বামেদের অবস্থান বিক্ষোভের মধ্যেই বৈঠক করতে চলেছেন প্রশাসকেরা।
মেয়র ও মেয়র পারিষদরা ইস্তফা দেওয়ার তিন মাসের মাথায় শিলিগুড়ি পুরবোর্ড ভেঙে রাজ্য প্রশাসক নিয়োগ করতেই আসরে নেমে পড়ল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। মঙ্গলবার বামেদের তরফে পুরসভায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিজেপির তরফেও আন্দোলনের হুমকি দিয়ে দ্রুত নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও তাড়াতাড়ি পুরভোট করানোর দাবি তোলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, কংগ্রেসে ভাঙনও শুরু হয়েছে। এ দিনই কংগ্রেস ছেড়ে প্রাক্তন কাউন্সিলর সঞ্জয় পাঠক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে তিন সদস্যের প্রশাসক বোর্ড গঠন করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন হয়েছেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী আধিকারিক আর বিমলা। অপর দুই সদস্য হলেন, শিলিগুড়িতে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক পি টি শেরপা এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সহসচিব দীপঙ্কর পিপলাই। মঙ্গলবার পুর কমিশনারের সঙ্গে পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে তাঁরা বৈঠকে বসেন। পরে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন বলেন, “এদিনই সরকারিভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় জোর দিতে হবে।”
পুরসভায় প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এদিন পুরসভায় কমিশনারের ঘরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন বাম নেতা-কর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান করেন। সদ্য প্রাক্তন হওয়া কাউন্সিলরেরা ও জেলা নেতারা হাজির ছিলেন বিক্ষোভে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “আমরা মনে করছি, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিকল্প সরকারি আধিকারিক হতে পারে না। তাই আমরা প্রশাসক মানব না। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে মামলা করা হবে বলে তিনি জানান।
বৈঠকে প্রশাসকেরা।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস, তৃণমূল জোট করে নির্বাচনে জিতে উন্নত পুর পরিষেবার আশ্বাস দিয়েছিল। তা যে তারা পারেননি তা স্পষ্ট হল। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামব।” বিজেপি’র দাবি, এটা কোনও সমাধান নয়। দলের জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুর অভিযোগ, আড়াল থেকে পুরসভা চালাবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের কথায়, “দ্রুত নির্বাচন করে জন প্রতিনিধিদের হাতে পুরসভা চালানোর ভার দেওয়া হোক।” তা ছাড়া কাউন্সিলররা না থাকায় এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতিতে শহরে রোগ প্রতিরোধের কাজও ব্যহত হবে বলে কাউন্সিলরদের অনেকেই মনে করছেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেন, “আইন মেনেই সব করা হয়েছে। আমরা কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে বোর্ড থেকে বার হতেই সিপিএম তাদের অক্সিজেন দিয়ে বোর্ড চালিয়েছে। তাই আজ আই পরিস্থিতি। পুরসভা অভিভাবকহীন হয়ে সমস্যা হচ্ছিল। পুর কমিশনারের পক্ষে কয়েক হাজার টাকার বেশি খরচ করার ক্ষমতা নেই। বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হচ্ছিল না। প্রশাসক বসলে বাসিন্দারা এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাবেন।” তাঁর দাবি, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যথা সময়েই নির্বাচন করবে।
গত ২০ মে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এবং মেয়র পারিষদরা পদত্যাগ করার পর থেকে পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। এত দিন পুরসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন সিপিএমের মুন্সি নুরুল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, “গণতন্ত্র নয়। দলতন্ত্র চালানো হচ্ছে। রাজ্য সরকার চাইছে অন্যান্য পুরসভাগুলির সঙ্গে ৮/৯ মাস পরে এই পুরসভার নির্বাচন করতে। ততদিন কাউন্সিলর না থাকলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।”
এই অবস্থায়, কংগ্রেসের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের দলত্যাগ ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। যিনি দল চেড়েছেন, সেই সঞ্জয়বাবু কংগ্রেসের পুরবোর্ডে মেয়র পারিষদ ছিলেন। বোর্ড ভাঙতেই তিনি দল ছেড়ে দেওয়ায় নানা জল্পনা দানা বাঁধছে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “কংগ্রেস ছাড়ছেন বলে জানিয়ে কোনও ইস্তফা দেননি সঞ্জয়। তাই আমি কোনও মন্তব্য করব না।” জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক জীাবন মজুমদার বলেন, “কংগ্রেসে উনি কী পেয়েছেন আর তৃণমূলে কী পান তা আমরা দেখব। গোষ্ঠী কোন্দল সম্পর্কে এতদিনে তাঁর বোধোদয় হল?” তবে সঞ্জয়বাবু সে কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “দল হিসেবে কংগ্রেস তাঁর উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া দলে আমার গুরুত্ব ক্রমশ কমে আসছিল। ফলে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।” এছাড়া কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ও জেলা সাধারণ সম্পাদকের অভ্যন্তরীণ লড়াইও প্রকাশ্যে চলে আসায় কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy