মালদহ উত্তরের প্রার্থী সৌমিত্র রায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন মুকুল রায় ও মিঠুন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মালদহে কোনও জনসভা করার কথাই ছিল না। তাই জেলা প্রশাসনেরও মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিয়ে আগাম কোনও প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু মমতা এ দিন এদিন বিকেল সাড়ে ৪ টে নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুর সফর সেরে মালদহ বিমনবন্দরে হেলিকপ্টার থেকে নেমে শুনতে পান, মিঠুন চক্রবর্তী ও মুকুল রায় পুরাতন মালদহের তাঁতিপাড়ায় জনসভা করছেন। তখন হোটেলে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সোজা তাঁতিপাড়া জনসভায় হাজির হন। তাতে হকচকিয়ে যায় জেলা পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কংগ্রেস ছিলাম। কংগ্রেস করতাম। যেদিন কংগ্রেস তাদের দলকে সিপিএমের কাছে বিক্রি করে দিল, সেদিন আমি তৃণমূল গঠন করি।” তিনি বলেন, “মালদহ এতদিন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছিল। কংগ্রেস যেখানে প্রার্থী দিয়েছিল, আমরা ওদের জন্য মন প্রাণ দিয়ে খেটেছিলাম। কিন্তু কংগ্রেস নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে আমাদের প্রার্থীদের হারিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” তৃণমূল নেত্রী জানান, সেদিনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। তাই এ বার মালদহ পাঁচ দিন থেকে মালদহ, দুই দিনাজপুর ও মুশির্দাবাদে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি বলেন, “আজ আমার দক্ষিণ দিনাজপুরে সভা ছিল। মালদহে সভা করার কোনও কথা ছিল না। কিন্তু মালদহে নেমে যখন শুনলাম মিঠুন ও মুকুলরা পুরাতন মালদহ সভা করছে। তাই ওদের সঙ্গে দেখা করতে এখানে চলে এলাম।” এদিন তাঁতিপাড়া জনভায় মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “এ বার দার্জিলিংয়ে তৃণমূল জিতবে। বিজেপি যে বাংলা ভাগ করার চক্রান্ত করছে সেটা রুখব।”
এদিন রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন বলেন, “সমীক্ষা বলছে তৃণমূলের দিকে পাল্লা ভারী। কাটাকুটির ভোটের খেলায় খেলবেন না। ভোট কাটাকুটিতে নষ্ট করবেন না। এতে পশ্চিমবঙ্গের ভালো হবে না। তৃণমূলের প্রার্থীদের যত বেশি করে জেতাবেন, তত বেশি দিদি দিল্লি থেকে বাংলার জন্য টাকা আনতে পারবেন। বোতাম টিপবেন এখানে সরকার গড়ব ওখানে।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আগাম কাউকে না জানিয়ে হুট করে পুরাতন মালদহের তাঁতিপাড়ার জনসভায় হাজির হওয়ায় সমস্যায় পড়ে প্রশাসন। মিঠুনের হেলিকপ্টারও জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে না নেমে মালদহ বিমানবন্দরে নামে। ঠিক ছিল, মিঠুনের হেলিকপ্টার বিকেল সাড়ে চারটের সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে নামবে। সেই মতো রাজ্যের দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর সেখানে হাজির হন মিঠুনকে স্বাগত জানাতে। হেলিকপ্টার আসছে ভেবে পুলিশের পক্ষ থেকে ধোঁয়া জ্বালানো হয়। কিন্তু হেলিকপ্টার আর নামছে না। মন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্তারা সবাই উপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণ পরই খবর আসে মিঠুনের হেলিকপ্টার মালদহ বিমানবন্দরে নেমেছে। মন্ত্রী, পুলিশের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তরা গাড়ি নিয়ে তখন বিমানবন্দরের দিকে ছুট লাগান। সবাই যখন বিমানবন্দের ঢুকছেন তখন মুকুল রায় মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে বেরিয়ে আসছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁতিপাড়া সভা শেষ করে নারায়ণপুর হোটেলের উদ্দেশ্য রওনা হওয়ার পর পুলিশ কর্তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম অর্পিতা ঘোষের। কুমারগঞ্জের সভায়। ছবি: অমিত মোহান্ত।
এ দিন দুপুর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরে কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুরে পর পর জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কুমারগঞ্জের মঞ্চে তাঁর অনুরোধে প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ গান গেয়েছেন। অর্পিতা প্রার্থী হওয়ার পরে তিনি বালুরঘাটে বহিরাগত এই প্রশ্ন তুলে দলের মধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। দলের একাংশের সেই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ্যেও চলে আসে। এ দিন মমতা বালুরঘাটের উত্তমাশা এলাকার আদর্শ হাইস্কুলের মাঠে আয়োজিত জনসভায় সেই প্রসঙ্গই তুলে বলেন, “আরএসপি প্রচার করছে অর্পিতা বহিরাগত। তাহলে আমি কি বহিরাগত? আপনারাই বলুন। আমি বাংলার মেয়ে। অর্পিতাও বাংলার মেয়ে।” মঞ্চে অর্পিতাকে কাছে টেনে নিয়ে দলনেত্রী বলেন, “এই প্রথম এই কেন্দ্রে একজন মহিলা প্রার্থী লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। অর্পিতা ভালো মেয়ে ওকে ভোট দিয়ে দিল্লিতে পাঠান। এতদিন পার্লামেন্টে বালুরঘাটের নাম কেউ বলেনি, আমি বলছি অর্পিতা আপনাদের দাবি আদায় করে আনবে।”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নাম না করে নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করেন। সেই সঙ্গে রাজ্যে তাঁর আমলে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তা-ও জানান। এ দিন তিনি রেলকেও সমালোচনা করেছেন। মমতা দাবি করেন তিনি একলাখি-বালুরঘাট লাইনে সিগন্যালিংয়ের জন্য টাকা দিয়েছিলেন, বালুরঘাট থেকে হিলি রেলপথ সম্প্রসারণের কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর আমলেই বুনিয়াদপুরে ওয়াগন ফ্যাক্টরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তাঁর পরে রেলের সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।” বালুরঘাট কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী বিমলেন্দু সরকার অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর জনভিত্তি কতটা, তা এদিনের সভাগুলি থেকে বোঝা যায়। এমনই তার দলের অবস্থা যে, লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্লকে ব্লকে সভা করতে হচ্ছে। এরপর তাঁকে পাড়ায় পাড়ায় সভা করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy