জ্বলছে পুলিশের গাড়ি। রবিবার রাতে মালবাজারে তোলা সব্যসাচী ঘোষের ছবি।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শম্ভু তিরকি (৩৩)। মালবাজার লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে হঠাৎ দ্রুতগতির একটি পুলিশের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসে পড়ে তাঁদের উপরে। এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান শম্ভুবাবু। স্ত্রী গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। জখম আরও চার জনের চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গে মেডিক্যালে। এই ঘটনায় ধুন্ধুমার হয় মালবাজারে।
বিকেলের এই দুর্ঘটনার পরে সাড়ে তিনটে থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করা হলেও অবরোধ ওঠেনি। এক সময় এক দল স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশের গাড়িটিতে ভাঙচুর চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তা-ও পুলিশের সামনেই। শেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এই তাণ্ডবে জখম হন মেটেলি থানার এক কর্মী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িটি মালবাজার থানার চা বাগান এলাকায় নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হয়। গাড়ি চালাচ্ছিলেন অস্থায়ী ভিত্তিতে থাকা গণেশ লোহার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সে জন্যই এই দুর্ঘটনা। পুলিশের তরফে বলা হয়, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে যখন জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু হয়, তার পরে এতটা সময় কেন গড়াতে দিল পুলিশ? বিশেষ করে ঘটনাস্থল মালবাজার শহর থেকে মোটে এক কিলোমিটার দূরে। এমনকী, সন্ধ্যায় ৭০-৮০ জনের একটি দল শহরে ঢুকে দোকানিদের দোকানপাট বন্ধ করারও হুমকি দিয়ে আসে। পুলিশের তরফে এর কোনও সদুত্তর মেলেন।
অথচ ঘটনার একটু পরেই পুলিশ এবং উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। শম্ভুবাবু, তাঁর স্ত্রী লিনা বাক্সলা তিরকি এবং বাকি জখমদের প্রথমে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জখমদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তবু পুলিশের গাড়িটি যখন ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, তখন কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে অবশ্য গোলমাল থামাতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের গাড়িটি একেবারে জাতীয় সড়কের উল্টো দিকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। দুর্ঘটনার পর গাড়ির চালক অসংলগ্ন আচরণও করছিলেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তখনই অবরোধ শুরু হয়। মালবাজার থানার ওসি সমর দাস, মালবাজার ট্রাফিক ওসি অর্ঘ্য সরকার বা মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতির আশ্বাসেও অবরোধকারীদের টলানো যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy