১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন রাহুল সিংহ। শনিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বিজেপির সদস্য পদ বাড়াতে গৌতম দেবের খাস তালুকে ঢুকে পড়লেন রাহুল সিংহ। শনিবার সকালে মন্ত্রীর পাড়া শিলিগুড়ি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। কলেজপাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে মোবাইলে ‘মিসড কল’ দিয়ে বিজেপির সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন জানালেন তিনি। তাতে সাড়াও দিয়েছেন একজন। বাকিরা রাহুলবাবুকে আপ্যায়ন করলেও চটজলদি সদস্য পদ নিতে রাজি হননি।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি কলেজ মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। যে গলিতে মন্ত্রীর বাড়ি সেখানে ঢুকে তিনি প্রথমে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুকমল মিত্রের বাড়িতে যান। পরিবারের সদস্যদের বিজেপির সদস্য করান রাহুলবাবু। বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুও সঙ্গে ছিলেন। পাশের বাড়িতে গেলে, রাহুলবাবুকে দোতলায় নিয়ে যান বাড়ির সদস্যরা। বেশ কিছুক্ষণ বসে আলোচনা করে রাহুলবাবু। এ দিন এলাকার ৫টি বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি।
কলিং বেলের শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে যান গৃহবধূ সোমা দত্ত। রাহুলবাবু তাঁকে জোড়হাতে নমস্কার জানিয়ে দলের সদস্য হওয়ার অনুরোধ জানান। উত্তরে সোমাদেবী দাবী করেন, তিনি আগেই সদস্য হয়েছেন। পরে ওই বধূ বলেন, “আগে কোনদিন রাজনীতি করিনি। তবে এবার বিজেপির সদস্য হয়েছি।”
রাহুলবাবুকে দেখে দোতলা থেকে নীচে নেমে আসেন অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী শ্যামল গুহ। একসময়ে বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়ে শ্যামলবাবু বলেন, “রাজ্যের সাময়িক পরিস্থিতির খবর সকলেই রাখেন। বাকিটা সময় বলবে।” মন্ত্রী গৌতমবাবুর বাড়ির উল্টো দিকে শ্যামলবাবুর বাড়ি। রাহুলবাবু ফিরে যাওয়ার পরে শ্যামলবাবু বলেন, “গৌতম (দেব) আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ও আমাকে দাদা বলে ডাকে। ওঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে, থাকবেও। আমি একসময়ে বামপন্থী সংগঠন করতাম। ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক জায়গায়, রাজনৈতিক বিশ্বাস অন্য জায়গায়।”
ঘটনাচক্রে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কলকাতায়। তাতে কী! তাঁর বাড়ির গলিতে খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতির অভিযানের খঁুটিনাটি খবর নিয়েছেন প্রতি মুহূর্তেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, মাত্র একজন সদস্য পদ নিলেও বিষয়টিকে হালকা ভাবে না নেওয়ার জন্য এলাকার কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন গৌতমবাবু।
যদিও নিজের পাড়ায় বিজেপির অভিযানকে তিনি গুরুত্ব দিতে রাজি নন বলে মন্ত্রী দাবি করেছেন। মন্ত্রী বলেন, “বাম আমলে একবার পুরসভা ভোটের সময় রাজ্যের এক মন্ত্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছিলেন, সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে তাঁকে ভোট দেওয়া। তবু সে বারও বাসিন্দারা আমাকেই জিতিয়েছিলেন। সবসময়ে এলাকার বাসিন্দাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। সুতরাং কে ওয়ার্ডে গিয়ে কী করল, তাতে আমার ভাবনার কিছু নেই।” মন্ত্রীর পাল্টা দাবি, “পরে অনেকেই আমাকে বলেছে বিজেপি বাড়ি গিয়ে ভুল বুঝিয়ে সদস্য করানোর চেষ্টা করেছে।”
পক্ষান্তরে, বিজেপির দাবি, মন্ত্রীর পাড়ায় যে ক’টি বাড়িতে দলের রাজ্য সভাপতি গিয়েছিলেন সবকটিতেই সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছে। দলের সদস্য হওয়ার পদ্ধতিও কাগজে লিখে বিভিন্ন বাড়ির সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছেন রাহুলবাবু। তাঁর দাবি, “কলেজপাড়া এলাকায় কার বাড়ি আমি জানি না। তা ছাড়া কোনও এলাকায় কারও বাড়ি হলেই তিনি এলাকার শেষ কথা হবেন, এমন নয়। এলাকার বাসিন্দারা খোলা মনে আমাকে অনেক সুখ-দুঃখের কথাই বলেছেন।”
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড শুধু গৌতমবাবুর বাড়ি-ই নয়, ১৯৮৮ সালে এই ওয়ার্ড থেকেই প্রথমবার কংগ্রেস কাউন্সিলর নির্বাচিত হন গৌতমবাবু। তার পর থেকেই ওয়ার্ডটি গৌতমবাবুর দখলে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে, শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা হন তিনি। একবার ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায়, বৌদিকে জিতিয়ে আনেন গৌতমবাবু। সে কারণে কলেজপাড়া তথা ১৭ নম্বর ওয়ার্ড মন্ত্রীর খাসতালুক তো বটেই শাসক দলের ‘দূর্গ’ বলেও পরিচিত। এখনও বিজেপি ওই ওয়ার্ডে একটি অফিসও খুলতে পারেনি। কয়েকজন অফিসের জন্য বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য রাজি হয়েও ‘অজ্ঞাত কারণে’ পিছিয়ে গিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
এ দিন বিকেলে শিলিগুড়ির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুর ভোটের প্রস্তুতিতে কর্মিসভা করেন রাহুলবাবু। সভার বক্তব্যে তিনি বলেন, “সকালে মন্ত্রীর পাড়ায় সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গিয়েছিলাম। যা সাড়া পেয়েছি, তাতেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্যের পরিবর্তনের পরিবর্তন আসতে বাকি নেই।” শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ৩ লক্ষ সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সভাপতি দাবি করেছেন। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিওয়াও উপস্থিত ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy