বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টের বাঁশঝাড় থেকে গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে কোচবিহারের তুফানগঞ্জে এমনই অভিযোগ উঠেছে। বক্সিরহাটের শালবাড়ির ১৪১ নম্বর বুথে বামেদের পোলিং এজেন্টের দায়িত্বে ছিলেন সিপিএম কর্মী অতুল সাহা। এ দিন সকালে কয়েকজন তৃণমূল সমর্থক অতুলবাবুর বাড়ি লাগোয়া বাঁশঝাড়ে ঢুকে শতাধিক বাঁশগাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের তরফে অবশ্য বিষয়টিকে ‘পারিবারিক’ বলে পাল্টা দাবি করা হয়েছে।
ভোট শেষ হওয়ার পরেও পোলিং এজেন্ট এবং দলের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে কোচবিহারে। মারধর, বাড়ি-দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগের সঙ্গেই বাঁশ কেটে নেওয়ার মতো অভিযোগও প্রশাসনের কাছে এসেছে। সিপিএমের বক্সিরহাট জোনাল সম্পাদক ধনঞ্জয় রাভার কথায়, “মারধর চলছিল-ই, আবার বাঁশও কেটে নেওয়া হল। মৌখিকভাবে পুলিশকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগ করা হবে।” জেলার দিনহাটা, নাটাবাড়ি, কোচবিহার উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায় ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পরে বাম কর্মীদের হুমকি, মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, দোকানে তালা ঝোলানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার নিরাপত্তার দাবিতে আক্রান্তদের নিয়ে সাগরদিঘি চত্বরে অবস্থানের কর্মসূচি নিয়েছে জেলা বামফ্রন্ট। তুফানগঞ্জের বালাকুঠিতে বাম পোলিং এজেন্টের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলও।
জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই থানাগুলি যাতে দ্রুত যতাযথ পদক্ষেপ করে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বামেদের অভিযোগ, ভোট শেষ হওয়ার পরে, বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর বালাকুঠি এলাকায় সিপিএম সমর্থক তথা পোলিং এজেন্ট মৃদুল দে’র বাড়িতে হামলা হয়। একই সময়ে ওই থানা এলাকার বালাকুঠিতে ১৩৪ নম্বর বুথের পোলিং এজেন্ট আজহার আলিকে তৃণমূল সমর্থকরা মারধর করে। তাঁকে তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে তুফানগঞ্জ থানার ঝলঝলিতে বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের স্বামীর দোকানে হামলা চালিয়ে ফ্রিজ সহ বেশ কিছু সামগ্রী ভাঙচুর করা হয়। দেওচড়াইতে এক সিপিএম কর্মীকে মারধর করা, এলাকার বটতলা বাজারে আনোয়ার হোসেন নামে এক সিপিএম কর্মীর দোকান বন্ধ করা, কৃষ্ণপুরে আরেক সিপিএম কর্মীর দোকানেও একই ভাবে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের শাসক দলের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নাটাবাড়ি, পানিশালা, ভুচুংমারিতে বাম কর্মী-সমর্থকদেরও বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অভিযোগ করেছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলি বলেন, “জেলাজুড়ে সন্ত্রাস শুরু করেছে তৃণমূল। তুফানগঞ্জে সেই সন্ত্রাস ব্যাপক আকার নিয়েছে। অভিযোগ জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। আক্রান্তদের নিয়ে শনিবার বামফ্রন্টগত ভাবে অবস্থান করা হবে।”
তৃণমূলের তরফে অবশ্য পাল্টা অভিযোগ তুলে দাবি করা হয়েছে, বালাকুঠিতে সিপিএমের পোলিং এজেন্টের নেতৃত্বেই দলের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা হয়েছে। দু’পক্ষের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় বলে অভিযোগ। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব অভিযোগ জানাবে বলে তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বামেদের তরফে যা অভিযোগ করা হচ্ছে, তার কোনটাই বাস্তবে ঘটেনি। কোচবিহারে এবার বাম প্রার্থীর হার নিশ্চিত জেনেই এমন নানান অভিযোগ করা হচ্ছে।”
তুফানগঞ্জ বিধানসভা আলিপুরদুয়ার লোকসভার অর্ন্তগত। শুক্রবার বামেদের তরফে রির্টানিং অফিসারকে অভিযোগ জানানো হয়, তুফানগঞ্জের ২০২টি বুথের মধ্যে ৩৫ বুথে এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। রির্টানিং অফিসার সুদীপ মিত্র বলেন, “তুফানগঞ্জ এলাকায় কিছু বুথে বামেদের এজেন্ট ঢুকতে পারেনি বলে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy