Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শহর জুড়ে অটোর দাপটে নাজেহাল বাসিন্দারা

ফুলবাড়ি থেকে যাওয়ার কথা কোর্ট মোড়। তা অটোর সামনে লেখাও রয়েছে। কিন্তু ফুলবাড়ি থেকে সিটি অটোর অপেক্ষায় দাঁড়ালে বেশির ভাগ অটো চালকের বক্তব্য, অটো যাবে তিনবাতি মোড় পর্যন্ত। কেন তার কোনও উত্তর নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

ফুলবাড়ি থেকে যাওয়ার কথা কোর্ট মোড়। তা অটোর সামনে লেখাও রয়েছে। কিন্তু ফুলবাড়ি থেকে সিটি অটোর অপেক্ষায় দাঁড়ালে বেশির ভাগ অটো চালকের বক্তব্য, অটো যাবে তিনবাতি মোড় পর্যন্ত। কেন তার কোনও উত্তর নেই। তাড়া থাকলে বাধ্য হয়ে তিনবাতি মোড় পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যাবে, কিছুক্ষণ পরে ওই অটোর চালকই কোর্ট মোড় যাবে বলে যাত্রী খঁুজছেন। অভিযোগ, জিজ্ঞাসা করলে ‘কোর্ট মোড় গেলে আবার গোটা ভাড়া লাগবে। ইচ্ছে হলে যাবেন, না হলে যাবেন না’ বলে কার্যত হুমকি দেন কিছু অটো চালক।

ফুলবাড়ি থেকে তিনবাতি মোড়ের ভাড়া সাত টাকা ও পরে আবার কোর্ট মোড় পর্যন্ত সাত টাকা। একবারে ফুলবাড়ি থেকে কোর্ট মোড় গেলে ভাড়া দিতে হতো ১০ টাকা। তা না হওয়ায় চার টাকা বেশি লাগছে। এ ভাবেই যাত্রীদের থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে একশ্রেণির অটো চালকের বিরুদ্ধে। ওই রুটের নিত্যযাত্রী মিলন রায় বলেন, “কিছু বললে পাল্টা হুমকি দেন অটো চালকেরা। তাড়া থাকায় সময় নষ্ট করার উপায় থাকে না। ওঁদেরও দাপট বাড়তে থাকে।”

সুকনা থেকে কোর্ট মোড় যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টা খানেক হয়ে গেল কোনও অটোর দেখা নেই। ততক্ষণে স্কুল কলেজ ছুটি হয়েছে। ভিড়টা শালবাড়ি ও দাগাপুরে বেশি। সুতরাং কোর্ট মোড় থেকে আসা অটোগুলো সেখান থেকেই ঘুরিয়ে নেন চালকেরা। অপেক্ষা বাড়তে থাকলেও অটোর দেখা পাওয়া যায় না।

শালবাড়ির শিলিগুড়ি ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই সিটি অটোর চালকদের মর্জিমাফিক আচরণে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। কয়েকজন ছাত্রী জানান, বিকেলের পরে বেশিরভাগ অটোই দার্জিলিং মোড়ে নামতে বাধ্য করে। কখনও আবার সুকনা থেকে আশিঘর যাওয়ার কথা থাকলেও কোর্ট মোড়ে নামিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে কয়েকজন অটো চালক মিলে ছাত্রছাত্রীদের ঘিরে ধরার ঘটনাও রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে নৌকাঘাট হয়ে কোর্ট মোড় রুটেও একই অভিযোগ। প্রায় সমস্ত অটোয় মর্জিমাফিক থেমে যায়। উপরন্তু, অনেক চালক পাশে তক্তা লাগিয়ে যাত্রী নিয়ে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করেন। সামনে টুলবক্সের উপরে বা অতিরিক্ত কাঠের পাটাতন বানিয়ে তার উপরে একাধিক যাত্রী বসানো হচ্ছে। তাতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত বছর জলপাই মোড়ের কাছে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই একটি অটো উল্টে যায়। তাতে আহত হন একাধিক যাত্রী। আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে স্টেশন ফিডার রোডে কিছুদিন আগেই। তারপরেও একইভাবে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে চলছে অটোগুলি। পুলিশ সবই জানে। তবু তাঁদের হেলদোল নেই।

পুলিশ জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও অভিযোগ জমা পড়ে না। ফলে কোনও পদক্ষেপ করা যায় না। কিন্তু শহরবাসী জানিয়েছেন গোটা রাস্তাতেই পুলিশের নজরের সামনেই এগুলি ঘটে। মিলনপল্লির বাসিন্দা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মী অভ্রজ্যোতি পোদ্দার বলেন, “কোর্ট মোড় থেকে আসা অটোগুলি প্রতিদিন বোঝাই হয়ে আসে। সামনে বসতে রাজি না হলে যাওয়াই হবে না। তাই বাধ্য হয়ে যেতে হয়। তবে সবসময় ভয়ে থাকি কখন কী ঘটে?”

পুলিশ সব জেনেও হাত গুটিয়ে রয়েছে কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহনের দাবি, “ভোটের জন্য ব্যস্ততা থাকায় অভিযান কম হচ্ছে। শীঘ্রই লাগাতার অভিযান হবে।” পরিবহণ বিভাগের প্রধান তথা দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব কয়েক মাস আগে জানিয়েছিলেন লাগাতার অভিযান চালানো হবে। তার পরে দু’দিন অভিযান চললেও শেষ পর্যন্ত তা আর চলেনি। জেলাশাসক বলেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার জন্যই অভিযান চালানো যায়নি। সমস্ত মিটে গেলেই ফের ধরপাকড় করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri auto harrasement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE