Advertisement
১১ মে ২০২৪

চৈত্রেই শুকোচ্ছে আত্রেয়ী, হারাচ্ছে মেলার জৌলুস

চৈত্র মাস শেষ না হতেই জল শুকিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় চর পড়তে শুরু করায় চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী, চিন্তায় মেলার উদ্যোক্তারাও। সরকারি অবহেলা ও পরিচর্যার অভাবে প্লাস্টিকের আবর্জনা, কাদা, বালি জমা হয়ে নদীখাত অগভীর হয়ে পড়ায় আত্রেয়ীর বেশ কিছু অংশ শুকিয়ে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে।

চর পড়ে গিয়েছে আত্রেয়ী নদীতে। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।

চর পড়ে গিয়েছে আত্রেয়ী নদীতে। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫২
Share: Save:

চৈত্র মাস শেষ না হতেই জল শুকিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় চর পড়তে শুরু করায় চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী, চিন্তায় মেলার উদ্যোক্তারাও।

সরকারি অবহেলা ও পরিচর্যার অভাবে প্লাস্টিকের আবর্জনা, কাদা, বালি জমা হয়ে নদীখাত অগভীর হয়ে পড়ায় আত্রেয়ীর বেশ কিছু অংশ শুকিয়ে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে। নদীর উত্‌স মুখে আড়াআড়ি ভাবে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে জল আটকে সেচের কাজ চালানোয় গ্রীষ্মের আগেই শুকিয়ে যেতে বসেছে জেলার বৃহত্তম নদী। অন্য বছরের তুলনায় এ বার আত্রেয়ী এত বেশি শুকিয়েছে যে, তা দেখে রীতিমতো ভয় পেয়েছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। আত্রেয়ীকে ঘিরে নদীর পাড়ে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী একাধিক প্রাচীন মেলাও জৌলুস হারাতে বসেছে। ফলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন সকলেই।

এ জেলার কুমারগঞ্জ ব্লক থেকে পতিরাম হয়ে বালুরঘাটের বিভিন্ন এলাকায় চলতি মাসে বারুনি স্নান উপলক্ষে নদীর ধারে মেলা হয়। শনিবার বালুরঘাট শহরের রঘুনাথপুরে আত্রেয়ীর পাড়ে অনুষ্ঠিত রামনবমীতে ঐতিহ্যশালী রঘুনাথজীর বিরাট মেলার আয়োজন হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তায়। কারণ, বরাবর জল থাকলেও এ বার আত্রেয়ীয়ে স্নানের প্রয়োজনীয় জল নেই।

মেলা কমিটির তরফে প্রবীণ খগেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, লক্ষাধিক পুণ্যার্থী এই নদীতে স্নান করে রঘুনাথজীর মন্দিরে পুজো দেন। এ বার পুণ্যার্থীর সংখ্যা বাড়বে। সরকারি নদী সেচ প্রকল্পের (আরএআই) এক কর্মীর অভিযোগ, “কুমারগঞ্জ সীমান্তে নদীতে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে জল আটকে সেচের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।” সংশ্লিষ্ট দফতরের বাস্তুকার শেখর সরকার বলেন, “এমন অভিযোগের কথা শুনেছি। খোঁজ নেওয়া হবে।”

কুমারগঞ্জে চাষিদের একাংশ অভিযোগ, এমনিতে এই সময় নদীতে জল কম থাকে। তার উপর চাষের কাজের জন্য নদীর উত্‌স্যমুখ বরাবর বাঁধ দেওয়ায় সমস্যা গুরুতর হয়েছে। মাঝে মধ্যে মর্জি মতো বাঁধ কেটে জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে হঠাত্‌ করে হড়কা বানের মতো নদীর জল এসে আত্রেয়ী চড়ে লাগানো তরমুজ, শশার খেত ভাসিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুরের সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সুনীল ঠাকুর বলেন, “সীমান্তে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ আটকে জল তুলে নেওয়ার অভিযোগের কোনও খবর নেই।” জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

আত্রেয়ী বাঁচাতে দূষণ রোধে সচেতনতার প্রচার, নদীর দু’পাড়ে বনসৃজনের উদ্যোগ নিতে সরকারি স্তরে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির দাবি উঠেছে।

নদীর চর দখল করে অবৈধ ভাবে দোকান ও ঘরবাড়ি তৈরি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে বালুরঘাট কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আশিস দাস মনে করেন। তিনি বলেন, “বনাঞ্চলের অভাবে এ জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। দীর্ঘ হচ্ছে খরা। বনসৃজনের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অপরিণত গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে।” প্লাস্টিকের দূষণের বিরুদ্ধে শহরে কোনও অভিযান নেই বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

জেলাশাসক তাপসবাবু বলেন, “প্রশাসন সব রকম সাহায্য করবে।” এ বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করে সচেতনতার আন্দোলন গড়ে তোলার উপর তিনি জোর দেন। সরকারি স্তরে এখনই পরিকল্পনা তৈরি করে আত্রেয়ীর নাব্যতা ফেরানো না গেলে এই জনপদের সমূহ ক্ষতি হয়ে যাবে। নদীকে ঘিরে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী সব প্রাচীন মেলা। কর্মহীন হয়ে পড়বেন নদীর উভয় পাড়ের প্রায় ১৫,০০০ মত্‌স্যজীবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE