হাতির দাঁত পাচারে ধৃতরা। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাতির দাঁত পাচারের করতে গিয়ে বন দফতরের হাতে গ্রেফতার হয়েছে তিন জন। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির কাছে ভক্তিনগর থানার ফুলবাড়ি এলাকায়। একটি গাড়িও আটক করা হয়। গাড়ি মধ্যেই একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় পাঁচটি হাতির দাঁত। ধৃতদের মধ্যে এক জন গাড়ির চালক।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বনবিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্তের নেতৃত্বে বনকর্মীরা শিলিগুড়ির কাছে জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির রাস্তায় ৩১ডি জাতীয় সড়কের ওপর একটি ছোট গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। রাত নটা নাগাদ গাড়িটিকে আসতে দেখে ধাওয়া করে ফুলবাড়ির কাছে ধরা হয়। চালক ছাড়া গাড়িতে দু’জন আরোহী ছিল। তাদের কাছে একটি স্কুল ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই স্কুল ব্যাগের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় পাঁচটি হাতির দাঁত। বনকর্মীরা গাড়ি সমেত তাদের ধরে বেলাকোবা রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার তাদের জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়।
উদ্ধার হওয়া হাতির দাঁত। —নিজস্ব চিত্র।
বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত বলেন, “ধৃতরা জানিয়েছে যে, উদ্ধার হওয়া হাতির দাঁত ৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হতো। তারা হাতির দাঁত পাচার চক্রের সদস্য। শিলিগুড়িতে তাদের কাছ থেকে এক ব্যক্তির ব্যাগটি নেওয়ার কথা ছিল।” ধৃতদের মধ্যে পীযূষকান্তি বসু কোচবিহার শহরের নীলকুঠি এলাকার বাসিন্দা। বছর পঞ্চাশের পীযূষ কোচবিহার শহরে চানাচুর-লজেন্সের ফেরিওয়ালা। একই বয়সের গৌতম কার্কির আলিপুরদুয়ার থানার বক্সা এলাকায় একটি লাইন হোটেল আছে। এ ছাড়াও সে বক্সার গরম বস্তি এলাকায় বালি, পাথর সরবরাহের কাজ করে। গাড়ির চালকের নাম অশোক থাপা। তার বাবা বন বিভাগের বক্সা রেঞ্জের কর্মী। তবে গাড়িটি তার নয়। গরমবস্তি এলাকার এক ব্যক্তির গাড়ি।
পীযূষবাবু এবং গৌতমবাবুর দাবি, “আমাদের ফাঁসিয়েছে কুতুব মিঞা নামে এক ব্যক্তি। সে আমাদের ব্যাগটি শিলিগুড়িতে পৌঁছে দিতে বলে। তার বিনিময়ে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ব্যাগের মধ্যে কি ছিল তা আমরা দেখিনি।”
বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমের ধুবুরির বাসিন্দা কুতুব মিঞার গরম বস্তি এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত আছে। সে এই পাচার চক্রের মূল পান্ডা। গৌতমের বক্সায় একটি ধাবা আছে। ধাবা থেকেই সমস্ত কাজের পরিকল্পনা করা হতো বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। দু’জনে অতীতেও পাচারের কাজ করেছে বলে বন দফতরের দাবি। কুতুব শুধু হাতির দাঁতই নয়, ভালুকের পিত্তও পাচার করে বলে জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে। হাতির দাঁতগুলি বক্সা এলাকা থাকেই সংগ্রহ করা নাকি অসম থেকে আনা, তা খতিয়ে দেখছে বন বিভাগ। কারণ, কিছু দিন আগে বক্সা এলাকায় বেশ কয়েকটি হাতির দেহ উদ্ধার হয়।
বন দফতর সূত্রে জানা যায় যে, বেলাকোবা রেঞ্জে গত ৫ জুন একটি চিতা বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়। ২৬ জুন সাপের বিষ উদ্ধার হয়। ২০ জুলাই একটি চিতাবাঘের চামড়াও উদ্ধার করা হয়। এ মাসের ১ তারিখে গজলডোবা এলাকা থেকে একটি গেকো উদ্ধার হয়। সোমবার হাতির দাঁত উদ্ধার হল। সবই জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির রাস্তা থেকে উদ্ধার হয়। প্রত্যেকটিই শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy