Advertisement
০৪ মে ২০২৪
শশার দাম পড়ছে কোচবিহারে

হিমঘরে আলু রেখে ক্ষতির মুখে চাষিরা

হিমঘরে রাখা আলু চাষ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। কোথাও আলু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেই নষ্ট হয়েছে। কোথাও আবার আলুবীজ রোপণ করার পরে তাতে পচন ধরেছে। আলু চাষে নেমে ক্ষতির মুখে পড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে হিমঘরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কোচবিহারের পাতলাখাওয়ায় একটি হিমঘরে রাখা আলু নিয়ে এমনই অভিযোগ উঠেছে।

হলদিবাড়িতে পড়ে রয়েছে শসা। —নিজস্ব চিত্র।

হলদিবাড়িতে পড়ে রয়েছে শসা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

হিমঘরে রাখা আলু চাষ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। কোথাও আলু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেই নষ্ট হয়েছে। কোথাও আবার আলুবীজ রোপণ করার পরে তাতে পচন ধরেছে। আলু চাষে নেমে ক্ষতির মুখে পড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে হিমঘরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কোচবিহারের পাতলাখাওয়ায় একটি হিমঘরে রাখা আলু নিয়ে এমনই অভিযোগ উঠেছে।

আলু চাষের শুরুতে কয়েকটি জায়গায় ধসার প্রকোপও শুরু হয়েছে। কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে অবশ্য ধসার প্রকোপ রুখতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শশার দাম না পেয়ে একাংশ চাষি পথে বসেছেন, এই সময় ফের আলুতে পচন ধরায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে কৃষি দফতর, উদ্যানপালন দফতর এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের মধ্যে। কোচবিহার জেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক বিপ্লব ঘোষ বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি দেখছি। হিমঘরের ব্যাপারে বৈঠক হয়েছে। ধসা যাতে কোনও ভাবে না ছড়ায়, সে ব্যাপারে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া শুরু হয়েছে।”

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পাতলাখাওয়ার হিমঘরে ৩ লক্ষ বস্তার উপরে আলু রাখার ক্ষমতা রয়েছে। প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৫০ কেজি। ক্ষমতা অনুযায়ী আলু রেখেছিলেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। চাষিরা জানিয়েছেন, মূলত বীজ করার জন্য তাঁরা ওই আলু রেখেছিলেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই আলুবীজ রোপণের কাজ শুরু হয়। সেই সময় হিমঘর থেকে আলু নিয়ে যাওয়া শুরু করেন কৃষকরা। ওই আলু রোপণ করার সময় তাঁরা বুঝতে পারেন, তা নষ্ট হতে শুরু করেছে। বড়রাংরস, পাতলাখাওয়া, গোপালপুর, পুন্ডিবাড়ি, সাজেরপাড়ের প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়েছে। বড়রাংরসের কৃষক বকুল কার্জি জানান, তিনি ২০ প্যাকেট আলু রেখেছিলেন। পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “সব আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণ না পেলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।” পাতলাখাওয়ার কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, “হিমঘরের আলুবীজ দিয়ে ২ বিঘা চাষ করেছিলাম। সব নষ্ট হয়েছে। পরে বাজার থেকে ৮০০ টাকা প্যাকেট দরে কিনে ফের চাষ শুরু করেছি।”

কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কৃষি দফতরের আধিকারিকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে কিষাণ খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেস। এই ব্যাপারে হিমঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা প্যাকেট প্রতি ৬০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি। কিন্তু কিষাণ খেতমজুর তৃণমূল সংগঠনের নেতা রঞ্জিত দাস বলেন, “হিমঘর কর্তৃপক্ষ ৬০০ টাকা প্যাকেট প্রতি দিতে চাচ্ছে। তাতে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বে। কমপক্ষে ১৩০০ টাকা প্যাকেট পিছু দেওয়া হোক।”

এদিকে, শশা চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়া কয়েক হাজার কৃষক প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এক বিঘা শশা চাষ করতে ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই টাকার কিছুই তুলতে পারেননি তাঁরা। শশার দাম গোড়া থেকেই কম ছিল। এবারে হঠাত্‌ করে ১ টাকা কেজিতে দাম নেমে যাওয়ায়, কী করবেন তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। একাংশ কৃষকের অভিযোগ, নিশিগঞ্জ বাজারে শশা বিনে পয়সাতেও কেউ কিনতে চায়নি। কৃষক আমিনুর রহমান জানান, তিনি পাঁচ কুইন্টাল শশা নিয়ে নিশিগঞ্জে গিয়েছিলেন, একটিও বিক্রি হয়নি। সব ফেলে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, “মধুপুরে নিয়ে গেলে ১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। সেখানেই নিয়ে যাব ভাবছি। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে না।” এবারে কোচবিহার এক হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে শশা চাষ হয়। গত বছর এই চাষ হাজার একরের নীচে ছিল। শুধু কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকেই চাষ বেড়েছে ৪০ হেক্টর। পঞ্চাশ হাজার কৃষক ওই চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এতদিন ধরে শশা চাষ করে লাভের মুখ দেখছিলেন চাষিরা। তাঁরা জানান, গত বছর শুরুর দিকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, শেষ সময়ে দাম নেমেছিল ৪ টাকায়। এ বারে শুরুতে শশার দাম ছিল ১২ টাকা, এক মাসের মধ্যে কমে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cooch behar potato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE