জলপাইগুড়ি শহরের প্লাবল-চিত্র। সোমবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
তিস্তার জলস্তর কমলেও ফুলেফেঁপে ওঠা করলা নদীর জলে প্লাবিত হল জলপাইগুড়ি শহর। টানা বর্ষণে রবিবার সকাল থেকে শহরের একাংশ জলবন্দি ছিলই। রাতে নদীর জলে ভাসে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডই প্লাবিত হয়। হাঁটু জল জমে সদর হাসপাতাল চত্বরেও। কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে যায় দিনবাজারে। নিচু এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে জলের স্রোত ঘরের চাল ছুঁয়ে যায়। জলবন্দি হয়ে পড়েন অন্তত ২০ হাজার মানুষ। পুরসভা থেকে উদ্ধার কাজে দেশি নৌকা নামানো হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্যই শহর বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, ভুগেছেন বাসিন্দারা।
পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা করলা নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। রবিবার রাত থেকে কাউন্সিলারদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজ শুরু হয়েছে। দুটি দেশি নৌকা উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে। আরও দশটি নৌকা তৈরি রাখা আছে। প্রয়োজনে ত্রাণ শিবির খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের পরেশ মিত্র কলোনি থেকে টিকিয়াপাড়া পর্যন্ত নদী লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মণ্ডল বলেন, “নদী ফুলেফেঁপে ওঠায় বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা কাজে আসেনি। উল্টে নিকাশি নালা দিয়ে নদীর জল বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।”
পুরসভার কর্তারা জানান, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি পাড়া ও পরেশ নগর কলোনির। এখানে জলের স্রোত ঘরের চাল ছুঁয়ে যায়। স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলার পরিমল মালোদাস জানান, গভীর রাতে দেশি নৌকা নামিয়ে জলবন্দি প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিপন্ন পরিবারের লোকজন পাকা সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে মাসকলাই বাড়ি শ্মশান ঘাট ও বয়েলখানা বাজার। শ্মশানে হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়েছে। দোকানের ভিতর দিয়ে জলের স্রোত বয়ে চলায় এ দিন বয়েলখানা বাজার বসেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপুল সাহা, নকুল দাস বলেন, “দোকানের ভিতরে এক হাঁটু জল দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে।” করলার জলে ভেসেছে সমাজপাড়া, রায়কত পাড়ার নিচু অংশ। অন্যদিকে নিকাশি নালাগুলি নদীর জলে ভরে থাকায় নিউ টাউন, মহামায়াপাড়া, দেশবন্ধু পাড়া, পাণ্ডাপাড়ায় বৃষ্টির জমা জলে বাসিন্দাদের ভোগান্তি বাড়ে। দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা তথা আনন্দচন্দ্র কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক মানস পাল বলেন, “কলকাতা থেকে ফিরে দেখি সবই জলে ভাসছে। নিকাশি নালা দিয়ে জল বাইরে যাচ্ছে না।”
করলা নদী সংলগ্ন শহরের জনবহুল দিনবাজার এলাকা রবিবার রাত থেকে জলবন্দি হয়ে পড়ে। সোমবার সকালে বাজারের অলিগলি নদীর চেহারা নেয়। কোথাও এক কোমর আবার কোথাও এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। দোকানের ভিতরেও ছিল জলের স্রোত। নিরুপায় ব্যবসায়ীরা বাজার ছেড়ে করলা সেতুতে আনাজপাতি ও মাছের দোকান খুলে বসেন। দিনবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবু চৌধুরী জানান, সাড়ে চারশো ব্যবসায়ীর অনেকে দোকানে মজুত সামগ্রী রক্ষা করতে পারেননি। দিনবাজারের মতো জলে ভেসেছে সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন চত্বর। হাঁটু সমান জলে দাঁড়িয়ে রোগীর বাড়ির লোকজনকে এদিন আউটডোরে টিকিট করতে হয়েছে। হাসপাতাল সুপার পার্থ দে বলেন, “চিন্তায় ছিলাম। ভাগ্যিস দুপুরের পরে নদীর জল কমেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy