সড়ক অবরোধে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনা কিংবা মিড-ডে মিলের ত্রুটি নিয়ে ইদানীং পড়ুয়াদের সামনে রেখে আন্দোলন-অবরোধের ঘটনা দেখা গিয়েছে। তবে স্কুলের নাম পাল্টানো হবে কি না তা নিয়ে পড়ুয়ারা ক্লাস ছেড়ে জাতীয় সড়ক আটকে বসে থাকছে, তেমন সম্প্রতি দেখা যায়নি। শুক্রবার এমন ঘটনাই দেখা গেল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে।
ঘণ্টাখানেকেরও বেশি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল ইসলামপুর হাইস্কুলের ছাত্ররা। স্কুলের নাম যাতে কোনও পরিবর্তন না করা হয় সেই দাবি তোলে ছাত্ররা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ চলার পরই পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। ব্যস্ত সময়ে এতক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় নাকাল হন নিত্যযাত্রী ও এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘জাতীয় সড়ক অবরোধ করে কী ভাবে স্কুলের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত জটের সমাধান হতে পারে? স্কুলের ছাত্রদের ক্লাস না করে পথ অবরোধ করাই বা কী ভাবে সমর্থন করলেন কর্তৃপক্ষ?’’
বস্তুত, ইসলামপুর হাইস্কুলের উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। স্কুলের উদ্বোধন করেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। সেই সময় স্কুলের নাম ছিল চৌধুরী মহম্মদ ইউসুফ হাইস্কুল। ইসলামপুরের বাসিন্দা জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর বাবার নামে। স্কুল সূত্রে জানতে পারা গিয়েছে, সেই স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন এলাকার বর্তমান বিধায়ক মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর দাদা আফাক চৌধুরী। তবে স্কুলের সঙ্গে চুক্তি হিসেবে স্কুলের জন্য ১৫ একর জায়গা ও প্রায় ১ লক্ষ ইট দেওয়ার কথা ছিল। তবে তার পরে তা পাওয়া যায় নি বলেই স্কুল কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি। ১৯৫৮ সালে স্কুলটি হাইস্কুলের স্বীকৃতি পাওয়ার সময় স্কুলের নাম হয় ইসলামপুর হাইস্কুল।
২০১৩ সালে হাইস্কুলের নাম পুনরায় চৌধুরী মহম্মদ ইউসুফ অর্থাৎ, নিজের বাবার নামে করার জন্য শিক্ষা দফতরে চিঠি দিয়েছিলেন ইসলামপুরের মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী। বিকাশ ভবন থেকে গত ২০১৪ সালে সেই স্কুলের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। যদিও সেই সময় কোনও ব্যবস্থা না নিলেও নতুন সরকার মনোনীত পরিচালন সমিতি গঠনের পর সেই বিষয়ে বৈঠক করে স্কুল পরিচালন সমিতি। বৃহস্পতিবার রাতে সেই বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয় সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হবে। ওই ঘটনার বিরোধিতায় সরব হন শিক্ষক-অভিভাবকদের অনেকেই।
এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে পরিচালন সমিতির প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতির দ্বন্দ্বও। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি কাইজার চৌধুরী সম্পর্কে তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীর ভাই। কাইজার বলেন, ‘‘স্কুলে আগেই নাম ছিল চৌধুরী মহম্মদ ইউসুফ হাইস্কুল। তবে পরবর্তীতে চক্রান্ত করে সেই নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সমস্ত নথি খতিয়ে দেখা হয়েছে। ওই নামের স্কুলের একটি ফলকও রয়েছে।’’ যদিও সেই বিষয় নিয়ে ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি কংগ্রেসের কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘স্কুলের কোথাও সেই বিষয়ে নথি নেই। ১৯৫৮ সালেই স্কুলের নাম হয়েছে ইসলামপুর হাইস্কুল। হয়তো স্কুলের সঙ্গে যা চুক্তি হয়েছিল তা ভঙ্গ হয়েছে, সেই কারণে ওই পরিবর্তন। স্কুলের সমস্ত নথি খতিয়ে দেখে সেই ধরনের কোনও তথ্য পাওয়া যায় নি।’’
যদিও ইসলামপুরের অধিকাংশ অভিভাবকেরা অবশ্য এই দ্বন্দ্বে ছাত্রদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানান। ইসলামপুর একটি স্কুলের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা ইসলামপুর হাইস্কুলের ছাত্রের বাবা মধু শিকদার। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে এ ভাবে। স্কুল নিয়ে যদি ওই ধরনের পরিবর্তন করতে হয় তা হলে অভিভাবকদের ডেকেই বিষয়টি জানাতে পারত। তাঁরা মতামত পেশ করতেন। তা হলে হয় তো ছাত্ররা ওই ভাবে পথে নামত না। বেশ কয়েকদিন ধরে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সেই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া উচিত।’’
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ত্রিদিব গঙ্গোপাধ্যায় বিতর্ক এড়াতে পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে যা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরী হয়েছে সে ক্ষেত্রে আমার পক্ষে স্কুল পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আমি সাধারণ শিক্ষক হিসেবেই স্কুলে থাকতে চাই। ইস্তফার চিঠি নিয়ে ঘুরছি। স্কুলের পরিচালন সমিতি আমার ইস্তফা গ্রহণ করছে না।’’ এই পরিস্থিতিতে এ দিন স্কুলের পড়ুয়ারা রাস্তায় নামে। স্কুলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। তবে এর পিছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি কাইজার। তিনি বলেন, ‘‘এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক দল রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। ছাত্রদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাস্তায় নামা উচিত হয়নি।’’ কানাইয়ালালবাবু বলেন, ‘‘ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছে স্কুলের নাম ইসলামপুর হাইস্কুল। তবে হঠাৎ করে সেই স্কুলের নাম পরিবর্তন হবে শুনে ছাত্ররা নিজেরাই আবেগে পড়ে ওই আন্দোলনে নেমেছে। তবে ছাত্ররা এ বয়সে পথে নামা কাম্য নয়। এতে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy