রসরাজ সাহা।—নিজস্ব চিত্র।
এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে কোচবিহারে। পুলিশ জানিয়েছে, রসরাজ সাহা (২৮) নামে ওই যুবক সোমবার রাতে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোচবিহার জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই যুবক আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা। ঘটনায় তাঁর বাড়ির লোকজনের সন্দেহ যুবকের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। যদিও কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার নিউ কোচবিহার স্টেশন সংলগ্ন বাইশগুড়ি এলাকার বাসিন্দা তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন সে কথা অস্বীকার করেছেন। এখনও কোনও খুনের অভিযোগ দায়ের হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।”
রসরাজের বাবা দিলীপবাবুর অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুন করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁকে সংসার থেকে আলাদা থাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তাঁরা। রসরাজের শ্বশুর বিশ্বজিৎ সাহার অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করত রসরাজের পরিবারের লোকজন। রসরাজকে শ্বশুরবাড়ি যেতে দিতেও বাধা দিতেন তাঁরা। ওই রাতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই যুবক।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে রসরাজের সঙ্গে বিশ্বজিৎবাবুর মেয়ের বিয়ে হয়। রসরাজ সাইকেলের মেকানিক। সাইকেলের যন্ত্রাংশ বিক্রির একটি দোকানও রয়েছে তাঁর। দিলীপবাবুর মেজ ছেলে রসরাজ। তাঁর বড় ছেলে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে আলাদা সংসারে থাকতেন। রসরাজ বিয়ের পরেও বাবা-মায়ের সঙ্গে একই পরিবারে থাকতেন। দিলীপবাবুর অভিযোগ, বিষয়টি অপছন্দ ছিল তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির। তাঁরা রসরাজকে আলাদা হওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ তৈরি করতে থাকেন। এর মধ্যেই তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। গত কয়েক মাস ধরে তিনি তাঁর বাপের বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন। রসরাজ প্রতি সোমবার শ্বশুরবাড়ি যেতেন। আবার মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফিরে যেতেন। তাঁদের দাবি, ওই রাতে সাড়ে ৭টা নাগাদ নিজের মোটরবাইক নিয়ে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে বের হন রসরাজ। আলিপুরদুয়ারে ব্যবসায়িক কাজ সেরে তিনি রাত ৯ টা নাগাদ শ্বশুরবাড়ি পৌঁছন। বাবাকে ফোন করে সে কথা জানানও তিনি। তার আধ ঘণ্টার মাথায় ছেলের অসুস্থতার কথা রসরাজের বাবাকে জানান তাঁর শ্বশুরবারির লোকেরা। তারও কিছু ক্ষণ পরে দ্বিতীয় ফোন করে রসরাজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয় দিলীপবাবুকে।
দিলীপবাবু বলেন, “আধ ঘণ্টায় কী এমন ঘটল যে আমার ছেলেটার মৃত্যু হল। ও সুস্থ ছিল। ঘণ্টা দেড়েক পরে হাসপাতালে গিয়ে আমরা মৃত্যুর কথা জানতে পারি। তাঁকে খুন করা হয়েছে বলেই আমাদের সন্দেহ। ওর গলায় ও বুকে দাগ রয়েছে।” বিশ্বজিৎবাবু অবশ্য দাবি করেন, শ্বশুরবাড়ি গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন রসরাজ। তাঁকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই তিনি ছটফট করতে থাকেন। প্রথমটায় বিশ্বজিৎবাবু ভেবেছিলেন তিনি নেশা করেছেন। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে পরিস্তিতি আরও খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যান জামাইকে। তিনি বলেন, “আমাদের বাড়িতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে রসরাজ। আমরা ওকে হাসপাতালেও নিয়ে যাই। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।” মঙ্গলবার কোচবিহারেই ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “রিপোর্ট হাতে পেলেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy