বাম পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরসভার এক বছর পূর্তিতে কাজের খতিয়ান নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক বিরোধী তরজা।
আজ, বুধবার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে বাম পরিচালিত বর্তমান পুর বোর্ডের। তার আগে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের তরফে এই পুরসভার প্রতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হয়েছে। রাজ্যের অর্থ কমিশনের টাকা সব পুরসভাকে দেওয়া হলেও শিলিগুড়ি পায়নি। হাউজিং ফর অল, বস্তি উন্নয়নের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। এ সব সত্ত্বেও পুরসভা নিজস্ব আয় বাড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে নানা কাজ করেছে। লোক দেখানোর জন্য কিছু করা হয়। বাসিন্দাদের মূল প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির সুবিধা বাসিন্দাদের পাইয়ে দেওয়ার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, আইনের শাসন এবং স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি মেয়রের।
বিরোধী দলনেতা নান্টু পালের অভিযোগ, বলার মতো কোনও কাজই করতে পারেনি বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ। উল্টে খারাপ করেছেন তারা। কর বাড়িয়েছেন। নিকাশি, যানজট সমস্যা মেটাবেন বলেছিলেন, করতে পারেননি। নতুন কোনও পার্ক করতে পারেননি। শহরের পার্কগুলির সংস্কার করবেন বলেছিলেন। হয়নি। ওয়ার্ড উৎসব হয়নি। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে সুযোগ বাড়াননি। শহরে বিভিন্ন বেআইনি নির্মাণ চললেও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। নান্টুবাবু বলেন, ‘‘এ রকম অধিকাংশ কাজই বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ করতে পারেননি। নতুন কোনও রাস্তা হয়নি। ট্রেড লাইসেন্স সরলীকরণ করতে পারেননি। সুলভ শৌচাগার করতে পারেননি। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা মেটাতে পারেননি। রাজ্য সরকারের তরফে তাকে সাহায্য করা হয়নি বলে মিথ্যে বলছেন।’’ তা ছাড়া বিধায়ক তহবিল থেকে রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য টাকা দিয়েছেন। এসজেডিএ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে বিভিন্ন সময় পুরসভার অনেক কাজ করা হয়েছে বলে দাবি বিরোধী দলনেতার।
এ দিন বাম কাউন্সিলরদের নিয়ে একসঙ্গে বসে মেয়র দাবি করেন, গত এক বছরে বিল্ডিং প্ল্যান, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বাসিন্দাদের হয়রান করার কোনও অভিয়োগ নেই। পানীয় জল নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার যে জল প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল তা হচ্ছে না। তবে পুরসভার উদ্যোগে ৫ জুন জোন-১০-এর ওভারহেড জলাধার উদ্বোধন হচ্ছে। বর্তমানে জল সরবরাহের যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে প্রতিদিন ৫৫ মিলিয়ন লিটার সরবরাহ করা যায়। কিন্তু ৪৬ মিলিয়ন লিটার সরবরাহ হচ্ছে। তা আরও ৫ মিলিয়ন লিটার বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আবর্জনা সরাতে ৪ টি নতুন কম্প্যাক্টর কেনা হয়েছে। ২১ লক্ষ টাকা দিয়ে কম্প্যাক্টর স্টেশন করার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দুর্গন্ধ দূর করতে কাজ শুরু হয়েছে। কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা খরচে কিরণচন্দ্র শ্মশাণের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান গঙ্গা বেসিন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। কেন্দ্রের কাছে থেকে তা পুরসভা জানতে পেরেছে। সেই কাজ রাজ্য করতে পারেনি বলে অভিযোগ অশোকবাবুর। কেন্দ্রের কাছে পুরসভার তরফে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ করার জন্য আর্জি জানানো হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে মাতৃসদনের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলে জানান মেয়র। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। কর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ১ হাজার জন তাদের আপত্তি জানিয়েছেন। সেগুলির মধ্যে ৯০০ টি শুনানি হয়েছে বাকিগুলি করে ১৫ জুনের মধ্যেই পুরসভা সিদ্ধান্ত নেবে। গত এক বছরে ছোটবড় ৪০২ টি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১১৪ টি কাজ শেষ হয়েছে। ১২৪টি চলছে। বাকিগুলি শুরু হবে।
মেয়রের কথায়, কেন্দ্র এবং রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া পুরসভা চলতে পারে না। শিলিগুড়ি পুরসভায় বামেদের জয় রাজ্য রাজনীতি এবং দেশের রাজনীতিতে উঠে এসেছে। এর পর শিলিগুড়িতে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বামেদের জয় তাৎপর্যপূর্ণ। পুরসভা চালাতে গত এক বছর অনেক বাধার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে যারাই নতুন সরকার করুক, উন্নয়ন নিয়ে যেন রাজনীতি না হয়। তারা যেন সংবিধানের নিয়ম মেনে পুরসভা, পঞ্চায়েতগুলিতে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy