Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কৃতি যেখানে যেমন...

দিনহাটা কলেজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় আলোচনাচক্র। বিষয়—‘রবীন্দ্র কবিতার পাঠান্তর’। মুখ্যবক্তা রবীন্দ্র গবেষক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, রবীন্দ্রনাথ সারা জীবনই তাঁর নাটক, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধে বহু সংশোধন, পরিমার্জন এবং নতুন রূপ দিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৪
Share: Save:

ভাবনায় রবীন্দ্র কবিতার পাঠান্তর

দিনহাটা কলেজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় আলোচনাচক্র। বিষয়—‘রবীন্দ্র কবিতার পাঠান্তর’। মুখ্যবক্তা রবীন্দ্র গবেষক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, রবীন্দ্রনাথ সারা জীবনই তাঁর নাটক, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধে বহু সংশোধন, পরিমার্জন এবং নতুন রূপ দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ সব সময়ই তাঁর কবিতার পরিবর্তন করতেন। কবি নিজেই ছিলেন তাঁর কবিতার সবচেয়ে বড় সমালোচক। তাই একটি কবিতা কখনওই একবার লিখে সন্তুষ্ট হতেন না। এক পাণ্ডুলিপিতেই দু’বার, তিন বার, পাঁচ বার পর্যন্ত লিখতেন, পরিমার্জন করতেন। তার পরে কবিতা ছাপা হয়ে গেলেও পুনর্মুদ্রণ কালে তা ফের সংশোধন করতেন। সাময়িকপত্র থেকে বইয়ের প্রথম সংস্করণ, তার পর যত বারই সুযোগ পেতেন কবিতাকে সুন্দর করে তুলতে চাইতেন। এটা রবীন্দ্রনাথের বিশেষ কবিতা বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের প্রমাণস্বরূপ একটি পূর্ণাঙ্গ কাহিনি কবিতা কবি নিজে পাণ্ডুলিপিতেই পাঁচ বার পরিবর্তন করেছিলেন। অধ্যাপক ভট্টাচার্য তারই দৃষ্টান্ত রাখলেন শ্যামলী কাব্যগ্রন্থের ‘কণি’ কবিতা সামনে রেখে। পাণ্ডুলিপির প্রথম পাঠ পেরিয়ে যে কবিতাটি মুদ্রিত হয়, সেই কবিতা ও প্রথম পাঠের তুলনা করেন। তাঁর গল্প, চরিত্র, কবিতায় গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা ও পরিণাম তুলে ধরেন। তাঁর কথা থেকে জানা গেল ‘কণি’ কবিতায় কণি নামের মেয়েটির প্রথমে নাম রেখেছিলেন কবি ‘লীলা’।

আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন ডঃ আনন্দগোপাল ঘোষ, অধ্যক্ষ সাধন কর, অধ্যাপক দিলীপ রায়-সহ জেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষক ও নাগরিকবৃন্দ।

লেখা ও ছবি: অনিতা দত্ত।

স্মৃতির কোলাজ

‘শিক্ষক অনেক আছেন। ছাত্রকে অপত্যস্নেহে কাছে টানার শক্তি সকলের নেই।’ তাঁর ছিল। না হলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষক অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করবেন কেন? সেই স্মৃতিচারণাই কি পাঠকের সেরা প্রাপ্তি? নাকি, উমা মাজি মুখোপাধ্যায়ের দৃষ্টিতে তাঁর পিতা অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়? অথবা ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষের মূল্যায়ন, ‘উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাঁশবেড়িয়ার মুখার্জি পরিবারের ভূমিকা এখনও অব্যাহত’। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণার পাশাপাশি অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত রচনা ‘উত্তরবঙ্গের স্মৃতি’ সেরা প্রাপ্তি নয়? এমন সব বিবিধ বর্ণে বর্ণিল তাঁর একজীবন কোলাজ ‘স্মরণ স্মৃতি’ (সম্পাদনা ডঃ শুভঙ্কর চক্রবর্তী)। জীবনের সেই কোলাজ সম্পূর্ণ হয় কন্যা উমার কবিতাধারায়, ‘পান্থনিবাস শেষ হল/এখন বিশ্রাম চিরবিশ্রাম।’

প্রকৃতির ছন্দে কথক

জলপাইগুড়ির রিদম গল্প একাদেমির উদ্যোগে হয়ে গেল তিন দিনের কথক নৃত্যের কর্মশালা। প্রশিক্ষক গুরু অসীমবন্ধু ভট্টাচার্য ধ্রুপদী নৃত্যের প্রতি কচিকাঁচাদের আগ্রহ বাড়াতে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলেন পরিবেশ ও প্রকৃতিকে। বিভিন্ন লয়ের মাধ্যমে হাতেকলমে শেখালেন ফুল ফুটছে, পাখি উড়ছে, তীর ধনুক নিয়ে হরিণ শিকার, ফুলের ওপর ভ্রমর এসে বসা—এমন নান ছন্দোময় চিত্রকল্প। কচিকাঁচাদের বিভাগে শিক্ষার্থী ছিলেন প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা। বড়রা মূলত শিখল ঠাট, অমদ, টুকরা, তোড়া, তেহাই—কত্থক নৃত্যের এমন নানান পর্ব। সংস্থার কর্ণধার সোমালি রায় জানান, শাস্ত্রীয় নৃত্য বিশেষ করে কত্থকের প্রতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলতে এই কর্মশালার আয়োজন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন আনন্দগোপাল ঘোষ, জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক জগদীশচন্দ্র রায়, জেলা গ্রন্থাগারিক দেবাশীষ মিশ্র, পুরপিতা প্রদীপকুমার দে প্রমুখ।

মেঘদূত দিবস

মালদহে মহাকবি কালিদাস স্মরণে পালিত হল ‘মেঘদূত দিবস’। শুরুতে প্রার্থিত পরিবেশ তৈরি করে দেন রুদ্রাণী সান্যাল গৌড়মল্লার রাগে ‘ঝুক অয়ি বাদরিয়া শাওন কি’ গেয়ে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপাল চন্দ্র মিশ্র মেঘদূতের উপমা, ভাষা বিষয়ের সৌন্দর্য তুলে ধরেন। সুব্রত সোমের কণ্ঠে ‘বহু যুগের ওপার হতে’ শুনতে বেশ ভাল লাগে। অধ্যাপক সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁশিতে শোনা গেল ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’। অপূর্ব পরিবেশনা। সৌরেনবাবু রবীন্দ্রনাথের ‘মেঘদূত’ কবিতা এবং অদ্বৈত মল্লবর্মনের কবিতা ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ পাঠ করেন। অধ্যাপিকা সুষ্মিতা সোম কালিদাসের মেঘদূত সম্পর্কে জানান, রামগিরি পর্বত থেকে সীতাহরণের কারণে রামের বিলাপ যা বাল্মীকির রামায়ণে উল্লেখিত, তা মহাকবিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাঁর মতে, মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনীতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব কম থাকায় মাটি প্রায় শুষ্ক থাকে। সেই মাটির মর্মের যন্ত্রণা, বিরহের ব্যাকুলতায় কালিদাস উদ্দীপিত হতে পারেন। ঘরোয়া এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান রজত কিশোর দে, অধ্যাপিকা সুনিমা ঘোষ, পরেশ রায় প্রমুখ। বলতেই হয় অনুষ্ঠান কক্ষটির সজ্জার কথা। মাটির প্রদীপ, ফুলের মালা আর হাতে বোনা আসনে ছিল অভিনবত্বের ছোঁয়া।

সাহিত্য উৎসব

সাহিত্যে সারা দিন। এ ভাবেই মেতে উঠল ‘রোববারের সাহিত্য আড্ডা’র (উত্তর দিনাজপুর, ইসলামপুর) উত্তরবঙ্গ সাহিত্য উৎসব। সূচনা লগ্নে কচিকাঁচাদের আবৃত্তি জানান দিল উৎসবের সুর ভিন্ন মাত্রায় বাঁধা। ক্রমে সেই মাত্রায় গুণিজন সংবর্ধনা—আনন্দগোপাল ঘোষ, কানাইলাল অগ্রবাল, শীলা দত্ত ঘটক প্রমুখের বক্তব্যে সাহিত্যের সাত-সাতেরো। কখনও বা সঙ্গীতের সুরধারা। সূর্য লেন মঞ্চে ধরা থাকল সাহিত্যিক জ্যোৎস্নেন্দু চক্রবর্তীর শোকজ্ঞাপন। শুধু কি তাই? একগুচ্ছ লিটল ম্যাগাজিনের পাশাপাশি আত্মপ্রকাশ করল ৬ এ পা সাহিত্য উৎসব স্মরণিকা। ‘‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’ নাই বা হল, কবিতা পাঠের আসর বসতে ক্ষতি কি? কবিতায় মিলে গেল পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম এবং ভুটানের সীমারেখা। মনোনীতা চক্রবর্তীর সঞ্চালনার পাশাপাশি সঙ্গীত থেকে স্বরচিত কবিতাপাঠ—মাত্রা বদল তাতেও। মাত্রা বদল সুশান্ত নন্দীর সঞ্চালনায়।

লেখা ও ছবি: সুদীপ দত্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE