Advertisement
১১ মে ২০২৪

যৌনপল্লি থেকে ফিরল নিখোঁজ মেয়ে, আমবাড়িতে আত্মঘাতী বাবা

মেয়ে নিঁখোজ ছিল ১৭ দিন। নানা জায়গায় সন্ধান করেছেন। পাননি। শেষ পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যায় খবর পেলেন, মেয়েকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল যৌনকর্মীদের পল্লিতে। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির সামনে আমগাছে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গেল তাঁর।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৯
Share: Save:

মেয়ে নিঁখোজ ছিল ১৭ দিন। নানা জায়গায় সন্ধান করেছেন। পাননি। শেষ পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যায় খবর পেলেন, মেয়েকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল যৌনকর্মীদের পল্লিতে। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির সামনে আমগাছে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গেল তাঁর।

সেই কিশোরী নিখোঁজ ছিল ১৪ জুলাই থেকে। শিলিগুড়ি সংলগ্ন আমবাড়ি ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের হয় ১৬ জুলাই। পুলিশ তদন্তে নেমে অপহরণের মামলা দায়ের করে। ৩ অগস্ট মেয়ের ফিরে আসার আগে পর্যন্ত প্রতিদিন মেয়ের খোঁজে থানায় যেতেন তার বাবা। মধ্য পঞ্চাশের মানুষটিকে কান্নাকাটি করতেও দেখেছেন অনেকে। কিন্তু মেয়েকে যৌনকর্মীদের পল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এ খবর পাওয়ার পরে আর তা সহ্য করেত পারেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে মিসড্ কলের সূত্রে ওই কিশোরীর সঙ্গে এক যুবকের আলাপ হয়। আলাপ থেকে প্রেম। সেই যুবকের কথাতেই বাড়ি ছাড়ে কিশোরী। কিন্তু সেই যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাকে তারপরে সে তুলে দেয় তারই বন্ধুদের হাতে। সেখান থেকে তার স্থান হয় কোচবিহারের যৌনকর্মীদের পল্লিতে।

তার বাবা আলু-পেঁয়াজ কিনে আমবাড়ি, বেলাকোবা, ভুটকির হাট, সাহুডাঙ্গি হাটে বিক্রি করতেন। সেই সামান্য আয়ে সংসার চলত না। তাঁর স্ত্রী বাড়ির কাছের একটি চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করেন। তবে ছোট বাগান বলে কাজ সব সময় থাকে না। মেয়ের চেয়ে দেড় বছরের বড় ছেলেকে অভাবের কারণে পড়াতে পারেননি। তাই বাবা চেয়েছিলেন মেয়েটা অন্তত পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। তাই নিজেরা কষ্টে থেকেও মেয়েকে পড়াচ্ছিলেন। মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্রী। কিশোরীর পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েকে মানুষ করতে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতেন তার বাবা।

স্থানীয় বাসিন্দা কমল সরকার বলেন, ‘‘মেয়েটি দুষ্কৃতীদের খপ্পর থেকে ফিরে এলেও বাড়ির লোকের সঙ্গে ভাল করে কথা বলেনি। কে নিয়ে গিয়েছিল, কেন নিয়ে গিয়েছিল বারবার তার বাবা জিজ্ঞাসা করাতেও কোনও উত্তর দেয়নি সে। তার পর থেকেই একেবারে গুম হয়ে রয়েছে।’’

সন্ধ্যায় মেয়ের সঙ্গে থানাতে দেখা করে অন্যরা বাড়িতে ফিরে এলেও তিনি ফিরে যাননি। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও রাত বাড়তেই খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। রাতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ভোর সাড়ে চারটেতে উঠে বাড়ির লোকেরা ফের খুঁজতে বের হন। কিন্তু বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে ঝোপের মধ্যে থাকা আমগাছটি খেয়াল করেননি কেউ। সামনের বাড়ির নির্মলা ছেত্রী জল তুলতে গিয়ে প্রথম দেখেন গাছে ঝুলছেন ওই ব্যক্তি। ঘটনার পর থেকে এলাকা থমথমে। গোটা পাড়াই যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE