(বাঁ দিকে) মাসুদা পারভিন ও আবদুল মান্নান।—নিজস্ব চিত্র।
ভালবাসার এই কাহিনির নায়ক এক স্কুল শিক্ষক আবদুল মান্নান ব্যাপারী। নায়িকা পেশায় পার্শ্ব শিক্ষিকা মাসুদা পারভিন। দু’ দশকের দাম্পত্য জীবন। বছর সাতেক আগে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই তুফানগঞ্জের বাসিন্দা ওই দম্পতির জীবনে নেমে এসেছিল বিপদের ভ্রুকুটি। শারীরিক কিছু সমস্যার উপসর্গের জন্য চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানা যায়, স্বামীর শরীরে জন্মগতভাবে একটি কিডনি রয়েছে। সেটিও বিকল হওয়ার মুখে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে কারও কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও আগ্রহী ‘ডোনার’ না মেলায় দু’জনেই খানিকটা ভেঙে পড়েন। সে সময়ই নিজের মনোবলকে সম্বল করে অসুস্থ স্বামীকে নিজের একটি কিডনি দান করেন স্ত্রী মাসুদা। ভালবাসার উপহারে নতুন জীবন ফিরে পান আবদুল মান্নান।
প্রেম দিবসের বিশেষ দিনে সেখানে শিশিরভেজা লালগোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা বিনিময় নেই। দামী অলঙ্কারের আতিশয্য নেই। আছে শুধু প্রিয়জনকে নিয়ে পথচলার আনন্দ। এখনও স্মৃতির অ্যালবাম থেকে শুধু সেই লড়াইয়ের দিনগুলির ছবি খুঁজে বেড়ান ওঁরা। হয়তো বা যুদ্ধ জয়ের আনন্দে। এ বার ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মুখে তুফানগঞ্জের বাড়িতে বসে সেই লড়াইয়ের অ্যালবাম থেকে একেকটা ছবি হাতড়াতে গিয়ে চোখ ছলছল হয়ে ওঠে ওই শিক্ষক দম্পতির। তুফানগঞ্জেরই নাককাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ‘স্বামী’ আবদুল মান্নান ব্যাপারীর গলা প্রায় বুজে আসছিল। পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুল মান্নানের মত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন স্ত্রী মাসুদা পারভিনও। স্থানীয় অঙ্গদেবী গার্লস হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা মাসুদা গত পুরভোটে তৃণমূলের টিকিটে জিতে তুফানগঞ্জ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছেন। বাড়ি তুফানগঞ্জ পুরসভার ওই ওয়ার্ডের পিলখানা রোড এলাকায়। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে স্বামীকে তিনিই দিয়েছিলেন নিজের কিডনি। তিনি শুধু বলেন,“ওঁকে নিয়ে থাকতে চেয়েছি, ওপরওয়ালা সেই সুযোগটা আমায় দিয়েছেন। জীবনে এর থেকে বড় প্রাপ্তি কিছু নেই। সারাজীবন এভাবে কাটাতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy