(বাঁ দিক থেকে) ডিমডিমার চরে তেলের পাইপে লাগানো ভাল্ভ। দিয়ে তেল বের হচ্ছে। মেরামত করা হচ্ছে পাইপ। ছবি: রাজকুমার মোদক।
মাটির নীচে থাকা পাইপ ফুটো করে তেল চুরির একের পর এক অভিযোগ উঠলেও, কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত দু’বছর ধরে মাদারিহাট এবং বীরপাড়ার বিভিন্ন এলাকার পাইপ থেকে তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। ইন্ডিয়ান অয়েল সংস্থা নদী খাতে মোটা পাইপ বিছিয়ে অসম থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত পেট্রোল, ডিজেল এবং কেরোসিন তেল পাঠায়। একেক সময়ে একেক রকমের তেল পাঠানো হয়। গত দু’বছর ধরে বীরপাড়া এবং মাদারিহাটে বিভিন্ন নদীর চরে মাটি খুঁড়ে, সেই পাইপ ফুটো করে তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। প্রতি ক্ষেত্রেই পাইপ ফুটো করে একটি ‘ভাল্ভ’ লাগানো হয়েছে, তার মাধ্যমে তেল বের করে ভাল্ভের মাধ্যমেই তেল বের হওয়া বন্ধ করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এর ফলে তেল চুরির ঘটনা টের পেতে সরবারহকারী সংস্থার অনেকটাই সময় লেগেছে বলে জানানো হয়েছে। টের পাওয়ার আগেই তেল অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। সাম্প্রতিক কালে এই ঘটনায় অন্তত ৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে তেল সরবরাহকারী সংস্থা জানিয়েছে।
গত বুধবারও বীরপাড়ার কাছে ডিমডিমা নদীর চড় থেকে পাইপ লাইন ফুটো করে তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি টের পাওয়ার পরেই পুলিশে অভিযোগ জানায় সরবরাহকারী সংস্থা। ওই ‘ভাল্ভ’ লাগানো পাইপের অংশ থেকে এর আগেও একাধিকবার তেল চুরি হয়েছে বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে। কত পরিমাণ তেল চুরি হয়েছে, তা জানতে হিসেবও শুরু করেছে সংস্থার কর্তারা। পুলিশের দাবি, পাইপ ফুটো করে তেল বের করে কোনও ট্যাঙ্কারে ভরে পাচার করা হয়েছে। একটি ট্যাঙ্কারের গতিবিধি পুলিশের নজরেও এসেছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও বছর দু’য়েক আগে বীরপাড়া এলাকার এক ধাবার দোকানের মালিককে গ্রেফতার করা ছাড়া তদন্ত বেশি এগোয়েনি বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “গত বুধবার ডামডিমার যে এলাকা থেকে তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে, সেখানে একটি ট্যাঙ্কার মাঝে মধ্যে যাতায়াত করত বলে জানা গিয়েছে। ওই ট্যাঙ্কারের নম্বর জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে। চক্রের সঙ্গে জড়িতদের খোঁজা হচ্ছে।”
গত বুধবার টহলদারি করার সময় ডিমডিমা নদীর চরে তেল সরবারহকারী সংস্থার কর্মীরা মাটির কিছুটা অংশ ভেজা অবস্থায় দেখতে পান। গন্ধ শুঁকে তাঁরা বুঝতে পারেন মাটির নীচ থেকে পেট্রোল বের হচ্ছে। সংস্থার মাদারিহাটের অফিসে খবর পৌঁছনর পর মাটি খুঁড়ে তেল চুরির ঘটনা টের পাওয়া যায়। তেল চুরির প্রবণতা চলতে থাকলে সরবারহকারী আর্থিক সংস্থার ক্ষতি ছাড়াও যে কোনও সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েলের তরফে জানানো হয়েছে এক সেন্টিমিটার পুরু ওই পাইপ ফুটো করার পর সেখানে ‘ভাল্ব’ বসিয়ে যে কায়দায় তেল চুরি হয়েছে, তা বড় ধরণের চক্র জড়িত না থাকলে সম্ভব নয়। তেল ভর্তি পাইপে যে পরিমাণ চাপ থাকে, তাতে পাইপ ফুঁটো করতে কারিগরি দক্ষতা ছাড়াও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করছেন। ইন্ডিয়ান অয়েলের পাইপলাইন বিভাগের কর্তা পার্থ সিংহরায়ের কথায়, “পাইপ ফুঁটো করে ভাল্ব বসিয়ে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১২ হাজার লিটার তেল ট্যাঙ্কারে ভরে ফেলা সম্ভব। ওই পাইপ ফুটো করে ভাল্ব বসানো প্রশিক্ষিত ব্যক্তিই করতে পারেন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।” তেল চুরির অভিযোগের দ্রুত কিনারা করার দাবিও পুলিশকে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy