Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ভুঁইয়াপাড়া সেই আঁধারেই

বাম আমলে গালভরা প্রতিশ্রুতি শুনেছেন অনেকবার। কিন্তু আলো দেখতে পাননি। পরিবর্তনের পরেও হাল ফেরেনি ভুঁইয়াপাড়ার। তাই ভালো নেই অধীর, সমরি, হীরামনি ভুঁইয়ারা। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের মোহনা অঞ্চলের ভুঁইয়াপাড়া যেন নেই রাজ্য। গত পাঁচ মাসে যক্ষ্মায় ভুগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি।

সরকারি তরফে ত্রাণ চান ভুঁইয়াপাড়ার বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

সরকারি তরফে ত্রাণ চান ভুঁইয়াপাড়ার বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

অনুপরতন মোহান্ত
কুমারগঞ্জ (দক্ষিণ দিনাজপুর) শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৯
Share: Save:

বাম আমলে গালভরা প্রতিশ্রুতি শুনেছেন অনেকবার। কিন্তু আলো দেখতে পাননি। পরিবর্তনের পরেও হাল ফেরেনি ভুঁইয়াপাড়ার। তাই ভালো নেই অধীর, সমরি, হীরামনি ভুঁইয়ারা।

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের মোহনা অঞ্চলের ভুঁইয়াপাড়া যেন নেই রাজ্য। গত পাঁচ মাসে যক্ষ্মায় ভুগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। মঞ্জু ভুঁইয়া(৫৫), মানো ভুঁইয়া(৫২), ঝিনিয়া ভুঁইয়া(৬৫) ও তাপসী ভুঁইয়া(২২) কে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়নি। রক্তাল্পতায় ভুগতে থাকা ১৯ বছরের বধূ লখিয়াকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন তাঁর স্বামী নাঙ্কু ভুঁইয়া। নাঙ্কুর অভিযোগ, ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত পাননি। বাইরে থেকে রক্ত কেনার ক্ষমতা হয়নি। তাই ৪ দিন বাদে এমনিই স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। এখন চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ধুঁকছেন ওই বধূ। ঘটনার কথা শুনে কুমারগঞ্জের জয়েন্ট বিডিও অনুপ চক্রবর্তী ব্লক মেডিক্যাল অফিসারকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পরে অনুপবাবু বলেন, “গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। অসুস্থদের চিকিৎসা হবে।”

বালুরঘাট-কুমারগঞ্জ রাজ্য সড়কের ধারে ভুঁইয়াপাড়ায় হতদরিদ্র ৩৫ টি পরিবারের বাস। বিপিএল কার্ড থাকলেও অধিকাংশ বাসিন্দা তার সুফল পাননা বলে অভিযোগ। নেই জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য ন্যূনতম পরিষেবাও। গ্রামে ঢোকার কাঁচা আলপথ বহু প্রতিশ্রুতির পরেও চলাচলের অযোগ্য। ৪টি নলকূপের মধ্যে ৩টি বিকল হয়ে রয়েছে বহুদিন। পাঁচমাস আগে পঞ্চায়েত থেকে গ্রামের মধ্যে সিমেন্টের একটি জলাধার তৈরি করা হয়। পাইপ লাইনের মাধ্যমে ওই জলাধারের জল পাওয়ার কথা ছিল বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, গত পাঁচমাসে মাত্র তিনবার ওই জলাধার থেকে জল পড়েছে। এখন শুকনো খটখটে জলাধার। তাই পুকুরের জলেই দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটান বাসিন্দারা।

ভুঁইয়া পাড়ার অধিকাংশ মানুষ ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। এখন ভাটায় কাজ নেই। এলাকায় নেই ১০০দিনের কাজ। তাই দুই বেলার অন্ন সংস্থান কী ভাবে হবে? তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাসিন্দারা। কাজ না থাকায় অর্ধাহার আর তা থেকেই অপুষ্টিজনিত রোগ বাড়ছে বলে অভিযোগ। বার্ধক্যভাতা পাননি ৭৫ বছরের গীরেন ভুঁইয়া, ৬৫ বছরের কৃষ্ণি ভুঁইয়ার মতো গ্রামের প্রায় আট জন বৃদ্ধ বৃদ্ধা। তারা বলেন, “অন্ত্যোদ্বয়-অন্নপূণার্ যোজনা হলে বিনামূল্য রেশন দোকান থেকে চাল গম পেয়ে কিছুটা সুরাহা হতো। কিন্তু মেলেনি সেটুকুও।”

গ্রামের সতীশ ভুঁইয়ার একফালি জমিতে পঞ্চায়েত থেকে ফলের বাগান তৈরির জন্য ৪,৭৫৯ টাকা খরচের হিসাব দেখানো হয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধ সতীশ ভুঁইয়া বলেন, ফলের চারা দেওয়া হয়েছিল আর হাতে নগদ পেয়েছিলাম ৫০০ টাকা। চারাগুলি সব মরে গেল।” বরম সংসদের অধীন ভুঁইয়াপাড়ার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য শুক্লা সাহা চৌধুরী বর্তমান গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের পর গ্রামে কারও পা পড়েনি। দু’দফায় ২৪ দিন ১০০ দিনের কাজ করেও মজুরির টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। শুক্লা দেবী বলেন, “ টাকার অভাবে ১০০দিনের মজুরি দেওয়া যাচ্ছেনা। তবে পাইপ লাইনের কাজ শেষ হলেই ভুঁইয়াপাড়ায় পানীয় জল সরবরাহ করা হবে। গ্রামের আলপথটি পাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, বাম আমলে উন্নয়ন না হলেও তারা ভুঁইয়াপাড়ার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বাসিন্দাদের প্রশ্ন, জেলার দরিদ্রতম মৌজার তালিকা থেকে ভুঁইয়াপাড়া কেন বাইরে? তার উত্তর অবশ্য নেই কারও কাছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bhuniapara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE