Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মিলছে না সেচের জল, ফের বাকলা খাল খোঁড়ার দাবি

সেচের জল না মেলায় ফের বাকলা খাল খোঁড়ার দাবিতে সরব হয়েছেন শামুকতলার মহাকালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কৃষকরা। এই নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এক দশক আগেও বাকলা খালের জল দিয়ে গোটা মহাকালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ১৫০০ একর কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা হত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

সেচের জল না মেলায় ফের বাকলা খাল খোঁড়ার দাবিতে সরব হয়েছেন শামুকতলার মহাকালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কৃষকরা।

এই নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এক দশক আগেও বাকলা খালের জল দিয়ে গোটা মহাকালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ১৫০০ একর কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা হত। ফি বর্ষায় হাজার হাজার বিঘা জমির উপর পলিমাটির প্রলেপ পড়ত। জমি হয়ে উঠত উর্বর। বছরে তিন চারটি ফসল চাষ করা কোনও সমস্যা হত না। জমা জলে পাট পচানোর কাজও করা যেত।

শুধু সেচ নয়, ওই বাকলা খালে মিলত প্রচুর নদীয়ালি মাছ। তা দিয়েই তিন চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের মাছের চাহিদা মিটত। কিন্তু ক্রমশ বাকলা খালের নাব্যতা কমে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে ছবিটা পাল্টেছে। ওই খাল থেকে সারা বছর জল পাওয়া তো দূরের কথা, বর্ষা কালেও জল নেমে যাচ্ছিল। ফলে জমির উর্বরতাও কমতে শুরু করে। সেচের অভাবে উৎপাদন মার খেতে শুরু করে। অন্তত আট হাজার কৃষক পরিবার এতে সমস্যায় পড়েন।

সমস্যা মেটাতে বাসিন্দারা বাকলা খাল খোঁড়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ব্লক এবং জেলা প্রশাসনের কাছেও দরবার শুরু করেন তাঁরা। অবশেষে দাবি পূরণে উদ্যোগী হয় ব্লক প্রশাসন। এক কোটি আটত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ করে ২ কিলোমিটার লম্বা বাকলা খাল খোঁড়ার কাজে হাত দেওয়া হয়।

কিন্তু সামান্য কাজ করে খনন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। এলাকার চাষিদের অভিযোগ, খালটি ধওলা নদী থেকে শুরু হয়ে মহাকালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বুক চিরে ভাটিবাড়ি গ্রাম ছুঁয়ে গদাধর নদীতে গিয়ে মিশেছে। ২০১২ সালের ২৯ মার্চ কোদাল হাতে মাটি কেটে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিডিও।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলাকার ১৫০০ একর কৃষি জমিতে সেচের জলের ব্যাবস্থা ও মাছ চাষের প্রকল্প শুরু করার লক্ষে ১০০দিনের কাজ প্রকল্পে খনন শুরু করা হয়। প্রথম দফায় ৭ ফুট গভীর ৪০০ মিটার খোড়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।

আরও তিন দফায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু প্রথম দফায় ২০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর খনন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আলিপুদুয়ার ২ এর বিডিও সজল তামাঙ্গ বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা না আসায় বাকলা খাল খননের কাজ দ্রুত শুরু করা যাচ্ছে না। দ্রুত যাতে খনন প্রক্রিয়া শুরু হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হব।”

স্থানীয় বাসিন্দা সুবল পণ্ডিত, পরিতোষ দেবনাথ, গম্ভীর সিং বসুমাতার অভিযোগ, খনন না হওয়ায় সেচের জল তো মিলছেই না। প্রতি বর্ষায় কৃষিজমি ও বাঁশ বাগান ভাঙনের মুখে পড়ছে।

গত কয়েক বছরে প্রায় কুড়ি বিঘা কৃষি জমিতে ভাঙন হয়েছে। এটা বন্ধ করতে বাকলা খাল খোঁড়া জরুরি। তাঁরা জানান, একসময়ে এই বাকলা থেকে বোয়াল, মৌরলা, সরপুটি, ট্যাংরা, বোয়াল, সাটি-সহ সমস্ত নদিয়ালি মাছ বিপুল পরিমাণে মিলত। মাছের কোনও অভাব থাকত না। বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হত ১৫-১৮ মন। এখন ৫ থেকে ৭ মনের বেশি ধান উৎপাদন হয় না। তাঁরা বলেন, “বাকলা খাল খনন শুরু হওয়াতে আশা আলো দেখেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shamuktala bakla canal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE