শিলিগুড়িতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তা।—নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিলিগুড়িতে নজর এড়িয়ে দেদার পিস্তল ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে সতর্কবার্তা এসেছে পুলিশের কাছেও।
শিলিগুড়ি লাগোয়া বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে এই বেআইনি পিস্তল ঢুকলেও মূলত বিহারের পাচার চক্রই বেশি সক্রিয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ি ও নকশালবাড়ি থানাকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে দার্জিলিং পুলিশের পক্ষ থেকে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে লাগোয়া শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকার পুলিশকেও। বৃহস্পতিবারই ফাঁসিদেওয়া থানার বিধাননগর ফাঁড়ি এলাকার একটি হোটেল মালিককে পিস্তল কেনাবেচার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে শিলিগুড়ি আদালতে পেশ করা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তও। এ দিন তিনি শিলিগুড়িতে সমস্ত পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠকও করেন।
শিলিগুড়ি লাগোয়া দার্জিলিং পুলিশের সমস্ত থানা এলাকাতেই দুষ্কৃতীরা অস্ত্র আমদানি করছে বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে। ফাঁসিদেওয়া, বিধাননগর, ভীমভার, নকশালবাড়ি, বাতাসি, খড়িবাড়ি, অধিকারি, পানিট্যাঙ্কি এলাকায় কড়া নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-সহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছে এমন আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সতর্ক দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। নিয়মিত তল্লাশি চলছে। ধৃত ব্যবসায়ীকে জেরা করে আরও কিছু নির্দিষ্ট তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।’’
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকার বাগডোগরা, মাটিগাড়া, প্রধাননগর ও ভক্তিনগর এলাকায় বেশ কিছু পরিমাণে বেআইনি অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর। বিশেষ করে মাটিগাড়া ও প্রধাননগর থানার কয়েকটি এলাকার উপরে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। মাটিগাড়ার তুম্বাজোত, পতিরাম এলাকায় বেশ কিছু বাড়িতে গোপনে অস্ত্র রাখা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা অবশ্য সমস্ত বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তবে পিস্তল বা আগ্নেয়াস্ত্র ঢোকা নিয়ে আলাদা করে কোনও খবর নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়েই নজরদারি রয়েছে। নির্বাচনের আগে বলে নয়, কোনও রকম অসামাজিক কাজকর্ম বরদাস্ত করা হবে না।’’
মূলত ওয়ান শটার ও দেশি পাইপগানই বেশি আমদানি হচ্ছে বলে পুলিশের কাছে খবর। এ গুলি দামে সস্তা ও আকারে ছোট হওয়ায় এ গুলির চাহিদা বেশি। তবে বেশ কিছু বিদেশে তৈরি অটোমেটিক রিভলবারও রয়েছে। সেগুলির ওজন বেশি। এ গুলির দাম ৭ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে। অটোমেটিকের দাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। পুলিশ জানিয়েছে, শিলিগুড়ি মহকুমায় আনুমানিক কয়েক হাজার এই ধরণের পিস্তল ঢুকে পড়েছে। নির্বাচনের আগে অস্থায়ীভাবে আরও কয়েক হাজার আমদানি করা হতে পারে, যা নির্বাচনের সময় ভয় দেখানোর কাজে ব্যবহার হবে। সেগুলিকে এখন থেকেই চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে পুলিশ প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার যে হোটেল মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাকে প্রাথমিক জেরা করে জানা গিয়েছে মূলত বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের কয়েকটি এলাকা থেকে এই পিস্তলগুলি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শিলিগুড়িতে ঢোকে মূলত কিষানগঞ্জ ও ঠাকুরগঞ্জ সীমানা দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy