Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার সাধ মিটল না পুতুলের

বিয়ে হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন তরুণীটি। তবু মনের জোরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি এই বছর। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বুধবার পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা পুতুল সোরেন (২০)। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎপরতায় সেখানেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু ওই দিনই একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি। তার বারো ঘণ্টা পরে বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর।

এই কন্যাসন্তানটির জন্ম দেওয়ার ১২ ঘণ্টা পরেই মারা যান মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পুতুল সোরেন। —নিজস্ব চিত্র।

এই কন্যাসন্তানটির জন্ম দেওয়ার ১২ ঘণ্টা পরেই মারা যান মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পুতুল সোরেন। —নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

বিয়ে হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন তরুণীটি। তবু মনের জোরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি এই বছর। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বুধবার পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা পুতুল সোরেন (২০)। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎপরতায় সেখানেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু ওই দিনই একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি। তার বারো ঘণ্টা পরে বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর।

হাসপাতালের প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ প্রদীপ মণ্ডলের অধীনে পুতুল চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর দাবি, “চার চিকিৎসকের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে বহু চেষ্টা করেও পুতুলকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।” তিনি জানান, “স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কন্যাসন্তান প্রসব করার পর ডাক্তারি ভাষায় পালমোনারি এমবলিসম রোগে আক্রান্ত হন পুতুল। হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তিনি মারা যান।”

২০১৩ সালের মে মাসে ওই পঞ্চায়েতের রাঙাপুকুর এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব হেমব্রমের সঙ্গে করণদিঘির মাটিয়ারি এলাকার পুতুলের বিয়ে হয়। বিপ্লব চাষবাসের কাজ করেন। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে স্নাতকস্তরে প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। পুতুলও রায়গঞ্জের উদয়পুর হাইস্কুলের ছাত্রী ছিলেন। মাধ্যমিকের আসন পড়েছিল রায়গঞ্জের মোহনবাটি পার্বতীদেবী গার্লস হাইস্কুলে।

গত বছরের মে মাসে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ নেওয়া ও ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন তিনি।

বুধবার মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়েন পুতুল। তাঁর শ্বশুর সুধীর হেমব্রম ও শাশুড়ি গৃহবধূ মিরি টুডু জানান, এ বছর পুতুলের শারীরিক পরিস্থিতির কথা ভেবে তাঁরা তাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু মানেননি পুতুল। পরের বছরের জন্য অপেক্ষা না করে মনের জোরে পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল, মাধ্যমিক পাশ করে টিউশন পড়াবেন, স্বনির্ভর হবেন। পুতুলের মা লক্ষ্মী টুডু বলেন, “টিউশন পড়িয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ওর পূরণ হল না।”

তবে পুতুলের কাকিমা বীণা মুর্মুর অভিযোগ, বুধবার রাতে তাঁর ভাইঝি-র শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রসূতি বিভাগে থাকতে দেননি। নার্স ও নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছেন। যদিও হাসপাতালের সুপার অনুপ হাজরা বলেন, “পুতুলের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কোনও নার্স বা নিরাপত্তারক্ষী দুর্ব্যবহার করেছেন বলে আমার কাছে কোনও অভিযোগ হয়নি।” তবে তিনি জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিবারের লোকজনদের থাকার নিয়ম নেই।

এ দিন পর্ষদ নিযুক্ত মাধ্যমিক পরীক্ষা মনিটরিং কমিটির উত্তর দিনাজপুর জেলা আহ্বায়ক ব্যোমকেশ বর্মন পুতুলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানান। পুতুলের কন্যাসন্তানটি অবশ্য সুস্থই রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gaur acharya raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE