Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাতির দাপাদাপি, শহরে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি

লোকালয়ে ঢুকে পড়া বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। পাশাপাশি বুধবার হাতিটি শহর দাপিয়ে বেড়়ানোর পরে ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

হাতি ভেঙেছে ঘর। মাঘের রাত্রি যাপন সেই ঘরেই। নিজস্ব চিত্র।

হাতি ভেঙেছে ঘর। মাঘের রাত্রি যাপন সেই ঘরেই। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

লোকালয়ে ঢুকে পড়া বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। পাশাপাশি বুধবার হাতিটি শহর দাপিয়ে বেড়়ানোর পরে ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই ব্যাপারে উত্তরবঙ্গের লাটাগুড়িতে বনবান্ধব উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি মাদারিহাটে তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মতো একগুচ্ছ পরিকল্পনা হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি লাটাগুড়িতে বনবান্ধব উৎসবের আয়োজন করা হবে। মাদারিহাটের তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দিন ক্ষণ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিককে সামিল করানোর চেষ্টা করছেন বন প্রশাসনের কর্তারা। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বনমন্ত্রীর সঙ্গে রঞ্জিতবাবুর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “লোকালয়ে ঢুকে পড়া বন্যপ্রাণীদের ব্যাপারে কেমন আচরণ করা উচিত তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে লাটাগুড়িতে উত্তরবঙ্গের প্রথম বনবান্ধব উৎসব করা হবে। ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি ওই উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মাদারিহাটের তথ্যচিত্র প্রদর্শনের অনুষ্ঠান নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে আলোচনা করব। রঞ্জিতবাবু বন্যপ্রাণ রক্ষার ব্যাপারে দারুণ আগ্রহী। ওই অনুষ্ঠানে আমরা ওঁকে পেতে চাইছি।” দক্ষিণবঙ্গের চন্দ্রকোণা ও বিষ্ণুপুরে ইতিমধ্যে বনবান্ধব উৎসব করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে শিলিগুড়ির শহর দাপিয়ে বেড়ানো দামাল হাতিটির প্রাণ বাঁচিয়ে জঙ্গলে ফেরানোয় কর্মীদের পুরস্কৃত করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কারও গাফিলতি থাকলে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তেমনই ভাল কাজ করার জন্য দফতরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কা ভীবে পুরস্কৃত করা যায় তা দেখা হচ্ছে।’’

পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “একতালশিয়া পাইপলাইনের কাছে হাতিটি প্রায় দু’ঘন্টা ছিল। বনকর্মীরা তিনটি হাতিকে বসিন্দারা ফেরালেও ওই দামালটিকে কিছু লোক ভিড় করায় সরাতে পারেননি। সে সময় পর্যাপ্ত বনকর্মী ছিলেন না। পুলিশ, দমকলের তৎপরতাও ছিল না। পরের ওই উদ্যোগটা প্রথম থেকেই নেওয়া দরকার ছিল। তাহলে এতক্ষণ সমস্যাই হত না।” কোচবিহারের পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “লোকালয়ে বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ার ঘটনা আকছার হচ্ছে। তারপরেও শিলিগুড়িতে ঢুকে পড়া হাতিটিকে বাগে আনতে এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল, সেটা আমাদেরও প্রশ্ন। দ্রুত বনকর্মীদের শূন্যপদ পূরণ, আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।” ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক অমল সিংহ অবশ্য বলেন, “কর্মীরা সব সময়ই বন্যপ্রাণীকে বাঁচিয়ে ঠিকঠাক ভাবে উদ্ধার করতে চান। পুরস্কার দেওয়া হলে কর্মীদের উৎসাহ বাড়বে। আমরা বন্যপ্রাণী উদ্ধারের কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য বিশেষ বীমার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আর্জি জানাব।”

হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হল বৃহস্পতিবার। বুধবার সারাদিন শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় দাপিয়ে বনে ফিরে যাওয়ায় পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন প্রতিনিধিরা মোটামুটি একটা খসড়া তৈরি করে ফেলেছেন। সেই অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাড়ি, দোকান, মোটর বাইকের তালিকা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত প্রধানরা। তবে কোন ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে তা নিয়ে এখনও পরিস্কার করে জানায়নি বন দফতরের কর্তারা। তবে ক্ষতির তালিকা দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল এনএস মুরলি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। তাতে যদি ক্ষতিগ্রস্তরা প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করেন, তাতে ক্ষতিপূরণ পেতে অসুবিধা নেই।’’ তবে কতটা দেওয়া যাবে তা খতিয়ে দেখতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

হাতিটি মূলত ডাবগ্রাম-২ পঞ্চায়েত এবং শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৭, ৪০ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়িয়েছে। স্থানীয় হিসেবে মোটামুটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডাবগ্রাম-২ এলাকায়। ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান সুধা সিংহ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রায় ৫০ টি বাড়িতে কমবেশি ভাঙচুর চালিয়েছে হাতিটি। যার মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। বেশ কয়েকটি বাইকও ভেঙেছে বলে শুনেছেন তিনি। তবে এখনও তাঁর পুরো হিসেব পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রায় সকলকে বলেছি পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম ভরতে। তা বন দফতরের কাছে পাঠানো হবে।’’ পুর এলাকার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যজিৎ অধিকারী জানিয়েছেন, তাঁর ওয়ার্ডে ৩৫টি বাড়ি, ৭টি দোকান ভাঙা পড়েছে। তবে কোনও বাইক ভাঙেনি। তিনি বলেন, ‘‘মোটামুটি ২০ লক্ষ টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। আমরা বৃহস্পতিবার ১৭ জনের জন্য ফর্ম ভরে দিয়েছি। বাকিদেরটা শুক্রবার ভরা হবে। আমাদের দিক দিয়ে কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।’’ বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের ডিএফও পিআর প্রধান বলেন, ‘‘আমরা ফর্মগুলি পেলেই কী হবে তা জানাতে পারব।’’ বাইকের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না তা ঠিক হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করতে পারেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE