Advertisement
০৯ মে ২০২৪

প্রিজন সেলের নিরাপত্তা প্রশ্নে

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ এবং সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে মঙ্গলবার এক বন্দি অপর জনকে স্যালাইনের স্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগের পর সেই চিন্তা বেড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ এবং সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে মঙ্গলবার এক বন্দি অপর জনকে স্যালাইনের স্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগের পর সেই চিন্তা বেড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মেডিক্যালের সেলের নিরাপত্তা নিয়েই। কেন না সেলে ওই ঘটনা ঘটলেও সেখানে নেই কোনও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। তা থাকলে বিষয়টি সঠিক ভাবে জানা বা আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যেত বলে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশ মনে করছেন। তার উপর পুলিশ কর্মীদের সংখ্যা পর্যাপ্ত না-থাকাতেও নিরাপত্তার দিকটি কিছুটা ঢিলেঢালাই থাকে বলে অভিযোগ।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে বন্দি সেলের নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ইতিমধ্যেই হাসপাতালের অন্তত ৫ টি জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কথা ছিল। ভোটের জন্য তা দেরি হচ্ছে। তবে হাসপাতালের কর্মী, চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই হাসপাতালে নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু বাস্তবে আজ পর্যন্ত কোথাও কোনও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়নি।

তা ছাড়া সেলের পরিস্থিতি যে ভাল নয় সে কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছিল পুলিশ এবং সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের তরফে। পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘প্রিজন সেলের পরিস্থিতি ভাল করতে, বড় জায়গায় করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল।’’ একই রকম ভাবে শিলিগুড়ি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের তরফেও তা জানানো হয়েছিল বলে দাবি। হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরার কথায়, তাদের কাজে ওই কাজের অর্থ নেই। তবে বন্দিদের সেল বড় আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। মহিলা মেডিক্যালের পাশে একটি জায়গাও ওই কাজের জন্য বাছা হয়েছিল। সেখানে অন্তত ১০ জন পুরুষ বন্দি এবং ৫ থেকে ৬ জন মহিলা বন্দি রাখার ব্যবস্থা থাকবে। পূর্ত দফতরের মাধ্যমে পরিকল্পনা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। তবে এর পর বিষয়টি এগোয়নি। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি নিয়ে সুপার বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে পাঁচ, ছয়টির মতো জায়গা বাছা হয়েছিল ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর জন্য। তার মধ্যে অসুস্থ বন্দিদের রাখার সেল, সুপারের অফিস, অধ্যক্ষের দফতর, জরুরি বিভাগে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কথা ছিল। ভোটের জন্য সেই কাজ পিছিয়ে পড়েছে।’’ ভোট পর্ব মিটলে সেই কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা হবে বলেও তিনি জানান।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, বন্দিদের রাখার জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া অন্যান্য বিভাগগুলির ঢোকার মুখে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রাখা দরকার। তাতে কোথায় কী হচ্ছে তা নজরদারি করতে সুবিধা হবে। কিন্তু তা না থাকায় হাসপাতালের নিরাপত্তা জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফেও অতীতে একাধিকবার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

মঙ্গলবার এক জন বন্দি আরেক জনকে মেরে দরজা আটকে এক ঘন্টা ধরে বসেছিল। অথচ বিষয়টি সেলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের নজরে আসার পরেও তাঁরা কিছু করতে পারেননি। এক জন বন্দিই যে ভাবে তাঁদের ঘোল খাইয়েছে সেটাই পুলিশের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার জন পুলিশ কর্মী থাকলেও তাঁদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেন না পুলিশ কর্তারা খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন দায়িত্বে থাকা ওই পুলিশ কর্মী এবং অন্যান্যরা তখনও পোশাক পরেনি। সেলের পাশের ঘরেই বসে রয়েছেন। ডিসিপি (ট্রাফিক, ওয়েস্ট) শ্যাম সিংহ তা নিয়ে সেলের দায়িত্বে থাকা এএসআই মহম্মদ রহমানকে ধমকও দেন। শেষে দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও অভিযুক্ত বন্দি নিখিল রায়কে হাত পা বেঁধে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শৌচাগারে যেতে বা থাবার সময় তার হাত পায়ের বেড়ি খুলে দিতে নির্দেশ দেন এক পুলিশ কর্তা।

নিরাপত্তার ঢিলেঢালা পরিস্থিতির মধ্যে সেলে আরও বন্দিদের রাখার দরকার হলে নিখিলের সঙ্গে তাদের কী ভাবে রাখা হবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছে পুলিশ। হাসপাতালের সুপার তথা মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্মলবাবু জানান, ওই বন্দির সঙ্গে অন্য বন্দিকে রাখা ঠিক হবে না। পুলিশ কমিশনার অবশ্য জানান, অন্যত্র রাখার জায়গা নেই। তাই আর কেউ এলে তাকে ওই সেলেই রাখতে হবে। তবে অভিযুক্ত বন্দিকে সব সময়ের জন্য নজরবন্দি করে রাখতে হবে। তার পাশে এক জন নিরাপত্তা রক্ষীকে থাকতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE