Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ক্যাম্পাস: শিলিগুড়ি কলেজ

পড়াশোনার হাত ধরেই চলছে খেলা

বছর তিনেক আগের কথা। ২০১২-র লন্ডন অলিম্পিকসে দুই পড়ুয়া যাচ্ছে বলে যখন কলেজে খবর পৌছল, তখন হইহই কাণ্ড। অঙ্কিতা দাস আর সৌম্যজিৎ ঘোষ দু’জনেই টেবল টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। অলিম্পিকস থেকে ফেরার পরে দু’জনকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। এ রকম একটা কলেজ নিয়ে কথা বলতে গেলে যে পড়ার আগে খেলার কথা চলে আসবে, তা বলাই বাহুল্য। শুধু কি টেবল টেনিস? অ্যাথলেটিক্স, খো-খো, কবাডিতেও প্রবল সুনাম। অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকলেই দুই দেওয়াল জুড়ে কাচের আলমারিতে সাজানো মেডেল, কাপ, শিল্ড।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

• পড়ুয়া সাড়ে ৩ হাজার • স্থায়ী শিক্ষক ৬০ • শূন্য পদ ১৫টি • গ্রন্থাগার ১টি

বছর তিনেক আগের কথা।

২০১২-র লন্ডন অলিম্পিকসে দুই পড়ুয়া যাচ্ছে বলে যখন কলেজে খবর পৌছল, তখন হইহই কাণ্ড। অঙ্কিতা দাস আর সৌম্যজিৎ ঘোষ দু’জনেই টেবল টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। অলিম্পিকস থেকে ফেরার পরে দু’জনকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।

এ রকম একটা কলেজ নিয়ে কথা বলতে গেলে যে পড়ার আগে খেলার কথা চলে আসবে, তা বলাই বাহুল্য। শুধু কি টেবল টেনিস? অ্যাথলেটিক্স, খো-খো, কবাডিতেও প্রবল সুনাম। অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকলেই দুই দেওয়াল জুড়ে কাচের আলমারিতে সাজানো মেডেল, কাপ, শিল্ড। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস বোর্ড তাদের অধীনে থাকা কলেজগুলিকে নিয়ে যে আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা করে, এ বছর তাতেও চ্যাম্পিয়ন শিলিগুড়ি কলেজ। ১০০ মিটারে সেরা তৃতীয় বষের্র নির্মল রায়, লংজাম্পে প্রথম বর্ষের ছাত্রী শিপু মণ্ডল। দুই জনেই জাতীয় স্তরের ক্রীড়াবিদ। পাপিয়া সেনগুপ্ত, সুচিত্রা রায়দের ছাত্রীরা সাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। টেবল টেনিসে ছেলের দল চ্যাম্পিয়ন, মেয়েদের ব্যক্তিগত বিভাগে সেরা অনুষ্কা দত্ত। খোখোতেও ছেলেদের দল সেরা, মেয়েরা রানার্স। কবাডিতে চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা। কৃতী খো-খো বা কবাডি খেলোয়াড়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে খেলার জন্য বৃত্তিও পান।

পড়াশোনা বা নানা সৃষ্টিশীল ও কল্যাণমূলক কাজেও কৃতিত্ব কম নয়। কলেজের ছাত্রী অঙ্কিতা সাহা দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে বেহালা বাজিয়ে মাত করে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক স্তরে ইয়ুথ এক্সচেঞ্জে আজারবাইজানে যাওয়ার সুয়োগ পেয়েছেন তিনি। জাতীয় সেবা প্রকল্পে কলেজের চার নম্বর ইউনিট গত বছর রাজ্যে সেরা হয়েছে। সারা বছর রক্তদান শিবির, সাফাই অভিযান, ব্লিচিং ছড়ানো, বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের সাহায্য করা, প্রত্যন্ত গ্রামে পোশাক বিলির কাজ চলে। ইয়ুথ পার্লামেন্টেও জেলা চ্যাম্পিয়ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।

প্রায় ৬৫ বছরের পথচলা। ১৯৫০-এর ৮ অক্টোবর শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের বাড়িতেই ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু। ১ নম্বর রোল ছিল এক ছাত্রীর— তাঁর নাম আলো রায়। কলেজেরই অধ্যাপক নির্মল রায়ের বোন ছিলেন। প্রথম ব্যাচের ছাত্র জ্যোতির্ময় রায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিকও ছিলেন। বর্তমানে সব মিলিয়ে ২৩টি বিভাগে পড়াশোনা করেন ছাত্রছাত্রীরা। তার মধ্যে অনার্স রয়েছে ১৮টি বিভাগে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার।

কলেজ চালু হয়েছিল ১২ জন পড়ুয়া নিয়ে। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ডাবগ্রাম কলোনি হিসেবে যে জায়গা সরকার অধিগ্রহণ করে, সেখানেই কলেজের জায়গা। কলেজে ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর কাছে জানা যায়, এলাকায় ‘চিঁড়েখাওয়া জোতদার’ নামে পরিচিত এক জন পুনর্বাসন প্রকল্পে জমি দিয়েছিলেন। কলেজের জন্য আট একর জমি নেওয়া হয়। প্রথমে বয়েজ স্কুলে ক্লাস শুরু হলেও তিন বছর পরে নতুন দোতলা বাড়িতে উঠে যায় কলেজ। ১৯৫৬ সালে ‘গভর্নমেন্ট স্পনসরড’ স্বীকৃতি মেলে।

প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ছিল কলেজটি। ১৯৬২-তে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলে কলেজটি তার আওতায় আসে। ওই সময়েই চিনের সীমান্ত আগ্রাসনে পরিস্থিতি তেতে উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি হয়। অগত্যা শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্র হস্টেলের বাড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে সূর্য সেন কলেজের সূচনাও হয় শিলিগুড়ি কলেজে। শিলিগুড়ি কলেজের অনেকে সেই নতুন কলেজে ক্লাসও করাতেন। এলাকায় জলাধার তৈরির জন্য চার কাঠা জমি পুরসভাকে দিয়েছিল শিলিগুড়ি কলেজ। বিনিময়ে তৎকালীন মেয়র বিকাশ ঘোষ ২০০০ সালে কলেজের গ্রন্থাগার গড়ে দেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক মানস দাশগুপ্ত তাঁর সংগ্রহ থেকে ন’শো বইও দিয়েছেন।

শঙ্করীপ্রসাদ ছাড়াও এক সময়ে এই কলেজে শিক্ষকতা করেছেন অশ্রুকুমার শিকদার। এখন শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৬০। ফাঁকা রয়েছে ১৫টি পদ। আংশিক সময়ের শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। চুক্তির ভিত্তিতে পড়াচ্ছেন ৮ জন। গত বছর ২০ জন অতিথি শিক্ষকও ছিলেন। কলেজে অন্যতম পুরনো ভূগোল বিভাগটি। ভূকম্পন মাপার সিসমোগ্রাফ যন্ত্র থাকলেও দেখভালের অভাবে এখন সেটি অকেজো। ২০০৫ সালে ‘নাক’-এর বিচারে ‘বি প্লাস প্লাস’ গ্রেড পায় কলেজ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উজ্জ্বলচন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘কলেজের পড়ুয়াদের ক্যান্টিন, ছেলে ও মেয়েদের জন্য ভাল শৌচাগার-সহ কিছু পরিকাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এর পরেই আমরা নাকের কাছে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করব। কলেজ আরও ভাল গ্রেড পাবে বলে আমরা আশাবাদী।’’

পড়াশোনার সঙ্গেই লেগে থাকে নবীনবরণ থেকে ‘ফেস্ট’। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার জানান, শিক্ষক দিবস বা নেপালি কবি ভানু ভক্তের জন্মজয়ন্তীর মতো নানা অনুষ্ঠানও পালন করা হয়। সারা বছরই আড্ডা চলে সাইকেল স্ট্যান্ড, ক্যান্টিনে। চারতলা থেকে একতলায় আনার কাজ চলায় ক্যান্টিন বন্ধ। শীতে কলেজের মাঠেও চলে আড্ডা। সেই মাঠেই গরমে ছাত্র-শিক্ষকেরা কোমর বেঁধে ফুটবল খেলেন। কলেজের এক কোণে ছিল বাবলা গাছ আর একটি কুয়ো। সেখানেই পানু দত্ত মজুমদারের মতো ক্রীড়া সংগঠক কোচিং দিতেন। শিলিগুড়ির সেই বাবলাতলা ক্রিকেট কমপ্লেক্সের ইতিহাসও যে এই কলেজের সঙ্গেই জড়িয়ে।

***

নম্বর বাধা নয়

মার্কশিট শেষ কথা বলে না। চাই আপনার উপযোগী পেশার সন্ধান।
যাতে আপনি পেতে পারেন ঠিক প্রশিক্ষণ। এ বার ফিশারিজ সায়েন্স।

বৈজ্ঞানিক উপায়ে নানা প্রজাতির মাছের লাভজনক চাষ শেখার বিদ্যা মৎস্যবিজ্ঞান বা ফিশারিজ সায়েন্স।
কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতর ছাড়াও বেসরকারি সংস্থায় কাজের সুযোগ রয়েছে। রাজ্যে একমাত্র
কলকাতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চার বছরের ‘ব্যাচেলর অব ফিশারিজ সায়েন্স’ কোর্স পড়ানো হয়।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্সেস-এর অফিস বেলগাছিয়ায় ক্ষুদিরাম বসু সরণীতে। পড়ানো হয় চক গড়িয়ায় ‘ফ্যাকাল্টি অব ফিশারিজ সায়েন্সেস’ ক্যাম্পাসে। আট সেমেস্টারের এই কোর্সে ভর্তি হতে গেলে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। তফসিলি জাতি ও জনজাতির পড়ুয়াদের ৪০ শতাংশ নম্বর থাকলেই চলবে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা এবং ইংরেজির নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়। সংবাদপত্রে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। গত বার ৩২টি আসন ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ থেকে পাশ করা সাধারণ পড়ুয়াদের জন্য ১৭টি, তফসিলি জাতির জন্য ৬টি, জনজাতির জন্য ২টি, অন্য বোর্ডের এক জন সাধারণ এবং এক জন তফসিলি উপজাতির পড়ুয়া, ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পড়ুয়াদের জন্য ৪টি এবং প্রতিবন্ধী অথবা দার্জিলিং পাহাড়ের কোটায় একটি আসন বরাদ্দ ছিল। ভর্তির সময়ে ৬৭৬০ টাকা, পরে প্রতি সেমিস্টারে ৩৯১০ টাকা লাগে। হস্টেলে থাকতে হলে তা বেড়ে যথাক্রমে ১২০৬০ ও ৫৭১০ টাকায় দাঁড়ায়। চাকরির সুযোগ যথেষ্ট। প্রতি জেলায় ‘ডিস্ট্রিক্ট ফিশারিজ অফিসার’ ও প্রতি ব্লকে ‘ফিশারিজ এক্সটেনশন অফিসার’ থাকেন। অনেকে ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেন বলে ব্যাঙ্কের তরফে নজরদারির প্রয়োজন হয়। তাই ব্যাঙ্কেও কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগও রয়েছে।

***

সুলুক-সন্ধান

সমর-বিজ্ঞান

মিলিটারি সায়েন্স পড়ার সুযোগ রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজ কলেজে। তবে অনার্স নয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই কলেজে সমর-বিজ্ঞান পড়ানো হয় পাসে। আসন ৪০টি। বিজ্ঞান ও কলা দুই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাই পাসে এই বিষয়টি পড়তে পারেন।

মাধ্যমিকে বৃত্তি

মোট প্রাপ্ত নম্বর ৭৫ শতাংশ হলে মাধ্যমিক উত্তীর্ণেরা রাজ্য সরকারের বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। পারিবারিক আয় বছরে ৮০ হাজার টাকার কম হতে হবে। একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় এককালীন ১০ হাজার টাকা করে বৃত্তি পাওয়া যায়। পরীক্ষার্থী যে স্কুলের পড়ুয়া ছিল, সেখানেই যোগাযোগ করতে হবে।

সুবিধা বাড়ল

শিলিগুড়ি কলেজে নিয়মিত কোর্সের অন্তর্ভুক্ত হল মাইক্রো বায়োলজি। সেলফ ফিনান্স কোর্সে প্রতি বছর যে ২৫ হাজার টাকা ফি লাগত, তা কমে যাবে। অনার্স এবং পাস পড়ার সুযোগ রয়েছে।

পাঠ্য সাংবাদিকতা

মাসকম অ্যান্ড জার্নালিজমে অনার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে শিলিগুড়ি কলেজে। সেল্ফ ফিনান্সড্‌ এই কোর্সে ভর্তির ফি ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বছর লাগবে ১৩ হাজার। ভর্তি মেধা তালিকার ভিত্তিতে।

দুঃস্থের পাশে

‘বিপ্লবী মেদিনীপুর টাইমস’ পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রতি বছরই মাধ্যমিক উত্তীর্ণ দুঃস্থ ও মেধাবীদের বই ও পাঠ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। যোগাযোগ: মেদিনীপুরের কর্নেলগোলায় পত্রিকার দফতর।

কম্পিউটার সায়েন্স

বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা অনার্সে এই বিষয়ে পড়তে পারেন শিলিগুড়ি কলেজে। ভর্তির ফি ১৭ হাজার ৯৬০ টাকা। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বছর ১৫ হাজার করে ফি লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE