Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইনডং বাগানে গুঁতিয়ে চাকা ফাটাল বাইসন

আচমকাই একটি ঝোরা থেকে বেড়িয়ে গাড়ির লক্ষ্য করে তেড়ে আসে বাইসনটি। এক শিং দিয়ে ফুটো করে দেয় গাড়ির টায়ার। অন্য শিং ফুঁড়ে দেয় গাড়ির দরজা। কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে বাগানে ফেরেন স্টিয়ারিং এ বসা ইনডং চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার রজত দেব ও তাঁর দুই সঙ্গী।

অচল: এই গাড়ির চাকায় শিং ঢুকিয়ে দেয় বাইসন। —নিজস্ব চিত্র।

অচল: এই গাড়ির চাকায় শিং ঢুকিয়ে দেয় বাইসন। —নিজস্ব চিত্র।

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

সকালে বাগানে ঢুকেই শুনতে পান জঙ্গল পেরিয়ে বাইসন ঢুকে পড়ায় শিকেয় উঠেছে কাজকর্ম। দেরি করেননি তিনি। বাইসন খুঁজতে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন গাড়ি নিয়ে। আচমকাই একটি ঝোরা থেকে বেড়িয়ে গাড়ির লক্ষ্য করে তেড়ে আসে বাইসনটি। এক শিং দিয়ে ফুটো করে দেয় গাড়ির টায়ার। অন্য শিং ফুঁড়ে দেয় গাড়ির দরজা। কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে বাগানে ফেরেন স্টিয়ারিং এ বসা ইনডং চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার রজত দেব ও তাঁর দুই সঙ্গী।

চাপড়ামারির জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মূর্তি নদীর ধার ঘেঁসে ইনডং চা বাগান। জঙ্গল থেকে হাতি, বাইসন প্রায় সময়েই ঢুকে পড়ে বাগানে। বন্যজন্তুর অনুপ্রবেশের খবর তাই নতুন কিছু নয় এখানে।

এ দিন সকালে বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার রজতবাবু দফতরে পৌঁছে কর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, বাগানের এ-৯ সেকশন যেখানে পাতা তোলার কাজ চলছিল ঠিক সেখানেই বড় আকারের বাইসন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বনদফতরে জানান তিনি। এরপরেই বাইসনের হামলায় কোনও শ্রমিক যাতে জখম না হয়, তাই তড়িঘড়ি দুই সহকারী ম্যানেজারকে গাড়িতে বসিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন রজতবাবু। ততক্ষণে এ-৯ থেকে বাইসনটি চলে গিয়েছে এ-২ সেকশনের দিকে।

রজতবাবু জানান, তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে সে দিকে রওনা হতেই একটি ঝোরার ভিতর থেকে আচমকা সামনে চলে আসে বাইসনটি। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে ওঠেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘প্রকাণ্ড এক বাইসন তেড়েফুঁড়ে গাড়ির সামনে ছুটে এল। বাইসনটির একটা শিং ঢুকে বিকট শব্দে ফেটে গেল টায়ার। গাড়ির একদিকের দরজাও তুবড়ে গেল।’’ দূরে থাকা শ্রমিকেরাও ওই ঘটনা দেখে ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার শুরু করে দেন। ফাটা টায়ার নিয়েও কোনওমতে ছেঁচড়ে গাড়িটিকে বাইসনের থেকে দূরে নিয়ে আসতে সমর্থ্য হন রজতবাবু। এরপর গাড়ি থেকে নেমে এক কর্মীর বাইকে চেপে অফিসে ফেরেন তাঁরা।

বাইসনও মূর্তি নদী টপকে জঙ্গলে ফিরে যায়। পরে রজতবাবু বলেন, ‘‘বাইসনটা এতটাই কাছে চলে এসেছিল যে ওর ফোঁস ফোঁস শব্দ আর বুনো গন্ধ টের পাচ্ছিলাম। নেহাত গাড়ির ভেতরে ছিলাম, তাই বেঁচেছি। বাইরে থাকলে প্রাণ বাঁচত কিনা সন্দেহ।’’ তিন দশক চা বাগানে কাটলেও এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম বলেই জানালেন তিনি। বন্যপ্রাণ উত্তরমণ্ডলের বনপাল সুমিতা ঘটক বলেন, ‘‘বাইসনের শারিরীক শক্তি যতটা তাতে গাড়ির টায়ার ফাটিয়ে দেওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baison Car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE