ভরসা মোমের আলো। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
এখনও সেভাবে বর্ষার দেখা নেই উত্তরবঙ্গে। তার উপরে রোজই কয়েক দফায় লোডশেডিং চলায় দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। মালদহ থেকে আলিপুরদুয়ার, হিলি থেকে সঙ্কোশ, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি—সর্বত্র একই ছবি। একই অভিযোগ। ফারাক শুধু সময়ের। কোথাও টানা ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও ১ ঘণ্টা। আবার কোথাও ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট। কিন্তু, ভুগতে হচ্ছে সকলকেই। সরকারি-বেসরকারি অফিসেও সমস্যা চলছে।
জেলা সদর হাসপাতালে জেনারেটর থাকলেও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা গরমে নাকাল হচ্ছেন। কেন এমন হাল, তা নিয়ে নানা জেলার বিদু্ৎ বন্টণ বিভাগের আধিকারিকদের মধ্যে নানা মত শোনা গিয়েছে। কেউ জানিয়েছেন, লাইন সারাতে গিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও বলা হতচ্ছে, ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়ায় তা সারাতে দেরি হচ্ছে। আবার কোথাও বিদু্ৎ বন্টণ সংস্থার অফিসারদের মুখে কুলুপ।
প্রথমে মালদহের কথাই ধরা যাক। কালিয়াচক ২, হবিবপুর ও বামনগোলা এবং পুরাতন মালদহ ব্লকে লোডশেডিং এবং লো ভোল্টেজের চরম সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ব্লকগুলিতে রোজ নিয়ম করে দুই বার করে লোডশেডিং হয়। বেলা ১১ টা এবং ১২টার মধ্যে, আর রাতের দিকে ৮টা থেকে ১০ টার মধ্যে এই গ্রামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। দিনের অধিক সময়ই লো ভোল্টেজ থাকে ওই ব্লকগুলিতে। সম্প্রতি ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। পুরাতন মালদহের মুচিয়াতে সপ্তাহ খানেক আগে এর লোডশেডিং এবং লো ভোল্টেজের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন। দক্ষিণ মালদহের ডিভিশনাল ম্যানেজার শৈবাল মজুমদার বলেন, ‘‘সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ায় কিছু এলাকায় সমস্যা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে।’’ কিন্তু ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অন্য কথা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, লোডশেডিং রোজই কয়েক দফা হচ্ছে।
পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর জুড়ে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। ওই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে জেলার ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যেও। তাঁদের দাবি, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের জেরে ব্যবসা মার খাচ্ছে। এ দিকে, লোডশেডিংয়ের জেরে প্রচণ্ড গরমে সমস্যায় পড়েছেন জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের পড়ুয়ারা। বিদ্যুত বন্টণ কোম্পানির রায়গঞ্জের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সুনীল কুমারের দাবি, ‘‘প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকার ট্রান্সরফর্মার মাঝে মধ্যে বিকল হয়ে পড়ছে। সেই কারণে, গত এক সপ্তাহ ধরে মাঝে মধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে। তাঁর সংযোজন, জেলার নানা জায়গায় ট্রান্সফর্মার মেরামত ও নতুন ট্রান্সফর্মার লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, বুধবার থেকে লোডশেডিংয়ের সমস্যা আর থাকবে না।’’
গত এক সপ্তাহ ধরে জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, হেমতাবাদ, করণদিঘি, ইসলামপুর, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া ও চোপড়া ব্লকে দিন ও রাত মিলিয়ে দফায় দফায় কোথাও পাঁচবার আবার কোথাও আটবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে প্রতিটি এলাকাতেই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম ও রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ীর দাবি, ‘‘প্রতি বছরই গরমের সময়ে জেলা জুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। কেন চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার বসানো হচ্ছে না? উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু করা হচ্ছে না?’’
রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের জেরে প্রচন্ড গরমে ক্লাস করতে গিয়ে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়ছে।’’ কালিয়াগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ পীযূষ দাসের দাবি, কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের জেরে কিছু দিন ধরে কলেজের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে।
রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের সহকারী সুপার গৌতম দাস জানান, হাসপাতালে জেনারেটরটি কম ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় লোডশেডিংয়ের সময়ে সমস্ত ওয়ার্ডে সমান ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় না। তিনি বলেন, ‘‘লোডশেডিংয়ের সময়ে গরমে পুরুষ ও মহিলা মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের রোগীরা সমস্যায় পড়েন।’’ ইটাহারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় পালের অভিযোগ, ‘‘ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি জেনারেটর থাকলেও স্বাস্থ্য দফতর জ্বালানি তেল বরাদ্দ না করায় সেটি দীর্ঘ দিন ধরে চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’’
জলপাইগুড়ির মালবাজার মহকুমার গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। বিদ্যুতের তারে গাছ ভেঙে পড়লেও বিদ্যুৎকর্মীদের এসে পরিষেবা স্বাভাবিক করতেই ৮ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লেগে যায় বলে শহর লাগোয়া বড়দিঘি, ডামডিম, তেশিমিলার মতো গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়েছে এলাকায়। মালবাজারের জেরক্স ব্যবসায়ী দেবায়ন মুখোপাধ্যায় বা বড়দিঘি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ মোস্তাকিমদের কথায়, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরে খবর দিলেও উন্নত পরিষেবা মেলে না।’’ তবে মালবাজার বিদ্যুৎ বন্টণ কোম্পানির আধিকারিক অংশুমান রায় জানান, গ্রামীণ এলাকায় কর্মীদের পৌছাতে যে টুকু দেরি হয় সেই সময়টুকু বাদ দিলে মালবাজার এলাকায় সামগ্রিক ভাবে লোডশেডিং সমস্যা নেই। আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু বলেন, “কয়েকদিন ধরে শহর ও আশপাশের এলাকায় লোডশেডিং চলায় দুর্ভোগ বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy