিছু নয়। লিফলেট বিলি করে চাষিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

যদিও চাষি এবং কৃষক সংগঠনের নেতৃত্বের দাবি, কুয়াশাভরা স্যাঁতসেঁতে শীতল আবহাওয়ায় নবি ধসা রোগের বাহক ‘ফাইটোথোরা ইনফেসস্টার্স’ ছত্রাক দ্রুত বংশ বিস্তারের ফলে মাটির সংস্পর্শে থাকা আলুর পাতা ও কাণ্ডে পচন শুরু হয়েছে। রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। তৃণমূল কৃষক সংগঠনের ময়নাগুড়ি ব্লক সভাপতি বাবলু রায় বলেন, “ব্লকের মাধবডাঙা, পদমতি, রামসাই সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ধসা রোগ দেখা দিয়েছে।”

চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকের সাপটিবাড়ি, চূড়াভাণ্ডার, আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর আলু খেত ধসা রোগে আক্রান্ত। কৃষক সভার জেলা কমিটির সদস্য নির্মল চৌধুরী জানান, ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাইকার পাড়া, ঝাড়মাগুরমারি, গাদং-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ডাঙাপাড়া, কথাপাড়া, গাদং-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খলাইগ্রামে নবি ধসা রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে। ময়নাগুড়ি মাধবডাঙা-২ গ্রামের চাষি শিরেন রায় বলেন, “কৃষি দফতরের পরামর্শ মতো ওষুধ ছড়িয়ে রোগ কমছে কিন্তু কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়েছে এক জায়গায় রোগ না ঠেকাতে অন্য জায়গায় দেখা দিচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE